রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫ ।। ২ চৈত্র ১৪৩১ ।। ১৬ রমজান ১৪৪৬

শিরোনাম :

১৬ তম তারাবির নামাজে তিলাওয়াতের সারমর্ম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| তাওহীদ আদনান ইয়াকুব ||

(সূরা ফুরকান, সূরা আশ-শুআরা ও সূরা নামল ১-৫৫ পর্যন্ত)

আলহামদুলিল্লাহ, পবিত্র রমাদানের এই বরকতময় রাতে আমরা আল্লাহর কালাম শ্রবণ করার সৌভাগ্য লাভ করছি। কুরআন শুধু তিলাওয়াতের জন্য নয়, বরং তা মানুষের জীবনকে আলোকিত করার এক চিরন্তন বিধান। ১৬ তম তারাবির তেলাওয়াতে আমরা এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শুনবো, যা আমাদের ঈমানকে দৃঢ় করবে এবং নৈতিকতা ও সত্যের পথে পরিচালিত করবে।

এই অংশে আল্লাহ তায়ালা সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য স্পষ্ট করেছেন, নবীদের দাওয়াত ও তাদের উম্মতের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেছেন, এবং আল্লাহর অসীম কুদরতের প্রমাণ আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন। বিশেষ করে, নবী সুলায়মান (আ.)-এর ঘটনা, বিলকিসের ঈমান গ্রহণ, মুসা (আ.)-এর সংগ্রাম এবং বিভিন্ন অবাধ্য জাতির ধ্বংসের বিবরণ আমাদের জন্য শিক্ষণীয়। এই আয়াতগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আল্লাহর পথেই রয়েছে চূড়ান্ত সফলতা, আর যারা অহংকার ও অন্যায়ের পথে চলবে, তারা ধ্বংসের সম্মুখীন হবে।

১. সূরা ফুরকান (২১-৭৭) সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য

অহংকারী কাফেরদের দাবী ও তাদের পরিণতি (২১-৩৪)

  • অবিশ্বাসীরা নবী (সা.)-এর প্রতি কটাক্ষ করে বলেছিল, যদি তিনি সত্য নবী হন, তবে কেন তাঁর কাছে ফেরেশতা আসে না বা কেন তিনি ধন-সম্পদের অধিকারী নন?
  • আল্লাহ জানিয়ে দেন, এসব বাহ্যিক বিষয় নয়, বরং সত্য গ্রহণ করাই মূল বিষয়।
  • মিথ্যাবাদীরা আখিরাতে কঠিন শাস্তি পাবে।

সত্য ও মিথ্যার মাঝে সুস্পষ্ট পার্থক্য (৩৫-৪৪)

  • পূর্ববর্তী নবীদের ঘটনা উল্লেখ করে আল্লাহ বোঝান যে, প্রত্যেক নবীকে তাঁর জাতি অস্বীকার করেছিল।
  • সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে কুরআন।

আল্লাহর নিদর্শন ও তাঁর কুদরতের বিবরণ (৪৫-৬২)

  • দিন ও রাতের পরিবর্তন, বাতাস, বৃষ্টি এবং সাগরের মধ্যকার পার্থক্য ইত্যাদি আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন।

ইবাদুর রহমানবা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের গুণাবলি (৬৩-৭৭)

  • নম্রতা ও বিনয়।
  • অজ্ঞদের সাথে বিবাদ না করা।
  • রাতে ইবাদতে মগ্ন থাকা।
  • অপচয় না করা ও দানশীল হওয়া।
  • মিথ্যা সাক্ষ্য না দেওয়া।
  • আল্লাহর কাছে তাকওয়া ও নেকসীরাতের দোয়া করা।

২. সূরা আশ-শুআরা (১-২২৭) নবীদের দাওয়াত ও জাতিগুলোর প্রতিক্রিয়া

কুরআনের বিশেষত্ব ও নবী (সা.)-এর দায়িত্ব (১-৬৮)

  • নবী (সা.) দুঃখ করতেন যে, মানুষ সত্য গ্রহণ করছে না।
  • কুরআন সুস্পষ্ট শিক্ষা দিয়ে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নির্ধারণ করেছে।

পূর্ববর্তী নবীদের কাহিনি:

  • মুসা (আ.) ও ফেরাউন (১০-৬৮): ফেরাউন মুসা (আ.)-এর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছিল, কিন্তু আল্লাহ তাঁকে রক্ষা করেছিলেন।
  • ইবরাহিম (আ.) (৬৯-১০৪): মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে তাঁর যুক্তি এবং জাতির প্রতিক্রিয়া।
  • নূহ (আ.) (১০৫-১২২): দীর্ঘ সময় দাওয়াত দেওয়ার পরও তাঁর জাতির অবাধ্যতা এবং পরিণতিতে মহাপ্লাবন।
  • হুদ (আ.) (১২৩-১৪০): আদ জাতির অহংকার ও তাদের ধ্বংস।
  • সালিহ (আ.) (১৪১-১৫৯): সামুদ জাতির অস্বীকৃতি ও উটনী হত্যার শাস্তি।
  • লুত (আ.) (১৬০-১৭৫): সমকামিতার কারণে তাদের কঠিন পরিণতি।
  • শুয়াইব (আ.) (১৭৬-১৯১): ব্যবসায়িক প্রতারণার জন্য মাদইয়ান জাতির ধ্বংস।

শিক্ষা:

  • প্রতিটি নবী তার জাতিকে সতর্ক করেছিলেন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ অস্বীকার করেছিল এবং শাস্তি ভোগ করেছিল।
  • আল্লাহ সত্যবাদীদের রক্ষা করেন।

৩. সূরা নামল (১-৫৫) সুলায়মান (আ.) ও আল্লাহর কুদরত

কুরআনের গুরুত্ব ও ঈমানদারদের সুসংবাদ (১-১৪)

  • মুমিনদের জন্য কুরআন হিদায়াত, আর কাফেরদের জন্য ধ্বংসের বার্তা।
  • মুসা (আ.)-এর ঘটনা ও ফেরাউনের অহংকারের পরিণতি।

সুলায়মান (আ.) ও বিলকিসের ঘটনা (১৫-৪৪)

  • সুলায়মান (আ.)-কে আল্লাহ বিশেষ জ্ঞান ও শক্তি দিয়েছিলেন।
  • তিনি পাখি ও জিনদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন।
  • বিলকিস (সাবার রানি) ইসলামের আলো গ্রহণ করেন।

লুত (আ.)-এর জাতির ধ্বংস (৪৫-৫৫)

  • সমকামিতার কারণে লুত (আ.)-এর জাতি ধ্বংস হয়েছিল।

মূল শিক্ষা ও বার্তা:

  • আল্লাহর নিদর্শন থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।
  • ইসলামের শাশ্বত নীতিগুলো মেনে চলাই সফলতার চাবিকাঠি।
  • অহংকার, অন্যায় ও অবাধ্যতা মানুষের ধ্বংস ডেকে আনে।
  • আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের গুণাবলি অর্জন করা দরকার।
  • সৎকর্মশীল ও ন্যায়ের পক্ষে থাকা ব্যক্তিরাই পরকালে সফল হবে।

উপসংহার:

এই পারায় নবীদের সংগ্রাম, সত্য-মিথ্যার সংঘর্ষ, আল্লাহর কুদরত এবং নৈতিক শিক্ষা বর্ণিত হয়েছে। আসুন, এই শিক্ষাগুলো হৃদয়ে ধারণ করি এবং আমাদের জীবনকে কুরআনের আলোয় আলোকিত করি। আল্লাহ আমাদের কুরআনের শিক্ষাগুলো অনুধাবন ও জীবনে বাস্তবায়নের তাওফিক দান করুন—আমিন!

লেখক, ফাযেলে দারুল উলুম দেওবন্দ ও নদওয়াতুল উলামা লাখনৌ,
মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া আহলিয়া নশাসন, শরীয়তপুর

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ