শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫ ।। ৭ চৈত্র ১৪৩১ ।। ২১ রমজান ১৪৪৬

শিরোনাম :
ইত্তেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া বৃহত্তর মিরপুরের ফল প্রকাশ গাজায় গণহত্যা ও ভারত মুসলমানদের ওপর নিপীড়নের প্রতিবাদে ইমাম পরিষদের মানববন্ধন ‘ফিলিস্তিনে ‌ইসরাঈলী বর্বরতা রুখতে মুসলিম বিশ্বকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে’ কওমি সনদ স্বীকৃতির কার্যকরী বাস্তবায়ন চায় ইসলামী ছাত্র আন্দোলন   ঈদে বিশেষ সম্মানী পাচ্ছেন ইমাম ও মুয়াজ্জিনরা কামিল পরীক্ষা শুরু ৩ মে বেফাকের পাঠ্যপুস্তক এজেন্ট সম্মেলন ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত ইসলামী আন্দোলনে ‘নারী ইউনিট’, যা বললেন শেখ মারুফ উত্তরার জামিয়াতুস সালাম আল-আরাবিয়া মাদানী নেসাবে ভর্তির সুযোগ রমজানে ৩৫ হাজার নারী-পুরুষ দ্বীনিয়াত কোর্সের মাধ্যমে দ্বীন শিখছে

কওমি সনদ বাস্তবায়ন: ধর্ম উপদেষ্টার বক্তব্য ও বেফাক জিম্মাদারদের মতামত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| হাসান আল মাহমুদ ||

কওমি মাদরাসা শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি দেওয়া হয় ২০১৮ সালের ১৩ আগস্ট। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার সংসদে গেজেট আকারে ঘোষণা করে দাওরায়ে হাদিসের (তাকমিল) সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রির (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান স্বীকৃতি দেয়। তবে অর্ধ যুগ পেরিয়ে গেলেও সেই সনদের কোনো কার্যকারিতা দেখা যাচ্ছে না। এই সনদধারীর কেউ এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো সরকারি চাকরিতে সুযোগ পেয়েছেন বলেও শোনা যায়নি। বিগত সরকারের আমলে এ বিষয়ে বিভিন্ন সভা-সেমিনার কিংবা ব্যক্তি পর্যায় থেকে বিষয়টি নিয়ে দাবি জানালেও কওমি স্বীকৃতির কার্যকারিতা আলোর মুখ দেখেনি।

গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে রাষ্ট্রের প্রায় প্রতিটি অঙ্গনে। এবার সেই ধারাবাহিকতায় কওমি স্বীকৃতির বর্তমান অবস্থারও পরিবর্তন চাইছেন কওমি মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে বাস্তব ক্ষেত্রগুলোতে খুব শিগগিরই কার্যকর করা হোক।

কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে তাদের যাত্রার প্রায় আট মাস পেরোলেও কোনো সুখবর আসেনি কওমি শিক্ষার্থীদের জন্য। এর পেছনে কী কারণ তা নিয়ে রয়েছে নানা আলোচনা।

এই আলোচনার মধ্যেই সম্প্রতি অন্তর্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন এক বক্তব্যে বলেছেন, ‘বেফাকের মহাসচিব (কওমি শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ) আল্লামা মাহফুজুল হক সাহেব আমার এই মন্ত্রণালয়ে এসে বলে গেছেন, আমরা কোনো আবেদন করব না। আপনি যা পারেন করেন। মানুষ মনে করে এটা আমার মন্ত্রণালয়ের কাজ। আমার মন্ত্রণালয়ের কাজ হলে তো দায়িত্ব নেবার পর পরেই করে দিতাম। ৮ তারিখ দায়িত্ব নিয়েছি, ৯ তারিখই করে দিতাম।’

ধর্ম উপদেষ্টার এ বক্তব্য ঘিরে কওমি শিক্ষাবোর্ড বেফাককে অনেকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন। বেফাক কি আসলেই চায় না কওমি স্বীকৃতির বাস্তবায়ন, এমন প্রশ্ন উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

এ ব্যাপারে বোর্ডটির শীর্ষ জিম্মাদারদের সঙ্গে কথা হয় আওয়ার ইসলামের।

বেফাক মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ধর্ম উপদেষ্টার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎটা কওমি শিক্ষা সনদ নিয়ে নয়, এটা আমার অন্য বিষয়ে সাক্ষাৎ ছিল। কথার কোনো একটা পর্যায়ে এ প্রসঙ্গ এলে আমি বলেছি, এটা আমার একার বিষয় নয়। এটা বেফাক-হাইআ তথা সম্মিলিত ছয় বোর্ডের মুরব্বিদের নীতি নির্ধারণীর সিদ্ধান্তের বিষয়।’

কওমি শিক্ষা সনদের বাস্তবায়ন হোক এমন দাবির সঙ্গে একমত বেফাকের সহ-সভাপতি মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া। তিনি বলেন, ‘কওমি শিক্ষা সনদের বাস্তবায়ন চায় বেফাক। আমরাও চাই এই সনদের স্বীকৃতি বাস্তবায়ন হোক। তবে তা হতে হবে সঠিকভাবে, সঠিক পদ্ধতিতে। সম্পূর্ণ স্বকীয়তা বজায় রেখে, কওমি শিক্ষার মান অক্ষুণ্ন রেখে।’

মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া আরও বলেন, ‘ধর্ম উপদেষ্টা মাওলানা মাহফুজুল হক সাহেবের যে কথা উদ্ধৃত করেছেন সেটা হয়ত পূর্ণাঙ্গ না। তিনি কোন্ পরিবেশে কোন্ পরিস্থিতিতে বলেছেন সেটা আমাদের মহাসচিব সাহেবই ভালো বলতে পারবেন।’ তবে বেফাকের এই সহসভাপতি মনে করেন, ধর্ম উপদেষ্টা যেভাবে পাবলিকলি কথা বলেছেন, বেফাক মহাসচিবের নাম ধরে, এটা ঠিক হয়নি।

স্বীকৃতির বাস্তবায়ন আপনারা চান কি না? এমন প্রশ্নে বেফাকের সহ-সভাপতি মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন রাজু বলেন, ‘স্বীকৃতিটা দেওয়াই হয়েছে বাস্তবায়নের জন্য। এজন্য বিভিন্ন সাব-কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। আগের সরকারের সময়ও চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত কোনো ফলাফল আসেনি। এ সরকারের সময়ও চেষ্টা করা হচ্ছে। স্বীকৃতি বাস্তবায়ন এটা সবারই চাওয়া, আমাদেরও চাওয়া। এক্ষেত্রে কিছু প্রক্রিয়া আছে, যা চলমান।’

কীভাবে চাচ্ছেন, আমূল পরিবর্তন আনবেন নাকি স্বকীয়তা বজায় রেখে? এমন প্রশ্নে মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন রাজু বলেন, ‘আমরা আগে যেরকম স্বকীয়তা রেখে স্বীকৃতি নিয়েছি, এখন বাস্তবায়নও স্বকীয়তা বজায় রেখে নেব।  বিশেষ করে বিদেশে ভর্তির ক্ষেত্রে, চাকরির ক্ষেত্রে, এ সুযোগটুকু আমরা চাই।’

তিনি বলেন, ‘কওমি শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে স্বকীয়তা বজায় রেখে, সিলেবাস ঠিক রেখে স্বীকৃতি বাস্তবায়নে বেফাক একমত।’

ধর্ম উপদেষ্টার বক্তব্যের বিষয়ে মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন রাজু বলেন, ‘ধর্ম উপদেষ্টা সাহেব আমাদের মহাসচিব প্রসঙ্গে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা মহাসচিব সাহেবের না, সেটা ধর্ম উপদেষ্টার। মহাসচিব সাহেব কী বলেছেন, তা মহাসচিব সাহেবই সঠিক বলতে পারবেন।’

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ