|| তাওহীদ আদনান ইয়াকুব ||
(সূরা আহজাব, সূরা সাবা ,সূরা ফাতির ও সূরা ইয়াসীন )
আলহামদুলিল্লাহ, আমরা পবিত্র কুরআনের তেলাওয়াতের ধারাবাহিকতায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে উপনীত হয়েছি। ১৯ তম তারাবির তেলাওয়াতে আমরা শুনবো আমাদের সামনে নবী (সা.)-এর মর্যাদা, মুসলিম উম্মাহর দায়িত্ব, আল্লাহর কুদরত, কিয়ামতের বাস্তবতা এবং অতীত জাতিদের শিক্ষা। এই অংশে নবী (সা.)-এর জীবন ও তাঁর পরিবার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যেখানে মুমিনদের জন্য রয়েছে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
পাশাপাশি, নবী দাউদ (আ.) ও সুলাইমান (আ.)-এর কাহিনির মাধ্যমে আল্লাহর নেয়ামতের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। সূরা ইয়াসীনে এক শহরের তিনজন রাসূলের ঘটনাও বর্ণিত হয়েছে, যা সত্য ও মিথ্যার চিরন্তন সংঘাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এই শিক্ষাগুলো আমাদের জীবনে কীভাবে প্রভাব ফেলে এবং আমরা কীভাবে তা থেকে উপদেশ গ্রহণ করতে পারি, সেটিই আমরা এই সারমর্মে অনুধাবন করার চেষ্টা করবো।
১. সূরা আহজাব (৩৩:৩১-৭৩) – নবী (সা.) ও মুসলিম উম্মাহর বিধান
নবী (সা.)-এর পরিবার ও স্ত্রীদের মর্যাদা (৩১-৩৫)
- নবী (সা.)-এর স্ত্রীদের জন্য বিশেষ বিধান দেওয়া হয়েছে, কারণ তারা অন্যান্য নারীদের মতো নন।
- মুসলিম নারীদের জন্য লজ্জাশীলতা, বিনয় ও পর্দার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
মুনাফিকদের অবস্থা ও আল্লাহর প্রতিশ্রুতি (৩৬-৪৮)
- মুমিনদের জন্য নবী (সা.)-এর নির্দেশই চূড়ান্ত হওয়া উচিত।
- নবী (সা.)-এর প্রতি সম্মান ও তাঁর পরিবারের প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
- মুনাফিকদের চরিত্র বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং তাদের ভণ্ডামি থেকে সতর্ক করা হয়েছে।
নবী (সা.)-এর বৈবাহিক জীবন ও ইসলামের পারিবারিক বিধান (৪৯-৫৯)
- নবী (সা.)-এর স্ত্রীদের বিশেষ মর্যাদা ও তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণের বিধান দেওয়া হয়েছে।
- মুসলিম নারীদের পর্দার বিধান ও সৌন্দর্য প্রকাশ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নবী (সা.)-এর দায়িত্ব ও মুমিনদের আনুগত্য (৬০-৭৩)
- নবী (সা.) শুধু একজন ব্যক্তিগত নেতা নন, বরং তিনি সকল মুমিনের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ।
- আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যই মুক্তির একমাত্র পথ।
২. সূরা সাবা (৩৪:১-৫৪) – আল্লাহর কুদরত ও শাস্তি
আল্লাহর নেয়ামত ও কৃতজ্ঞতা (১-৯)
- আল্লাহর প্রশংসা করা হয়েছে এবং তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করতে বলা হয়েছে।
- মানুষ ও কিয়ামতের দিন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
নবী সুলাইমান (আ.) ও দাউদ (আ.)-এর কাহিনি (১০-২১)
- দাউদ (আ.)-কে লৌহ গলানোর ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল, আর সুলাইমান (আ.)-কে জিন ও বায়ুর ওপর কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছিল।
- সাবা সম্প্রদায়ের গল্প তুলে ধরা হয়েছে, যারা আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়েছিল এবং শাস্তি ভোগ করেছিল।
কিয়ামতের প্রত্যাখ্যানকারীদের পরিণতি (২২-৫৪)
- যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য উপাস্য মানে, তারা কিয়ামতের দিনে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
- আল্লাহ কাফেরদের পরিণতি সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে সতর্ক করেছেন।
৩. সূরা ফাতির (৩৫:১-৪৫) – সৃষ্টির রহস্য ও আল্লাহর করুণা
আল্লাহর অনুগ্রহ ও সৃষ্টির বিস্ময় (১-১৪)
- ফেরেশতাদের সৃষ্টি ও তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
- মানুষ যেন আল্লাহ ছাড়া কারও ওপর নির্ভর না করে, তা বলা হয়েছে।
জ্ঞানী ও অজ্ঞদের পার্থক্য (১৫-২৬)
- যারা আল্লাহকে ভয় করে, তারাই প্রকৃত জ্ঞানী।
- মুমিনদের জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে, আর কাফেরদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।
কিয়ামতের পূর্বাভাস ও আল্লাহর দয়া (২৭-৪৫)
- আল্লাহর দয়া ও শক্তির কথা তুলে ধরা হয়েছে।
- মানুষের উচিত আল্লাহর দিকে ফিরে আসা ও কৃতজ্ঞ হওয়া।
৪. সূরা ইয়াসীন (৩৬:১-২৭) – কুরআনের মাহাত্ম্য ও পরকাল
কুরআনের গুরুত্ব ও নবীদের দায়িত্ব (১-১২)
- নবী (সা.) সত্য বার্তা নিয়ে এসেছেন, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে।
- মানুষের অন্তর কঠোর হয়ে গেলে তারা সত্য গ্রহণ করে না।
অতীত জাতির শিক্ষা ও আল্লাহর নিদর্শন (১৩-২৭)
- এক শহরের তিনজন রাসূলের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে, যেখানে একজন মুমিন তাদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছিল।
- সেই মুমিনকে শহরের লোকেরা হত্যা করেছিল, কিন্তু আল্লাহ তাকে জান্নাতের সুখ দিয়েছেন।
মূল শিক্ষা ও বার্তা:
- নবী (সা.)-এর পরিবার ও সাহাবীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা জরুরি।
- আল্লাহর নেয়ামতগুলোর জন্য কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত।
- জান্নাত ও জাহান্নামের বাস্তবতা সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন।
- আল্লাহর অনুগ্রহ ও পরকালকে মনে রেখে জীবন পরিচালনা করা উচিত।
উপসংহার:
এই পারায় নবী (সা.)-এর মর্যাদা, মুমিনদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ, কাফেরদের জন্য কঠোর পরিণতি, আল্লাহর নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা ও কিয়ামতের বাস্তবতা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। আমরা যেন এই শিক্ষাগুলো আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারি—আমিন!
লেখক : ফাযেলে দারুল উলুম দেওবন্দ ও নদওয়াতুল উলামা লাখনৌ,
মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া আহলিয়া নশাসন, শরীয়তপুর
হাআমা/