ইসরাইলি হামলায় গাজার অনেক এলাকা মাটির সাথে মিশে গেছে
প্রকাশ:
২২ অক্টোবর, ২০২৩, ০৮:৫৮ রাত
নিউজ ডেস্ক |
গাজায় চলতে থাকা ইসরাইলি বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৩০০’র বেশি ফিলিস্তিনি মারা গেছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা বিমান হামলায় গাজার উত্তরাঞ্চল ও এর পার্শ্ববর্তী এলকাগুলো প্রায় মাটির সাথে মিশে গেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরাইলের বিমান হামলায় মারা যাওয়া মানুষের অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। এর মধ্যে শনিবার রাতেই বোমা হামলায় অন্তত ৫৫ জন মারা গেছেন বলে জানিয়েছে হামাস। জাতিসঙ্ঘ বলেছে, এখন পর্যন্ত গাজার ১৪ লাখের বেশি বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যাদের মধ্যে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ জাতিসঙ্ঘ নিয়ন্ত্রিত ১৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে থাকছেন। গাজায় উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ ভবন ইসরাইলি বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় জাতিসঙ্ঘের স্কুল ও হাসপাতালগুলোতে আশ্রয়ও নিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। তবে সেসব হাসপাতালও এখন খালি করতে বলা হচ্ছে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে। ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, গাজার উত্তরের আল কুদস হাসপাতাল খালি করার নির্দেশ দিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এই হাসপাতালে বর্তমানে ৪০০ রোগী এবং ১২ হাজার বাস্তুচ্যুত বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন। হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো শুরু থেকেই হাসপাতাল খালি করার নির্দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আসছে। ডাক্তারদের একটি গ্রুপ, ফিজিশিয়ান্স ফর হিউম্যান রাইটস ইসরাইল বলেছে, আল কুদস হাসপাতাল খালি করা যাবে না, সে বিষয়টিতে জোর দিয়ে ইসরাইলের সুপ্রিম কোর্টে তারা একটি আবেদন করবেন। শিশুদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন বলেছে, গাজায় ১০ লাখেরও বেশি শিশুর জীবন অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটছে। অসুস্থ ও আহত শিশুদের গাজা থেকে বের করে নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। পাশাপাশি, চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের স্বল্পতা ও বিদ্যুৎ সংকট থাকায় সেখানে শিশুদের মৃত্যুর সংখ্যা আরো বড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। পেন্টাগন জানিয়েছে, তারা মধ্যপ্রাচ্যে টার্মিনাল হাই আল্টিচিউড এরিয়া ডিফেন্স (টিএইচএএডি) সিস্টেম পাঠাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে। এর সাথে বিশেষ ধরনের বিমান প্রতিরক্ষা সিস্টেমও পাঠানো হচ্ছে ওই অঞ্চলে। স্বল্প ও মধ্যম রেঞ্জের ব্যালিস্টিক মিসাইল আঘাত করার কিছুক্ষণ আগে নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম এই টিএইচএএডি সিস্টেম। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লয়েড অস্টিন জানিয়েছেন, এই সিস্টেমগুলোর পাশাপাশি ‘যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত’ অতিরিক্ত সৈন্যও পাঠানো হচ্ছে ওই এলাকায়। তবে কত সংখ্যক সৈন্য পাঠানো হবে তা নিশ্চিত করেননি লয়েড। পেন্টাগনের সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও অন্যান্য শক্তির উত্তেজনা বৃদ্ধি’কে কেন্দ্র করে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে হামাস ও ইসরাইলের বাহিনীর মধ্যে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন বাহিনীর ওপর হামলার হার বেড়ে গেছে। আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি আহ্বান জানিয়েছে, মিসর হয়ে গাজার ভেতরে চিকিৎসকদের যেন প্রবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়। বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা সারাহ ডেভিস বলেন, ‘গাজায় এই মুহূর্তে নিয়মিত ভিত্তিতে মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ পৌঁছানো নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’ ‘একইসাথে, চিকিৎসা কর্মী ও সার্জিকাল টিমও গাজার ভেতরে যেতে দেয়া প্রয়োজন যেন তারা হাসপাতালগুলোতে তৈরি হওয়া চাপ কমাতে পারে।’ তিনি জানান, ইসরাইলি বাহিনীর অবরোধ থাকায় গাজার ভেতরে হাসপাতালগুলো পরিচালনা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সেখানকার চিকিৎসকদের। অবরোধের কারণে জ্বালানি শেষ হয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ নিয়েও ব্যাপক সংকট তৈরি হয়েছে, যার ফলে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। সূত্র : বিবিসি কেএল/ |