সরকারের ধর্মীয় সেক্টরে মেধাবিকাশের সুযোগ চান কওমি আলেমরা
প্রকাশ:
১৮ আগস্ট, ২০২৪, ০৬:০২ বিকাল
নিউজ ডেস্ক |
|| হাসান আল মাহমুদ || কওমি শিক্ষা সনদ দিয়ে সরকারের ধর্মীয় সেক্টরগুলোতে মেধাবিকাশ ও কাজের সুযোগ চান কওমি আলেমরা। ইসলামিক ফাউন্ডেশন, স্কুলের ধর্মীয় শিক্ষক, বিয়ের কাজী, মডেল মসজিদসহ সরকারের যেকোনো ধর্মীয় সেক্টরে এ সনদকে কার্যকর করার দাবি করেন তাঁরা। যুগ-চাহিদার প্রেক্ষিতে সরকারের ধর্মীয় সেক্টরগুলোতে কওমি পড়ুয়াদের অংশীদার করলে রাষ্ট্রের উপকারে আসবে বলে মনে করেন তাঁরা। আরও পড়ুন : রাষ্ট্রের নানা কাজেই কওমি মাদরাসার তরুণরা ভূমিকা রাখতে পারে : ঢাবি অধ্যাপক রাজধানীর শাইখ যাকরিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ বলেন, ‘সরকারের যেকোনো ধর্মীয় সেক্টরে কওমি সনদের স্বীকৃতির কার্যকারিতা হওয়া উচিত।’ তাঁর দাবি, ‘কওমি সনদ নিয়ে একজন শিক্ষার্থী যেন দেশের যেকোনো ক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারে, সরকারের যে কোনো পরীক্ষায়, চাকরি ইত্যাদি যেকোনো ক্ষেত্রে এ সনদের মূল্যায়ন হওয়া উচিত। এ সনদ দিয়ে যেন কওমি শিক্ষার্থীরা বিদেশে উচ্চ শিক্ষা লাভে যেতে পারে, সে ধরনের মূল্যায়ন হওয়া উচিত বলে মনে করি।’ মুফতী মিজানুর রহমান সাঈদ বলেন, ‘আমরা শুনতে পাচ্ছি বা দেখতে পাচ্ছি বাস্তবে ওভাবে এর কোনো মূল্যায়ন হচ্ছে না। অথচ কাগজে কলমে পেয়ে আমরা সন্তুষ্ট হয়ে বসে আছি। আমাদের হাইআতুল উলয়ারও এ বিষয়ে কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করি। তিনি জানান, ‘বিএনপি সরকার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমান স্বীকৃতি দিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আর বিগত সরকারের আমলে কওমি সনদের স্বীকৃতি আইন গেজেট আকারে ঘোষিত হল। বিগত সরকারের আমলে চেষ্টা করেও অতটুকু কার্যকর করা যায়নি, নতুন এই অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টা যারা আছেন অথবা সামনে যারা জাতির মেন্ডেট নিয়ে আসবে, তাদের কাছে এ বিষয়কে উপস্থাপন করে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি আমার দৃষ্টিতে।‘ জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া (যাত্রাবাড়ী বড় মাদরাসা) এর সিনিয়র মুহাদ্দিস গবেষক ও শিক্ষাবিদ আলেম মাওলানা হেমায়েত উদ্দীন বলেন, মাওলানা আব্দুল জব্বার জাহানাবাদী রহ. বেফাকের মহাসচিব থাকাবস্থায় কওমি শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি নিয়ে যখন আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তখন আমরা জানতাম সনদের স্বীকৃতি শুধু সম্মানজনক স্বীকৃতির আবেদন ছিল। এটা দিয়ে আমরা সরকারি চাকরি নেওয়ার কোনো চিন্তা কেউ নেয়নি। নেওয়ার প্রয়োজন পড়েনি তখন। দেশের শিক্ষার হার গণনা করতে গিয়ে কওমি শিক্ষার্থীর বাদ দেয়া হয় ইত্যাদি অসম্মানজনক কারণে আমাদের কওমি সনদের সম্মানজনক স্বীকৃতির আন্দোলন ছিল। ‘আমাদের মূল আবেদন যেটা ছিল সেটাতো হয়ে গেছে। দেশের সাধারণ ধর্মীয় ক্ষেত্রে আমাদের সনদের যথেষ্ঠ কদর হয়। এ সনদের মূল্যায়ন একেবারেই যে নেই বিষয়টা এমন নয়। আমাদের এ শিক্ষাকেও অন্যান্য শিক্ষার সঙ্গে তুলনা করে দেশের আদমশুমারিতে শিক্ষিত হিসাবে গণ্য করা হয়।’-উল্লেখ করেন তিনি। তবে, যুগ-চাহিদার প্রেক্ষিতে সাধারণ ধর্মীয় সেক্টর বাদে ইসলামিক ফাউন্ডেশন, স্কুলের ধর্মীয় শিক্ষক, মডেল মসজিদসহ সরকারের যেকোনো ধর্মীয় সেক্টরে এ সনদটি কার্যকর করলে রাষ্ট্রের উপকারে আসবে বলে মনি করি। রাজধানীর চকবাজারে অবিস্থত জামিয়া হুসাইনিয়া আশরাফুল উলুম বড়কাটারা মাদরাসার মুহতামিম মুফতী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান কারিকুলামের অধীনে উত্তীর্ণ কওমী শিক্ষার্থীরা দেশ-বিদেশের পাবলিক ও প্রাইভেট ভার্সিটির ইসলামিক ও এরাবিক ফ্যাকাল্টিগুলোতে পড়ালেখা ও শিক্ষকতার জন্য প্রতিযোগিতা করার যোগ্যতা রাখার বিষয়টি কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। অতএব, সরকারি বেসরকারি বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তিনটি অধিদপ্তর (ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ওয়াকফ প্রশাসন ও হজ্জ ব্যবস্থাপনা), সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের মসজিদের ইমাম খতিব এবং নিকাহ রেজিস্টার অফিসসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের যোগ্যতাকে কাজে লাগানো উচিত। এজন্য বোর্ডের দায়িত্বশীল, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরসমূহ যথাযথ নীতিমালা প্রণয়ন করে উদ্যোগ গ্রহণ করা সময়ের দাবি বলে মনে করেন তিনি। এসময় মুফতী সাইফুল ইসলাম কওমির কর্ণধার মুরবিব আলেমদের কাছে দাবি পেশ করে বলেন, ‘কওমি সনদের স্বীকৃতির বাস্তবায়ন ও সিলেবাস পরিবর্তনের বিষয়টি ভালোভাবে অনুধাবন করতে দুটি লেখা বোর্ডের সদস্যবৃন্দ পড়ে নিতে পারেন। ১- দারুল উলুম দেওবন্দের অধীনে হাজার হাজার মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রক সংস্থা রাবেতা এ মাদারিসে আরাবিয়া অল ইন্ডিয়ার সেক্রেটারি জেনারেল আল্লামা শওকত আলী কাসেমী লিখিত دارالعلوم دیوبند کا نصاب تعلیم اور نظام تعلیم و تربیت প্রবন্ধটি দারুল উলুম দেওবন্দের ওয়েবসাইট পড়ে নিতে পারেন। ২- করাচি জামেয়া বিন নুরী টাউন এর মুখপাত্র আল বাইয়িনাত ম্যাগাজিনে প্রকাশিত اہل مدارس کے لیے لمحہ فکریہ নতুন এই প্রবন্ধটি পাঠ করে স্বচ্ছ ধারণা নিতে পারবেন বলে মনে হয়। হুআ/ হাআমা/ |