তাখাসসুস ফিল ইফতার ছাত্রদের জন্য কিছু পরামর্শ
প্রকাশ:
০২ মে, ২০২৪, ০৪:৫২ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
|| ওলিউল্লাহ তাহসিন || নতুন বছরের দরস ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। অনেক ফারেগীন বিভিন্ন তাখাসসুসাতে দাখেলা নিয়েছে। কেউ ইফতা, কেউ হাদীস, কেউ তাফসীর, আবার অনেকেই আদব বিভাগ নির্বাচন করেছে। সবারই লক্ষ্য নির্ধারিত বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জন করা। তালেবুল ইলম ভাইদের লক্ষ্য করে সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. বলেন, সফলতার জন্য দুটি জিনিসের প্রয়োজন। এ দুটি জিনিস অর্জন করতে পারলে একজন সফল আলেম হতে পারবে ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে ইনশাআল্লাহ। বর্তমান সময়ে সব ফনের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ফিকাহ ফতোয়া তথা আততাখাসসুস ফিল ফিকহি ওয়াল ইফতা। বছরের শুরু থেকে একজন ইফতা বা ফতোয়া বিভাগের তালেবুল ইলমের জন্য সময়গুলো অনেক মূল্যবান। তাই আসাতেজায় কেরাম থেকে প্রাপ্ত ও বিভিন্ন মুফতিয়ানে কেরামের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী ইফতা বিভাগের ছাত্রদের জন্য কিছু দিক নির্দেশনা নিম্নে তুলে ধরছি। ইফতা বিভাগে মৌলিক কাজ তিনটি। তামরীনুল ফতোয়া : সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল, তামরীনুল ফতোয়া। তবে এর আগে অবশ্যই উসুলে ইফতা, ফতোয়ার আদাবসমূহ অবশ্যই জেনে নিতে হবে। তাছাড়া বিভিন্ন কিতাব পরিচিতি, কুরআন, হাদীস ও কুতুবে ফিকহ থেকে দলিল বের করার পদ্ধতি জানা ও তা খাতায় লেখা, প্রতিটি তামরীনের জন্য একাধিক কিতাবের ইবারত নকল করা, সব দলিল আরবি কিতাব থেকে লেখার চেষ্টা করা, কখনো কখনো মুশরীফের পরামর্শে উর্দু কিতাবের সহযোগিতা নেওয়া (উর্দু কিতাবের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য ইমদাদুল ফতোয়া, ইমদাদুল আহকাম, ফতোয়া রশীদিয়া ও ফতোয়ায় দারুল উলুম দেওবন্দ), উত্তর লেখার নিয়ম জেনে নেওয়া, ফাইনাল উত্তর লেখার আগে খসড়া করে জিম্মাদার উস্তাদকে দেখিয়ে ঠিক করা ইত্যাদি কাজসমূহ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মুতালায়া : তামরীনের পর গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল প্রচুর পরিমাণে কিতাব মুতালায়া করা। অনেক তালেবুল ইলম বছরের শুরুতে মুতালায়ায় সময় দিলেও আস্তে আস্তে তামরীনেই সবটুকু সময় দেয়। অথচ ভালো মানের তামরীনের জন্য মুতালায়ার বিকল্প নেই। এজন্য সারা বছর নির্ধারিত কিতাবসমূহ অবশ্যই মুতালায়া করতে থাকা। মুতালায়ার পরিমাণ প্রতিদিন মুশরীফকে দেখানো। মুতালায়ার সময় গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা একটি খাতায় নোট করা। আকাবিরদের রিসালা, আধুনিক বিষয়ে লিখিত কিতাবসমূহ ও নির্ভরযোগ্য দারুল ইফতার জমাকৃত ফতোয়ার কিতাব অবশ্যই মুতালায়ায় রাখা। দরস : অনেক তালেবুল ইলম দরসের কিতাবকে কম গুরুত্ব দিয়ে থাকে। অথচ দরসে ঐ সমস্ত কিতাব উস্তাদগণ পাঠদান করেন, যা ছাত্রদের জন্য নিজে মুতালায়া করে বোঝা কঠিন। তাছাড়া দরসের মাধ্যমে শুধু সবক হল করা যথেষ্ট নয়। বরং প্রতিটি দরসের আমলি মশক করা আবশ্যক। যেমন, উসুলে ইফতার আমলি মশক, কাওয়াদের তাফরিয়াত ও তাতবিকাত অন্যান্য কিতাব থেকে বের করা। মিরাছ ও তাখরিজুল আওকাতের অনুশীলন করা ইত্যাদি। উল্লিখিত বিষয়গুলো ছাড়া নিজ মুশরীফের দিকনির্দেশনায় মেহনত করলে ইফতা ও ফতোয়ার সাথে মুমারাসাত তৈরি হবে ইনশাআল্লাহ। সবশেষে ছাত্রদের জেনে রাখা আবশ্যক, ফতোয়া দেওয়ার যোগ্যতা শুধু এক বা দু বছরের কোর্স করে অর্জন করা যায়না। মুফতী তাকী উসমানী হাফিজাহুল্লাহ বলেন, ফতোয়া দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন হয় একজন মাহের মুফতীর সোহবতে দীর্ঘ সময় লেগে থেকে তার ফতোয়া দেওয়ার মেজাজ বোঝা। যখন তিনি অনুমতি দেবেন তখন ফতোয়া দেওয়া জায়েজ হবে। এছাড়া শুধু কিতাবের ইবারত হল করে, কাওয়ায়েদ মুখস্থ করে, সনদ অর্জন করে ফতোয়া দেওয়ার অনুমতি নেই। হজরত আশরাফ আলী থানবী রহ বলেন, আমার কাছে সব থেকে স্পর্শকাতর ও নাজুক মনে হয় কাউকে ফতোয়া দেওয়া। আমি যখন কাউকে মাসআলা বলি তখন আমি ভয়ে কাঁপতে থাকি। এর চেয়ে অন্য কোন কাজ আমার কাছে কঠিন মনে হয় না। অথচ আজকাল লোকেরা এটাকে হালকা মনে করে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের সঠিকভাবে ইলম অর্জন করার তাওফীক দান করুন। তথ্য সূত্র: লেখক হাআমা/ |