আলো ছড়াতে চাইলে নিজে আলোকিত হতে হবে
প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ০৩:৫৩ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

|| মাওলানা আহমাদ হুসাইন, পাকিস্তান ||

তোলাবাদের উদ্দেশে খাস বয়ান
একজন মানুষ আল্লাহর হুকুমের পথে চলতে পারা ও তার নিষিদ্ধ জিনিস থেকে বাঁচতে পারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি সহিহ ইলম দ্বারা আসে। সহিহ ইলম আল্লাহর আনুগত্যের পথে চলতে শেখায়। আল্লাহর নিষেধ করা বস্তু থেকে বাঁচতে শেখায়। এজন্য যখন সহিহ ইলম আসে, তখন তিনটি জিনিস অর্জিত হয়ে যায়। এক. আল্লাহর ভয়; দুই. আল্লাহর পথে চলার সহযোগিতা; তিন. আল্লাহর নিষিদ্ধ বস্তু থেকে বাঁচতে পারা। এজন্য আল্লাহ কুরআনে বলেন, ‘আল্লাহকে ভয় করেন একমাত্র ইলমওয়ালারা।’

মেরে আজিজ তলাবা!
ইলমের তাকাজা হলো তিনটি। এক. ভালো নিয়ত করে শিখবো; দুই. ভালো মানুষ হওয়া; তিন. যা শিখবো অন্যদের শেখাবো। আমরা ইলম শিখবো কেন? বরকতের জন্য? ফজিলতের জন্য? না। আমরা ইলম শিখবো দায়িত্বের জন্য। নিজে যে ইলম শিখবো তা অন্যের কাছে পৌঁছিয়ে দেব। আল্লাহর পক্ষ থেকে নবীজির কাছে যা এসেছে তা তিনি সবার কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘হে রাসুল! আপনার কাছে আপনার রবের পক্ষ থেকে যা নাজিল করা হয়েছে তা পৌঁছিয়ে দিন।’ 
আমরা কিতাব থেকে পড়েছি কিতাবুল বুয়ু, কিতাবুশ শুফআ, কিতাবুত তিজারাহ। আরও কত অধ্যায় শিখেছি। এগুলো কেন শিখেছি? আমরা এগুলো ভালো করে বুঝবো, শিখবো আর অন্যদের শেখানোর জন্য বের হয়ে পড়বো আল্লাহর রাস্তায়।

মেরে আজিজ তলাবা! 
আমরা জানি, আলো ছাড়া দশটি সূর্য থাকলেও কোনো লাভ নেই। কিন্তু আলো সম্পন্ন একটি সূর্যই পৃথিবী আলোকিত করার জন্য যথেষ্ট। আমাদের সূর্যের মতো আলোকিত হতে হবে। যেখানে যাবো আলো ছড়াবো। এজন্য, আগে আমাদের জীবনকে আলোকিত বানাতে হবে। এক শাহজালাল ইয়ামানী সুদূর ইয়ামান থেকে এসেছেন; তাঁর জীবনে আলো ছিল তাই অনেককে আলোকিত করতে পেরেছেন। এক কাসেম নানুতুবী; তাঁর জীবনে আলো ছিল তাই জাতিকে আলোকিত করতে পেরেছেন। এক আশরাফ আলী থানভী; তাঁর জীবনে আলো ছিল, তাই আলোকিত করতে পেরেছেন অন্যদের। যদি আমরা নিজেদের আলোকিত করতে না পারি, তাহলে গ্রামে-গঞ্জে, শহরে যেখানেই যাবো, অন্যদের আলোকিত করতে পারবো না।  

মেরে ভাই!
নিজের মধ্যে ইলমের তলব পয়দা করতে হবে। শওক-আগ্রহ ইলম অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিতাবের প্রতি শওক রাখবো। প্রতিটি অধ্যায় ভালো করে বুঝবো, শিখবো। শেখার সাথে সাথে আগ্রহ রাখবোÑ উম্মত নিয়ে। উম্মতের ফিকিরে ফিকিরমান্দ হবো। উম্মতের সংকটগুলো নোট করে রাখবো। সে অনুযায়ী নিজেদের প্রস্তুত রাখবো। উম্মতের হেদায়েতে নিজেদের নিবেদিত করবো। এজন, ইলম শেখার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর রাস্তায়ও মাঝে মাঝে সময় লাগাবো। আল্লাহর রাস্তায় সময় লাগালে আকল পরিমাপ করা শেখা যাবে। রিকশাওয়ালার সাথে, কুলির সাথে, চাকরিজীবীর সাথে, অফিসের বসের সাথে, সাধারণ মানুষের সাথে চলাফেরা, ওঠাবসা করার দ্বারা তাদের সংকটগুলো বোঝা যাবে। ইসলামের আলোয় সেসব সমাধানের মাখজ-উৎস ধরা পড়বে।

মেরে আজিজি! 
আল্লাহর রাস্তায় বের হলে দুটি জিনিস লাভ হবে। এক. অভিজ্ঞতা। অভিজ্ঞতা যার হয় সে কখনো ধোঁকা খায় না। অভিজ্ঞতা অর্জন হলে জিন্দেগি চলতে বহুত ফায়দা দেয়। দুই. আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়ার দ্বারা ঈমান মজবুত হয়। আল্লাহর রাস্তায় বের হলে নিজের চলাফেরা, কথাবার্তায় পরিবর্তন আসে। আল্লাহর রাস্তায় বের মানুষ যে জিনিসের কথা আজমত ও বড়ত্বের সাথে বর্ণনা করে তখন তা অন্তরে বসে যায়। আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে আল্লাহর বড়ত্ব ও আজমতের কথা যখন বলবে তখন তা নিজের অন্তরে ও অপরের অন্তরেও প্রবেশ করবে। এজন্য, যখন আমাদের ইলমি পড়ালেখা শেষ হবে, তখন এক বছর আল্লাহর রাস্তায় লাগিয়ে খেদমতে প্রবেশ করব। সামনে রমজানের ছুটি আসছে, এ ছুটি উপলক্ষে চিল্লা লাগানোর সুযোগ রয়েছে।

মেরে আজিজ তলাবা!
ইলমের গুরুত্বপূর্ণ তাকাজা হলো অন্যদের কাছে পৌঁছানো। আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম বলেছেন, ‘আমার পক্ষ থেকে একটি বাণী হলেও পৌঁছিয়ে দাও’। সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম নবীজির কাছ থেকে ইলম শিখেছেন এবং অন্যদের শিখিয়েছেন। মানুষকে আল্লাহর পথে দাওয়াত করেছেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে ইলমের জন্য কবুল করুন। ইলম শিখে সে অনুযায়ী আমল করা ও সে ইলম অন্যদের কাছে পৌঁছানোর তাওফিক দিন। আমিন।

অনুলিখন ও অনুবাদ: হাসান আল মাহমুদ

কেএল/