পাট উৎপাদন, প্রসঙ্গ কথা
প্রকাশ:
২৯ নভেম্বর, ২০২৩, ০৯:১৩ সকাল
নিউজ ডেস্ক |
বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ পাট উৎপাদনকারী দেশ। পাট ও পাটজাত পণ্যের বৈশ্বিক রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ তথা প্রায় ৭২ শতাংশ বাংলাদেশের দখলে। ‘সোনালি আঁশ’-এর দেশ বাংলাদেশ পাট উৎপাদনে সমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও এ দেশের পাটবীজের আমদানি-নির্ভরতা কাটছে না। ২০২২-২৩ উৎপাদন বছরে ৫ হাজার টন পাটবীজ আমদানির অনুমতির বিপরীতে প্রকৃতপক্ষে আমদানি হয়েছিল ৪ হাজার ১৬৬ টন। আমদানি কম হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ কম জমিতে পাট চাষ হয়েছে ঐ উৎপাদন বছরে। ২০২৩-২৪ উৎপাদন বছরে দেশে প্রায় ৭ লাখ ৬৪ হাজার হেক্টর জমিতে পাট, মেস্তা ও কেনাফ চাষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বীজের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ৩৬৯ টন। ইতিমধ্যে তোষা পাটের বীজ ৪ হাজার ৬০০ টন এবং মেস্তা ও কেনাফের বীজ ৫৭৬ টন আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। পাটবীজের চাহিদার অবশিষ্ট ১ হাজার ১৯৩ টন অর্থাত্ ১৯ শতাংশ সরবরাহ করবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নানা উৎস। প্রকৃতপক্ষে, পাটবীজ উৎপাদনের মৌলিক ধাপ তিনটি। এগুলো হচ্ছে—প্রজনন বীজ, ভিত্তি বীজ ও প্রত্যয়িত বীজ। প্রজননবিদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে উৎপাদিত শতভাগ কৌলিতাত্ত্বিক দিক থেকে বিশুদ্ধ বীজ প্রজনন বীজ নামে পরিচিত। প্রজনন বীজকে বর্ধিত করে যে বীজ পাওয়া যায়, তাকে বলা হয় ভিত্তি বীজ। সরাসরি বা গবেষণা খামারে গবেষক এবং বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে ভিত্তিবীজ উৎপাদন করা হয়। ভিত্তিবীজ বর্ধিত করে যে বীজ পাওয়া যায়, তাকে বলা হয় প্রত্যয়িত বীজ। এই বীজই কৃষকদের মধ্যে চাষের জন্য বিতরণ করা হয়। বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি এই বীজের সনদ প্রদান করে। দেশে ২০১৭-১৮ উৎপাদন বছরে ৭ দশমিক ৫৮ লাখ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে, যা গত কয়েক বছরের তুলনায় সর্বোচ্চ। তাই ২০১৭-১৮ সালের জমির পরিমাণকে ভিত্তি ধরে এখন পাটবীজের চাহিদা হিসাব করা হয়। বর্তমানে প্রতি হেক্টরে পাট চাষ করতে ৬ দশমিক ৫ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। এই বিপুল পরিমাণ উন্নত পাটবীজ উৎপাদনে বাংলাদেশকে স্বনির্ভর করতে বর্তমান সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করার জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে এবং ২০২১ সালে এর বাস্তবায়ন শুরু করেছে। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) এ রোডম্যাপ বাস্তবায়নে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে।
দ্বিতীয় বছর ৪০ মেট্রিক টন ভিত্তি বীজ উৎপাদন করা হবে, যা দিয়ে ১ হাজার ৪৬৪ মেট্রিক টন প্রত্যয়িত বীজ উৎপাদন করা হবে। দ্বিতীয় বছরেও প্রয়োজনীয় প্রজনন বীজ বিজেআরআই সরবরাহ করবে। পাশাপাশি পাট উৎপাদনপ্রবণ এলাকায় ৩ হাজারটি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হবে এবং উৎপাদিত বীজ বিনা মূল্যে পাটচাষিদের বিতরণ করা হবে।
চতুর্থ বছর একইভাবে বিজেআরআইয়ের সরবরাহকৃত প্রজনন বীজের মাধ্যমে ৫৯ মেট্রিক টন ভিত্তিবীজ উৎপাদন করা হবে, যা দিয়ে দেশের মোট চাহিদার শতভাগ প্রত্যয়িত বীজ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এই বীজ ভর্তুকি মূল্যে প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে পাটচাষিদের কাছে বিক্রি করা হবে। এ বছরেও ৩ হাজারটি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হবে। রোডম্যাপ অনুযায়ী সর্বশেষ পঞ্চম বছরে ৫৯ মেট্রিক টন ভিত্তিবীজ উৎপাদনের মধ্য দিয়ে শতভাগ প্রত্যয়িত বীজ উৎপাদনে দেশের সক্ষমতা নিশ্চিত করা হবে। এ পাটবীজও ভর্তুকি মূল্যে ১০০ টাকা কেজি দরে পাটচাষিদের কাছে বিক্রি করা হবে। কৃষকের দীর্ঘদিনের চাষাবাদের অভ্যাসের কারণে বর্তমানে বাইরে থেকে যে পাটবীজ আমদানি করা হয়, তার বেশির ভাগই তোষা পাট জেআরও-৫২৪ জাতের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী ও সময়োপযোগী উদ্যোগে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট ইতিমধ্যে পাটের জীবন রহস্য উন্মোচন করেছে। সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজেআরআইয়ের বিজ্ঞানীরা ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তোষা-৮ (রবি-১) নামে পাটের একটি নতুন জাত অবমুক্ত করেছে। এর ফলন জেআরও-৫২৪ জাতের পাটের চেয়ে ১০-১৫ ভাগ বেশি। আগে কৃষকরা পাটখেতের কিছু অংশের পাটবীজ উৎপাদনের জন্য রেখে দিতেন। এই পদ্ধতিতে বীজ সংগ্রহে সময় লাগত ১০-১১ মাস। এ সমস্যা সমাধানে বিজেআরআই নাবি পাটবীজ উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর, এই চার মাসে উন্নতমানের বীজ উৎপাদন করা সম্ভব। এ প্রযুক্তিতে তিন পদ্ধতিতে পাটবীজ উৎপাদন করা হয়। এগুলো হলো ১. সরাসরি বীজ বপণ পদ্ধতি, ২. কাণ্ড ও ডগা রোপণ পদ্ধতি এবং ৩. চারা রোপণ পদ্ধতি। সরাসরি বীজ বপন পদ্ধতিতে দেশি পাটের বীজ মধ্য জুলাই থেকে মধ্য আগস্ট এবং তোষা পাটের বীজ মধ্য জুলাই থেকে ৩০ আগস্টের মধ্যে বপন করতে হবে। জমিতে সারি করে বপন করলে প্রতি ১ শতাংশ জমিতে ১৬-১৭ গ্রাম তোষা এবং ২০ গ্রাম দেশি বীজ বপন করতে হয়। ছিটিয়ে বপন করলে প্রতি ১ শতাংশে ২০ গ্রাম তোষা এবং ২৪ গ্রাম দেশি পাটের বীজ বপন করতে হয়। কৃষকের হাতে বপনের জন্য কোনো বীজ না থাকলে ঐ বছর কাণ্ড ও ডগা রোপণ পদ্ধতিতে বীজ উৎপাদন করা হয়। আঁশ ফসলের জমি থেকে গাছের বয়স ১০০ দিনের মতো হলে সুস্থ-সবল গাছ বাছাই করতে হবে। বাছাইকৃত গাছের কাণ্ড ও ডগাগুলো ধারালো চাকু বা ব্লেডের সাহায্যে কাটতে হবে। কাটার সময় লক্ষ রাখতে হবে প্রতিটি টুকরার দৈর্ঘ্য যেন ২০-২৫ সেমি হয় এবং প্রতি টুকরায় কমপক্ষে দুই-তিনটি গিট থাকে। টুকরাগুলো গোড়ার দিকে বাঁকা করে কাটতে হবে। টুকরার বাঁকা অংশ ডগা সংগ্রহ করার দিনই রোপণ করা উত্তম। এছাড়াও পড়ন্ত রোদে ডগা রোপণ করলে ভালো হয়। সারি থেকে সারি দেড় ফুট দূরত্ব রেখে এবং উত্তর দিকে ৪৫ ডিগ্রি কোণ করে টুকরোগুলো রোপণ করতে হবে। এছাড়াও চারা রোপণ পদ্ধতিতে প্রথমে বীজতলায় বীজ বপন করে সেখান থেকে চারা উত্পন্ন করা হয়। ৩ মি. দৈর্ঘ্য ও ১ মি. প্রস্থ আকারের বীজতলায় মধ্য জুন-মধ্য জুলাই মাসের মধ্যে ৫০-১০০ গ্রাম বীজ বপন করতে হয়। বীজতলার চারার বয়স ২৫-৪০ দিন হলে চারাগুলো রোপণের জন্য উপযুক্ত হয়। মূল জমিতে বপনের দিন বীজতলা থেকে চারা তুলে নিয়ে প্রথমে ছায়ায় রাখতে হবে। প্রতিটি চারার ডগার দুই-তিনটি কচিপাতা রেখে অন্য সব পাতার বোঁটা বাদে বাকি অংশ কাঁচি দিয়ে কেটে দিতে হবে। মূল জমিতে অবশ্যই সারি করে চারা রোপণ করতে হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৪০ সেমি এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব হবে ১৫ সেমি। মেঘলা দিনে অথবা সন্ধ্যার আগে যখন রোদ থাকে না, তখন চারা রোপণ করা ভালো। বিজেআরআই উদ্ভাবিত ও উন্নতকৃত অন্যান্য প্রযুক্তির সাথি ফসল বা রিলে ক্রপিং পদ্ধতিতে পাটবীজ উৎপাদন, সরাসরি বীজ বপন পদ্ধতিতে পাটবীজ উৎপাদন, কাণ্ড ও ডগা রোপণ পদ্ধতিতে পাটবীজ উৎপাদন, পাটবীজের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে সবজি উৎপাদন, পাটবীজ ফসলের সঙ্গে শাকসবজি চাষ পদ্ধতি ইত্যাদি বাংলাদেশের পাটবীজের চাহিদা পূরণ করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। নাবি পাটবীজ উৎপাদন প্রযুক্তিসহ অন্যান্য প্রযুক্তি সঠিকভাবে সম্প্রসারণ করা গেলে কৃষক নিজেই তার প্রয়োজনীয় পাটবীজ উৎপাদন করতে পারবে। সর্বোপরি, সরকারের নানা পরিকল্পনায় ও উদ্যোগে উন্নত পাটবীজ উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আধুনিক গবেষণাগারসহ এক বা একাধিক বৃহত্ খামার স্থাপন করলে পাটবীজ উৎপাদনে বাংলাদেশ দ্রুত স্বয়ংসম্পূর্ণতার পথে এগিয়ে যাবে। একই সঙ্গে পাটবীজ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন নতুন জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে কৃষিবিজ্ঞানীদের চলমান কর্মকাণ্ডও ত্বরান্বিত হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ পাট উৎপাদনকারী দেশ। পাট ও পাটজাত পণ্যের বৈশ্বিক রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ তথা প্রায় ৭২ শতাংশ বাংলাদেশের দখলে। ‘সোনালি আঁশ’-এর দেশ বাংলাদেশ পাট উৎপাদনে সমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও এ দেশের পাটবীজের আমদানি-নির্ভরতা কাটছে না। ২০২২-২৩ উৎপাদন বছরে ৫ হাজার টন পাটবীজ আমদানির অনুমতির বিপরীতে প্রকৃতপক্ষে আমদানি হয়েছিল ৪ হাজার ১৬৬ টন। আমদানি কম হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ কম জমিতে পাট চাষ হয়েছে ঐ উৎপাদন বছরে। ২০২৩-২৪ উৎপাদন বছরে দেশে প্রায় ৭ লাখ ৬৪ হাজার হেক্টর জমিতে পাট, মেস্তা ও কেনাফ চাষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বীজের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ৩৬৯ টন। ইতিমধ্যে তোষা পাটের বীজ ৪ হাজার ৬০০ টন এবং মেস্তা ও কেনাফের বীজ ৫৭৬ টন আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। পাটবীজের চাহিদার অবশিষ্ট ১ হাজার ১৯৩ টন অর্থাত্ ১৯ শতাংশ সরবরাহ করবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নানা উত্স। বর্তমান সরকারের দৃঢ় ও নানা কার্যকরী পদক্ষেপের ফলে দেশের অভ্যন্তরে এখন পাটবীজের উৎপাদন বাড়ছে। প্রকৃতপক্ষে, পাটবীজ উৎপাদনের মৌলিক ধাপ তিনটি। এগুলো হচ্ছে—প্রজনন বীজ, ভিত্তি বীজ ও প্রত্যয়িত বীজ। প্রজননবিদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে উৎপাদিত শতভাগ কৌলিতাত্ত্বিক দিক থেকে বিশুদ্ধ বীজ প্রজনন বীজ নামে পরিচিত। প্রজনন বীজকে বর্ধিত করে যে বীজ পাওয়া যায়, তাকে বলা হয় ভিত্তি বীজ। সরাসরি বা গবেষণা খামারে গবেষক এবং বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে ভিত্তিবীজ উৎপাদন করা হয়। ভিত্তিবীজ বর্ধিত করে যে বীজ পাওয়া যায়, তাকে বলা হয় প্রত্যয়িত বীজ। এই বীজই কৃষকদের মধ্যে চাষের জন্য বিতরণ করা হয়। বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি এই বীজের সনদ প্রদান করে। দেশে ২০১৭-১৮ উৎপাদন বছরে ৭ দশমিক ৫৮ লাখ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে, যা গত কয়েক বছরের তুলনায় সর্বোচ্চ। তাই ২০১৭-১৮ সালের জমির পরিমাণকে ভিত্তি ধরে এখন পাটবীজের চাহিদা হিসাব করা হয়। বর্তমানে প্রতি হেক্টরে পাট চাষ করতে ৬ দশমিক ৫ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। এই বিপুল পরিমাণ উন্নত পাটবীজ উৎপাদনে বাংলাদেশকে স্বনির্ভর করতে বর্তমান সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করার জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে এবং ২০২১ সালে এর বাস্তবায়ন শুরু করেছে। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) এ রোডম্যাপ বাস্তবায়নে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে।
দ্বিতীয় বছর ৪০ মেট্রিক টন ভিত্তি বীজ উৎপাদন করা হবে, যা দিয়ে ১ হাজার ৪৬৪ মেট্রিক টন প্রত্যয়িত বীজ উৎপাদন করা হবে। দ্বিতীয় বছরেও প্রয়োজনীয় প্রজনন বীজ বিজেআরআই সরবরাহ করবে। পাশাপাশি পাট উৎপাদনপ্রবণ এলাকায় ৩ হাজারটি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হবে এবং উৎপাদিত বীজ বিনা মূল্যে পাটচাষিদের বিতরণ করা হবে।
চতুর্থ বছর একইভাবে বিজেআরআইয়ের সরবরাহকৃত প্রজনন বীজের মাধ্যমে ৫৯ মেট্রিক টন ভিত্তিবীজ উৎপাদন করা হবে, যা দিয়ে দেশের মোট চাহিদার শতভাগ প্রত্যয়িত বীজ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এই বীজ ভর্তুকি মূল্যে প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে পাটচাষিদের কাছে বিক্রি করা হবে। এ বছরেও ৩ হাজারটি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হবে। রোডম্যাপ অনুযায়ী সর্বশেষ পঞ্চম বছরে ৫৯ মেট্রিক টন ভিত্তিবীজ উৎপাদনের মধ্য দিয়ে শতভাগ প্রত্যয়িত বীজ উৎপাদনে দেশের সক্ষমতা নিশ্চিত করা হবে। এ পাটবীজও ভর্তুকি মূল্যে ১০০ টাকা কেজি দরে পাটচাষিদের কাছে বিক্রি করা হবে। কৃষকের দীর্ঘদিনের চাষাবাদের অভ্যাসের কারণে বর্তমানে বাইরে থেকে যে পাটবীজ আমদানি করা হয়, তার বেশির ভাগই তোষা পাট জেআরও-৫২৪ জাতের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী ও সময়োপযোগী উদ্যোগে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট ইতিমধ্যে পাটের জীবন রহস্য উন্মোচন করেছে। সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজেআরআইয়ের বিজ্ঞানীরা ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তোষা-৮ (রবি-১) নামে পাটের একটি নতুন জাত অবমুক্ত করেছে। এর ফলন জেআরও-৫২৪ জাতের পাটের চেয়ে ১০-১৫ ভাগ বেশি। আগে কৃষকরা পাটখেতের কিছু অংশের পাটবীজ উৎপাদনের জন্য রেখে দিতেন। এই পদ্ধতিতে বীজ সংগ্রহে সময় লাগত ১০-১১ মাস। এ সমস্যা সমাধানে বিজেআরআই নাবি পাটবীজ উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর, এই চার মাসে উন্নতমানের বীজ উৎপাদন করা সম্ভব। এ প্রযুক্তিতে তিন পদ্ধতিতে পাটবীজ উৎপাদন করা হয়। এগুলো হলো ১. সরাসরি বীজ বপণ পদ্ধতি, ২. কাণ্ড ও ডগা রোপণ পদ্ধতি এবং ৩. চারা রোপণ পদ্ধতি। সরাসরি বীজ বপন পদ্ধতিতে দেশি পাটের বীজ মধ্য জুলাই থেকে মধ্য আগস্ট এবং তোষা পাটের বীজ মধ্য জুলাই থেকে ৩০ আগস্টের মধ্যে বপন করতে হবে। জমিতে সারি করে বপন করলে প্রতি ১ শতাংশ জমিতে ১৬-১৭ গ্রাম তোষা এবং ২০ গ্রাম দেশি বীজ বপন করতে হয়। ছিটিয়ে বপন করলে প্রতি ১ শতাংশে ২০ গ্রাম তোষা এবং ২৪ গ্রাম দেশি পাটের বীজ বপন করতে হয়। কৃষকের হাতে বপনের জন্য কোনো বীজ না থাকলে ঐ বছর কাণ্ড ও ডগা রোপণ পদ্ধতিতে বীজ উৎপাদন করা হয়। আঁশ ফসলের জমি থেকে গাছের বয়স ১০০ দিনের মতো হলে সুস্থ-সবল গাছ বাছাই করতে হবে। বাছাইকৃত গাছের কাণ্ড ও ডগাগুলো ধারালো চাকু বা ব্লেডের সাহায্যে কাটতে হবে। কাটার সময় লক্ষ রাখতে হবে প্রতিটি টুকরার দৈর্ঘ্য যেন ২০-২৫ সেমি হয় এবং প্রতি টুকরায় কমপক্ষে দুই-তিনটি গিট থাকে। টুকরাগুলো গোড়ার দিকে বাঁকা করে কাটতে হবে। টুকরার বাঁকা অংশ ডগা সংগ্রহ করার দিনই রোপণ করা উত্তম। এছাড়াও পড়ন্ত রোদে ডগা রোপণ করলে ভালো হয়। সারি থেকে সারি দেড় ফুট দূরত্ব রেখে এবং উত্তর দিকে ৪৫ ডিগ্রি কোণ করে টুকরোগুলো রোপণ করতে হবে। এছাড়াও চারা রোপণ পদ্ধতিতে প্রথমে বীজতলায় বীজ বপন করে সেখান থেকে চারা উত্পন্ন করা হয়। ৩ মি. দৈর্ঘ্য ও ১ মি. প্রস্থ আকারের বীজতলায় মধ্য জুন-মধ্য জুলাই মাসের মধ্যে ৫০-১০০ গ্রাম বীজ বপন করতে হয়। বীজতলার চারার বয়স ২৫-৪০ দিন হলে চারাগুলো রোপণের জন্য উপযুক্ত হয়। মূল জমিতে বপনের দিন বীজতলা থেকে চারা তুলে নিয়ে প্রথমে ছায়ায় রাখতে হবে। প্রতিটি চারার ডগার দুই-তিনটি কচিপাতা রেখে অন্য সব পাতার বোঁটা বাদে বাকি অংশ কাঁচি দিয়ে কেটে দিতে হবে। মূল জমিতে অবশ্যই সারি করে চারা রোপণ করতে হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৪০ সেমি এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব হবে ১৫ সেমি। মেঘলা দিনে অথবা সন্ধ্যার আগে যখন রোদ থাকে না, তখন চারা রোপণ করা ভালো। বিজেআরআই উদ্ভাবিত ও উন্নতকৃত অন্যান্য প্রযুক্তির সাথি ফসল বা রিলে ক্রপিং পদ্ধতিতে পাটবীজ উৎপাদন, সরাসরি বীজ বপন পদ্ধতিতে পাটবীজ উৎপাদন, কাণ্ড ও ডগা রোপণ পদ্ধতিতে পাটবীজ উৎপাদন, পাটবীজের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে সবজি উৎপাদন, পাটবীজ ফসলের সঙ্গে শাকসবজি চাষ পদ্ধতি ইত্যাদি বাংলাদেশের পাটবীজের চাহিদা পূরণ করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। নাবি পাটবীজ উৎপাদন প্রযুক্তিসহ অন্যান্য প্রযুক্তি সঠিকভাবে সম্প্রসারণ করা গেলে কৃষক নিজেই তার প্রয়োজনীয় পাটবীজ উৎপাদন করতে পারবে। সর্বোপরি, সরকারের নানা পরিকল্পনায় ও উদ্যোগে উন্নত পাটবীজ উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আধুনিক গবেষণাগারসহ এক বা একাধিক বৃহত্ খামার স্থাপন করলে পাটবীজ উৎপাদনে বাংলাদেশ দ্রুত স্বয়ংসম্পূর্ণতার পথে এগিয়ে যাবে। একই সঙ্গে পাটবীজ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন নতুন জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে কৃষিবিজ্ঞানীদের চলমান কর্মকাণ্ডও ত্বরান্বিত হবে। জেএম/
|