আল্লাহ তায়ালাই হচ্ছেন চিরসত্য
প্রকাশ: ৩০ জুন, ২০২৪, ০৭:২৩ বিকাল
নিউজ ডেস্ক

|| নাজমুল হুদা মজনু ||

কত সুন্দর মনোহর দয়ালু ও দয়াবান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। মানুষের প্রতি তাঁর ইহসান ও করুণা সীমাহীন। হাজারো অন্যায় অবিচার পাপাচার করলেও আল্লাহ জাল্লা শানুহু সাথে সাথে‌ই পাপী বান্দাকে পাকড়াও করেন না। অসীম দয়াময় আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে ফিরে আসার সুযোগ দান করেন। মহান প্রতিপালক আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজিদে তাঁর বান্দাদের প্রতি সত্যের সন্ধান করার জন্য তাগিদ দেন, কাছে ডাকেন।

কখনো কঠিন আবার কখনো কোমল কণ্ঠে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষকে বেশুমার লাভজনক‌ এক বাণিজ্যের কথা বলেন। পরিপূর্ণভাবে একমাত্র তাঁর অনুমোদিত দ্বীন-ইসলামের মধ্যে দাখিল হ‌ওয়ার আহ্বান জানান, যাতে রয়েছে প্রভূত কল্যাণ ও সফলতা।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর প্রিয় বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে কুরআনুল কারিমে দুনিয়া ও আখেরাতের সহজ-সরল প্রশস্ত পথ প্রদর্শন করেন।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআন মাজিদে তাঁর সতর্কতামূলক সুমহান বাণী খুলে খুলে বর্ণনা করেছেন— হে মানুষ, তােমরা তােমাদের মালিককে ভয়  করাে, অবশ্যই কেয়ামতের কম্পন হবে একটি ভয়ঙ্কর ঘটনা।
সেদিন তােমরা তা নিজেরা দেখতে পাবে, (দেখবে) বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে এমন প্রতিটি নারী (ভয়াবহ আতঙ্কে) তার দুগ্ধপোষ্যকে ভুলে যাবে, প্রতিটি গর্ভবতী (জন্তু) তার (গর্ভস্থিত বস্তুর) বােঝা ফেলে দেবে, যখন তুমি দেখবে তখন (তােমার) মনে হবে তারা বুঝি কিছু নেশাগ্রস্ত মাতাল; কিন্তু তারা আসলে কেউই নেশাগ্রস্ত নয়; বরং (এটা হচ্ছে এক ধরনের আজাব) আল্লাহ তায়ালার আজাব কিন্তু অত্যন্ত ভয়াবহ।

মানুষের মধ্যে কিছু (মূর্খ) লােক আছে, যারা না জেনে (না বুঝে) আল্লাহ তায়ালার (শক্তিমত্তা) সম্পর্কে তর্কবিতর্ক করে এবং (সে) প্রতিটি বিদ্রোহী শয়তানের আনুগত্য করে, অথচ তার ওপর (আল্লাহ তায়ালার এ) ফয়সালা তো হয়েই আছে যে, যে কেউই তাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে সে (নির্ঘাত) গােমরাহ হয়ে যাবে, আর (এ গােমরাহি) তাকে (জাহান্নামের) প্রজ্বলিত (আগুনের) শাস্তির দিকে নিয়ে যাবে।

হে মানুষ, পুনরুত্থান (দিবস) সম্পর্কে যদি তােমাদের মনে কোনাে সন্দেহ থাকে তাহলে (তােমরা আমার সৃষ্টি প্রক্রিয়া ভেবে দেখাে) আমি তােমাদের (প্রথমত) মাটি থেকে পয়দা করেছি, যা আকৃতিবিশিষ্ট (হয়ে সন্তানে পরিণত হয়েছে) কিংবা আকৃতি বিশিষ্ট না হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে— যেন আমি তােমাদের কাছে (আমার সৃষ্টিকৌশল) প্রকাশ করে দিতে পারি; (অতঃপর আরাে লক্ষ করাে) আমি (শুক্রবিন্দুর মাঝে) যাকে (পূর্ণ মানুষ বানাতে) চাই তাকে জরায়ুতে একটি সুনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবস্থান করাই, অতঃপর আমি তােমাদের একটি শিশু হিসেবে (সেখান থেকে) বের করে আনি, অতঃপর তােমরা তােমাদের পূর্ণ যৌবনে পদার্পণ করাে, তােমাদের মধ্যে কেউ (বয়ােপ্রাপ্তির আগেই) মরে যায়, আবার তােমাদের অকর্মণ্য (বৃদ্ধ) বয়স পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া হয়, যেন কিছু জানার পরও (তার অবস্থা এমন হয়) সে কিছুই (বুঝি এখন আর) জানে না; (সৃষ্টি প্রক্রিয়ার আরেকটি দিক হচ্ছে) তুমি দেখতে পাচ্ছো শুষ্ক ভূমি, অতঃপর আমি যখন তার ওপর (আসমান থেকে) পানি বর্ষণ করি তখন তা সরস ফলে ফুলে তাজা হয়ে ওঠে, (অতঃপর) তা সর্বপ্রকার নয়নাভিরাম উদ্ভিদ উদ্গত করে।

এগুলাে এ জন্যই (ঘটে), আল্লাহ তায়ালাই হচ্ছেন অমােঘ সত্য, তিনিই মৃতকে জীবন দান করেন এবং সবকিছুর ওপর তিনিই একক ক্ষমতাবান,
অবশ্যই কেয়ামত আসবে, তাতে বিন্দুমাত্রও সন্দেহ নেই, যারা কবরে (শুয়ে) আছে আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই তাদের পুনরুত্থিত করবেন।
(তারপরও) মানুষের মধ্যে এমন কিছু আছে যে ব্যক্তি কোনাে রকম জ্ঞান, পথনির্দেশ ও দীপ্তিমান কিতাব (প্রদত্ত তথ্য) ছাড়াই আল্লাহ তায়ালার ব্যাপারে (ধৃষ্টতাপূর্ণ) বিতণ্ডা শুরু করে,
যাতে মানুষকে সে আল্লাহর পথ থেকে গােমরাহ করে দিতে পারে; যে ব্যক্তি এমন করে তার জন্য দুনিয়াতে রয়েছে লাঞ্ছনা ও অপমান, (শুধু তাই নয়,) কেয়ামতের দিন আমি তাকে (জাহান্নামের) আগুনের কঠিন শাস্তিও আস্বাদন করাব।

(আমি তাকে বলব) এ হচ্ছে তােমার সেই কর্মফল যা তােমার হাত দুটো (আগেই এখানে) পাঠিয়ে দিয়েছে, আর আল্লাহ তায়ালা নিজ বান্দাদের প্রতি কখনাে (এত) বড় জালেম নন। (সূরা হজ-১-১০)

বিশদ বর্ণনার পর আবারো দয়াময় আল্লাহ পরম ভালোবাসায় উপরোল্লেখিত সূরার ৫০ নম্বর আয়াতে কারিমায় বলেন, যারা (আল্লাহর ওপর) ঈমান আনে এবং (সে অনুযায়ী) নেক কাজ করে, তাদের জন্য রয়েছে (আল্লাহ তায়ালার) ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা।

মনে রাখতে হবে, ইসলামে পরিপূর্ণ প্রবেশ করা ছাড়া মানুষের কাছে কোনো বিকল্প নেই। আর খাঁটি মুসলিম হ‌তে হলে কুরআন-সুন্নাহ শক্ত করে আঁকড়ে ধরতে হবে। মহীয়ান গরিয়ান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, হে ঈমানদাররা তোমরা পুরোপুরি ইসলামের (ছায়াতলে) প্রবেশ করো এবং কোনোক্রমেই (অভিশপ্ত) শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না; কেননা শয়তান হচ্ছে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (বাকারাহ-২০৮)
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআনুল কারিমে ইসলামের মূলনীতিগুলো তুলে ধরার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে উম্মতকে তা প্রতিপালনে উৎসাহিত করেছেন। সেই সাথে দ্বীনের মধ্যে অতিরঞ্জিত করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।

এ ব্যাপারে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে—
তিনি উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন যে, আমি নবী‎ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তোমরা আমার প্রশংসা করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করো না, যেমন ঈসা মারইয়াম আলাইহিস সালাম সম্পর্কে নাছারারা (খ্রিষ্টানরা) বাড়াবাড়ি করেছিল। আমি তাঁর বান্দা, তাই তোমরা বলবে, আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। (বুখারি-৩৪৪৫)

লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক

এনএ/