রবিবার, ০৯ মার্চ ২০২৫ ।। ২৪ ফাল্গুন ১৪৩১ ।। ৯ রমজান ১৪৪৬


৮ম তারাবির নামাজে তিলাওয়াতের সারমর্ম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| তাওহীদ আদনান ইয়াকুব ||

(সূরা তাওবা ৯৪-১২৯  ও সূরা ইউনুস ১-১০৯ পর্যন্ত)

কুরআনের প্রতিটি আয়াত মানবজীবনের জন্য দিকনির্দেশনা ও শিক্ষা বহন করে। অষ্টম তারাবির তেলাওয়াতে আমরা মুনাফিকদের কপটতা, ইসলামের জন্য প্রকৃত মুমিনদের আত্মত্যাগ, অতীত জাতিদের শিক্ষা ও কুরআনের সত্যতার বিষয়ে আলোচনা পাব।

এ অংশে মুনাফিকদের ধোঁকাবাজি ও ষড়যন্ত্রের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, যারা মুখে ইসলাম গ্রহণ করলেও অন্তরে কুফর লালন করত। পাশাপাশি, প্রকৃত ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য ও তাঁদের জন্য জান্নাতের প্রতিশ্রুতির কথা এসেছে। অতীতের নূহ (আ.), মূসা (আ.) ও অন্যান্য নবীদের জাতির পরিণতি তুলে ধরে আল্লাহ মানুষকে সতর্ক করেছেন, যেন তারা সত্য গ্রহণ করে এবং ভ্রান্ত পথ থেকে ফিরে আসে।

এই অংশে নবীজি ﷺ-কে ধৈর্য ও আল্লাহর ওপর ভরসা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা আমাদের জন্যও এক মহান শিক্ষা। আসুন, আমরা কুরআনের এই জ্ঞানের ভাণ্ডার থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি এবং আমাদের জীবনকে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী পরিচালিত করি।

১. সূরা আত-তাওবার সমাপ্তি (৯৪-১২৯) মুনাফিকদের স্বরূপ ও তওবার গুরুত্ব

মুনাফিকদের প্রতারণা ও তাদের শাস্তি (৯৩-১১০)

  • মুনাফিকরা কীভাবে যুদ্ধে না যাওয়ার জন্য অজুহাত দেখাত, তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
  • তাদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও ইসলামবিরোধী কার্যকলাপের কথা বলা হয়েছে।
  • মসজিদে দিরার (ষড়যন্ত্রমূলক মসজিদ) সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, যেটি মুনাফিকরা মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য নির্মাণ করেছিল।

সত্যিকারের মুমিনদের বৈশিষ্ট্য ও তাদের মর্যাদা (১১১-১২১)

  • আল্লাহ জান-মালের বদলে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
  • রাসূল ﷺ এবং সাহাবাদের আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
  • ইসলামের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করা সাহাবিদের প্রশংসা করা হয়েছে।

নবীজির প্রতি নির্দেশ ও ইসলামের প্রতি দায়বদ্ধতা (১২২-১২৯)

  • ইসলামের প্রচার ও জ্ঞান অর্জনের জন্য কিছু মুসলমানকে জিহাদে অংশগ্রহণের পরিবর্তে দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করতে বলা হয়েছে।
  • নবীজি ﷺ-কে মুমিনদের প্রতি সদয় হতে বলা হয়েছে এবং তাঁর দয়ার গুণের প্রশংসা করা হয়েছে।

২. সূরা ইউনুস (১০:১-১০৯) তাওহীদ, নবীদের দাওয়াত ও আল্লাহর অনুগ্রহ

কুরআনের সত্যতা ও তাওহীদের বার্তা (১-২০)

  • কুরআনের মহত্ব ও আল্লাহর একত্ববাদ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
  • মুশরিকরা নবীজি ﷺ-কে কটাক্ষ করত, তাদের সন্দেহের জবাব দেওয়া হয়েছে।

অতীত জাতিদের শিক্ষা ও শাস্তির বিবরণ (২১-৭০)

  • কাফেরদের অবাধ্যতা ও তাদের ওপর আল্লাহর শাস্তির বিবরণ দেওয়া হয়েছে।
  • নূহ (আ.), মূসা (আ.) ও ফিরআউনের কাহিনি সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়েছে।
  • মানুষের প্রবৃত্তিগত অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে—সংকটে তারা আল্লাহকে ডাকে, কিন্তু স্বস্তি পেলে তাঁকে ভুলে যায়।

নবীজির প্রতি সান্ত্বনা ও ধৈর্যের শিক্ষা (৭১-১০৯)

  • নবীজিকে ﷺ বলা হয়েছে, তিনি যেন ধৈর্য ধরেন এবং আল্লাহর ওপর ভরসা করেন।
  • ইসলামের প্রতি যারা বিরূপ মনোভাব পোষণ করে, তাদের প্রতিদান আল্লাহ নিজেই দেবেন।
  • এই দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী, তাই পরকালের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মূল শিক্ষা ও বার্তা:

  • মুনাফিকদের চিনতে হবে এবং তাদের ষড়যন্ত্র থেকে সতর্ক থাকতে হবে।
  • আসল মুমিনরা জান-মাল দিয়ে ইসলাম রক্ষার জন্য প্রস্তুত থাকে।
  • কুরআন সর্বোত্তম দিকনির্দেশনা এবং তাওহীদ প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত বার্তা।
  • অতীত জাতিদের শিক্ষা থেকে সাবধান হয়ে আমাদের জীবনে ইসলাম অনুসরণ করতে হবে।
  • নবীজির ﷺ ধৈর্য ও আল্লাহর ওপর ভরসার শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।

উপসংহার:

এই তেলাওয়াতের অংশে মুনাফিকদের আসল চেহারা উন্মোচন করা হয়েছে এবং সত্যিকারের মুমিনদের গুণাবলি বর্ণনা করা হয়েছে। পাশাপাশি, কুরআনের সত্যতা, তাওহীদের গুরুত্ব ও অতীত জাতিদের ধ্বংসের ঘটনা তুলে ধরে আল্লাহ আমাদের সতর্ক করেছেন। ইসলামের পথে দৃঢ় থাকার জন্য ত্যাগ স্বীকার করা জরুরি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কুরআনের শিক্ষাগুলো হৃদয়ে ধারণ করার তাওফিক দান করুন—আমিন!

লেখক : ফাযেলে দারুল উলুম দেওবন্দ ও নদওয়াতুল উলামা লাখনৌ,
মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া আহলিয়া নশাসন, শরীয়তপুর  

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ