ফিলিস্তিন ইস্যুতে জ্বালাময়ী বক্তব্যে যা বললেন মুফতি তাকি উসমানি
প্রকাশ:
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৩, ০১:৫২ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
|| হাবিব মুহাম্মাদ || ‘আজ হামাসের মাধ্যমে আমরা এমন এক যুগসন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছি, যেখানে সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে পুরো মুসলিম জাতি দাসত্বের শেকল ভেঙ্গে তার হারানো গৌরব ও নেতৃত্ব ফিরে পাবে! আর সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করলে শত বছর এর মাশুল দিতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, পুরো মুসলিম জাতি একসাথে ফিলিস্তিনের পক্ষে লড়াই করলে ইসরাইল, আমরিকা ব্রিটেন কিছুই করতে পারবে না।’ বুধবার (৬ ডিসেম্বর) পাকিস্তানের ইসলামাবাদে মজলিসে ইত্তেহাদে উম্মাত পাকিস্তান কর্তৃক 'মসজিদুল আকসা রক্ষা এবং মুসলিম উম্মাহর করণীয়' শীর্ষক আন্তর্জাতিক একটি কনফারেন্সে মুফতি তাকি উসমানি এসব বক্তব্য প্রদান করেন। রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক, সুন্নী, বেদাতি, আহলে হক, আহলে হাদীস, জামাতে ইসলামি, আহলে সুন্নাত দেওবন্দী সহ সকল ঘরানার ব্যক্তিবর্গ তাতে অংশগ্রহণ করেন৷ মুফতি তাকি উসমানি ছিলেন উক্ত কনফারেন্সের বিশেষ অতিথি। তার পুরো বক্তব্যজুড়ে ছিল ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান এবং মুসলিম জাতির করণীয় বিষয়ে দিক নির্দেশনা। উপস্থিত শ্রোতাকে তার সকল বক্তব্যের সাথে একাত্মতা পোষণ করতে দেখা যায়। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুফতি তাকি উসমানি বলেন, সারা দুনিয়াব্যাপী এমনকি মুসলিম দেশগুলোর মুখপাত্র ওআইসি পর্যন্ত ফিলিস্তিনে যুদ্ধ বন্ধ করার দাবি উত্থাপন করেছে। কিন্তু এই যুদ্ধ বন্ধ করার মত যুদ্ধ নয় বরং এই যুদ্ধ ইসরাইলের শক্তি, দম্ভ ও অহমিকা নিশ্চিহ্ন করা পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে। ততক্ষণ পর্যন্ত হামাস ও তাদের যুদ্ধারা দৃঢ়ভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। আমাদের প্রত্যেকের দাবি হওয়া উচিত ইসরাইল যেন শিশু ও সাধারণ নাগরিক হত্যা, বোমা নিক্ষেপ সহ সকল মানবতা ও যুদ্ধনীতি বিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ করে। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের কর্তৃত্বকে প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, অনেকে এই বিশ্বাস লালন করেন যে, ফিলিস্তিনের পূর্ব-পশ্চিম তীর এবং গাজা এলাকা ফিলিস্তিনের অধীনে থাকবে এবং বাকি অঞ্চলগুলো ইসরায়েলের অধীনে থাকবে। আমি তা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। কেননা শুরু থেকেই ইসরাইল একটি অবৈধ রাষ্ট্র। প্রতিষ্ঠার প্রথম দিন থেকেই আমরা তাকে অস্বীকার করে আসছি। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এটা লালন করে যে ইসরাইল পশ্চিমাদের তৈরি একটি অবৈধ রাষ্ট্র । পাকিস্তান এখনও সেই নীতির উপর অটল রয়েছে। মুসলিমদের ব্যাপারে পশ্চিমাদের দ্বীমুখী ও বৈষম্যমূলক নীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, যখনই কোনো মুসলিম ভূখণ্ডে শত্রুরা আগ্রাসন চালায় আর মুসলিমরা তা প্রতিহত করতে শুরু করে তখনই পশ্চিমারা তাদেরকে জঙ্গি এবং সন্ত্রাসী আখ্যা দেয়। যেমনটি কাশ্মীরের মুজাহিদ ও আফগানিস্তানের তালেবানদের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে। এখন হামাসের ক্ষেত্রেও তারা একই নীতি অবলম্বন করছে। জেনে রাখা উচিত, হামাস সৈনিকরা সাধারণ কোনো যুদ্ধা নয় বরং তারা আল্লাহর রাস্তার প্রকৃত মুজাহিদ। তাদের অধিকাংশই কুরআনের হাফেজ, শরীয়তের পূর্ণ অনুসারী। তারা বিচ্ছিন্ন কোনো গোষ্ঠী নয় বরং তারা পুরো ফিলিস্তিনবাসীর নেতৃত্বদানকারী। তার বক্তব্য প্রদানকালে উপস্থিত শ্রোতাদেরকে তাকবির ধ্বনি এবং সাবিলুনা, সাবিলুনা আল জিহাদ, আল জিহাদ স্লোগান দিতে দেখা যায়। এমুহুর্তে মুসলিমদের করণীয় বিষয়ে তিনি বলেন, শরীয়তের বিধান হলো, যদি কোনো মুসলিম ভূখণ্ডে শত্রুরা আক্রমণ করে তাহলে ওই ভূখণ্ডের সকল বাসিন্দাদের ওপর জিহাদ ফরজ হয়ে যায়। সর্বপ্রথম তাদের ওপর। তারপর পর্যায়ক্রমে পুরো মুসলিম জাতির ওপর তা ফরজ। সুতরাং এমুহূর্তে সকল মুসলিমের ওপর যার যার সাধ্যানুযায়ী ফিলিস্তিনে সহযোগিতা পৌঁছানো আবশ্যক। বিশ্বব্যাপী মুসলিম শাসকদের পশ্চিমাদের দাসত্বের প্রতি আক্ষেপ করে তিনি সবাইকে উদাত্ত আহ্বান করে বলেন, তেল, গ্যাস, সমুদ্রসহ প্রাকৃতিক সকল নেয়ামত আল্লাহ মুসলিমদের দান করেছেন যা অন্য কোনো জাতিকে দান করেন নি। তাহলে আমরা কেন তাদের দাসত্ব করছি? এখনই সময় এসেছে পুরো মুসলিম বিশ্বকে এক হয়ে পশ্চিমাদের দাসত্ব থেকে বের হয়ে আসার। আমরিকা আমাদের প্রভু নয় বরং আল্লাহ আমাদের প্রভু। আমেরিকা সকল ক্ষমতার মালিক নয় বরং আল্লাহ সর্বসময় ক্ষমতার মালিক। বক্তব্য শেষে তিনি সকল শ্রোতাদের থেকে ফিলিস্তিনের পক্ষে লড়াই করার এবং পশ্চিমা সহ ইসলাম ও মুসলিম জাতি বিরোধী সকল শক্তির দাসত্ব না করার প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেন। এমএইচ/ |