বৃহস্পতিবার, ০৬ মার্চ ২০২৫ ।। ২১ ফাল্গুন ১৪৩১ ।। ৬ রমজান ১৪৪৬


ইসলামিক রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য কত দূর?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| হাসান আল মাহমুদ ||

দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে নতুন করে কর্মতৎপরতা বাড়ে ইসলামিক রাজনৈতিক দলগুলোর। নিজ নিজ অবস্থান থেকে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জোরদার করছে দলগুলো। কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে বিভিন্ন কার্যক্রমে ব্যস্ত দেখা যাচ্ছে দলগুলোর নেতাকর্মীদের।

এদিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘদিন ধরে ইসলামী দলগুলোর সমন্বয়ে পৃথক ‘রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম’ গঠনের চেষ্টা রয়েছে। কিন্তু পরস্পরবিরোধী অবস্থানে সেই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ফের সেই প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। তাদের লক্ষ্য, সারা দেশের ভোটকেন্দ্রে ইসলামী দলগুলোর একটি বাক্স পাঠানো।

নতুন প্রেক্ষাপটে একটি ‘নির্বাচনী ঐক্য’ গড়তে বিভিন্ন ইসলামী দল পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছে। বিশেষ করে ইসলামী কয়েকটি দলের সঙ্গে ‘নির্বাচনী ঐক্য’ গড়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়তে চান বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক।

তিনি সোমবার (৩ মার্চ) বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস পবিত্র মক্কা মুকাররম শাখার কর্তৃক আয়োজিত স্থানীয় মিসফালাহস্থ আল হিব্বা হোটেল মিলনায়তনে আয়োজিত সাহরি মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস আগামী নির্বাচনে যে কোন মূল্যে ইসলামপন্থীদের ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চায়। এ লক্ষ্যে আমরা সবরকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ। 

এর আগে (২০ ফেব্রুয়ারি) তিনি অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক চরমোনাই মাহফিলে জামায়াত, আহলে হাদিস, আহলে সুন্নাতসহ দেশের সকল ঘরানার ইসলামি বলয়কে উদ্দেশ করে বৃহত্তর ঐক্যের ডাক দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, বর্তমান বাংলাদেশে ইসলামী চারটি পক্ষ রয়েছে, যাদের সাথে আমাদের ঈমান, তাওহিদ ও রিসালাত ছাড়া কিছু শাখাগত, ফিকহি মাসালাগত ও আকিদাগত সামান্য মতপার্থক্য রয়েছে। তবে আমরা সবাই একটি কথায় একমত যে আমরা সবাই আল্লাহর জমিনে ইসলামী হুকুমত কায়েম করতে চাই।

দেওবন্দি ধারার বাইরে জামায়াতে ইসলামী, সুন্নি এবং আহলে হাদীস আন্দোলনকে সাথে নিয়ে আগামী দিনে ইসলামের পক্ষে একটি বাক্স দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশের সকল ইসলামী ধারা বাংলাদেশে ইসলামী হুকুমত চায় বলে আমি মনে করি। অতএব, ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে সকলে সীসা ঢালা প্রাচীরের মতো ঐক্য গড়ে তুলি।’

এছাড়া, ২১ জানুয়ারি বরিশালে চরমোনাই পীরের দরবারে ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। পরে তিনি চরমোনাই পীরের দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। এ সময় তারা রাজনৈতিক নানা বিষয়ে কথা বলেন।

পরে দুই দলের শীর্ষ নেতাই সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। ইসলামী দলগুলোর ঐক্য বা জোট হচ্ছে কি না—প্রশ্নের জবাবে দুই দলের আমির ঐক্যের জন্য জনসাধারণের কাছে দোয়া চান। তারা বলেন, ইসলামী দলগুলো ভোটকেন্দ্রে একটি বাক্স পাঠানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে থাকলেও এই ঘটনা নতুন পরিস্থিতিতে দল দুটির মধ্যে দূরত্ব ঘোচার আভাস বলে মনে করছেন অনেকে। তাদের মতে, ইসলামী দলগুলোর প্ল্যাটফর্ম গঠনের ক্ষেত্রে এটা এক ধরনের অগ্রগতি।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিসসহ অন্যান্য ইসলামি দলগুলোর মাঝেও একতার সুর বেজে ওঠেছে। তবে, ঐক্যবদ্ধ হবার প্রক্রিয়া কতটুকু এগুলো? এ বিষয়ে জানতে কথা হয় ইসলামিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে।

তারা জানান, পরস্পরের মাঝে হৃদ্যতা বেড়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতি সবকিছু অনুকূলে এনে দিয়েছে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, আমাদের ইসলামি দলগুলোর পরস্পরের  সাথে ঘরোয়াভাবে আলাপ-আলোচনা ও বৈঠক হচ্ছে। আমরা সবাই ঐক্য  চাই। আমাদের সম্পর্কটা অনেকটা  মজবুত হচ্ছে। সুতরাং আশা করা ঈদের পরে আামরা বসে জাতিকে কিছু বলতে পারব।

ইসলামপন্থী যে দলগুলো আছে, যেমন, জামায়াত, চরমোনাই , জমিয়ত, খেলাফত মজলিস সবগুলোই কী ঈদের পরে একমত হওয়ার  সম্ভাবনা রয়েছে? এমন প্রশ্নে মহাসচিব বলেন, সবার সাথেই আমাদের যোগাযোগ আছে  এবং কথা হয়েছে , বৈঠক হয়েছে ইতিবাচক ঐক্য হওয়ার জন্য। আর আমরা আমাদের আলোচনা সামনে নিয়ে যেয়ে এরপর আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে পারব।

মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, এখানে শুধু ইসলামাপন্থী না বরং ডানপন্থী সকলেকে নিয়ে আমরা কাজ করব। তিনি বলেন, বড় দল বাদেও ছোট যেসব ডানপন্থী দল আছে, হতে ভিপি নূরের দল, এবি পার্টি এবং ছাত্রদের নতুন দলের সঙ্গেও আমরা বসব। ঐক্যবদ্ধ হবার পক্রিয়া আমরা চালু রাখবো ইনশাআল্লাহ।

নির্বাচনের সময়টা নির্ধারিত হলেই ঐক্যবদ্ধ হবার বিষয়টা জোরালোভাবে হবে বলে মনে করছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান

তিনি বলেন, আমাদের সকল ইসলামি দল কবে ঐক্যবদ্ধ হব,  সে বিষয়ে আলোচনা চলছে, সময় এলে হবে ইনশাআল্লাহ। নির্বাচন কবে হবে সে বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো ক্লিয়ার করেনি। নির্বাচনের বিষয়টা ক্লিয়ার হলেই জোরালো হবে ঐক্যবদ্ধ হবার বিষয়টা।

খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী বলেন, ইসলামিক দলগুলো পরস্পর যোগাযোগ আছে। তবে জোট হয়ে যাওয়ার মতো পর্যায়ে এখানো যায়নি বা জোট হয়নি। সবকিছু এখন আলাপ আলোচনার পর্যায়ে আছে। সবাই অনুভব করে ইসলামি শক্তিগুলো একসাথে থাকার। এবং সবারই একই চিন্তা-চেতনা। তবে সবাই একসাথে হয়ে যায়নি।

ইসলামিক দলগুলো এক প্ল্যাটফর্মে নির্বাচন করলে সুবিধা কী হবে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা তো মনে করি আগামী নির্বাচনে ইসলামিক দলগুলো এক প্ল্যাটফর্মে থেকে অভিন্ন ভাবে কাজ করা। মার্কা থাকতে পারে ভিন্ন, তবে ইসলামী দলগুলো একেক আসনে যেন একেক প্রার্থী  থাকে। আর এভাবে যদি একটা ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্মে তৈরী হয়, তাহলে ইসলামী দলগুলোর জন্য ভালো হবে এবং একটা ভালো পজিশনে আমরা থাকতে পারব। যারাই সরকার গঠন করুক, আমরা শক্ত বিরোধী দল হিসেবে এমন একটা পর্যায়ে থাকতে পারব , যাতে তারা যে কোন  আইন বিনা চ্যালেঞ্জর মোকাবেলা  না করে কিছুতেই করতে না পারে।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া বলেন, নির্বাচন ঘোষণা হোক। তারপর সময়ই বলে দিবে আমরা কিভাবে ঐক্যবদ্ধ হব।

ইসলামিক সব দল সব এক সাথে হলে বড় দলে যুক্ত হওয়া ইসলামিক রাজনৈতিক দলগুলো কার সাথে থাকবে সে বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (একাংশের) মহাসচিব মাওলানা গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম বলেন, আমরা বিএনপির সাথে আছি দীর্ঘ অনেক বছর ধরে। আপাতত আমাদের অন্য কারো সঙ্গে জোটবদ্ধ হবার সম্ভাবনা নেই।

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ