শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ।। ৮ ফাল্গুন ১৪৩১ ।। ২৩ শাবান ১৪৪৬

শিরোনাম :
জাকির নায়েকের বক্তৃতার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলো মালয়েশিয়া আওয়ার ইসলাম ঘুরে গেলেন ইংল্যান্ডের শায়েখ জাকারিয়া ও ম্যাসেজ টিভির পরিচালক রাখাল রাহা, সোহেল ও ধর্ষক আলেপের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবিতে রংপুরে বিক্ষোভ ফরায়েজী আন্দোলনকে নিবন্ধন দিতে অনুরোধ করবেন ধর্ম উপদেষ্টা রাসুলুল্লাহ ﷺ- এর অবমাননার প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী কওমী ছাত্র আন্দোলনের নিন্দা ও প্রতিবাদ খিলগাঁওয়ে ভয়াবহ আগুন ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশে, নিয়ন্ত্রণে ১০ ইউনিট প্রধান উপদেষ্টার কাছে খোলা চিঠি দিলেন শায়খ আহমাদুল্লাহ ইংরেজি শিখলেই বাংলা ভুলে যেতে হবে, এমনটি নয়: ড. ইউনূস জামায়াতে ইসলামীর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা মুসলমানরা এখনও পরাধীন; আরেকটা বিপ্লব হবে: আব্বাসী

কওমি শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার নির্মাণে সম্মানজনক ১২ পেশা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| নাঈমুর রহমান নাঈম || 

বর্তমানে উচ্চশিক্ষা শেষে তরুণদের প্রধান চিন্তার বিষয় ক্যারিয়ার গঠন। বিশেষ করে কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা এখন আর কেবল মসজিদ-মাদরাসার সীমানায় সীমাবদ্ধ থাকছেন না। তারা নিজেদের দ্বীনি আদর্শ বজায় রেখেই নানা ধরনের পেশায় যুক্ত হচ্ছেন।

সুতরাং, একজন আলেম শুধু ইমাম বা শিক্ষক হওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নন; বরং তার সামনে রয়েছে অসংখ্য সম্ভাবনার দুয়ার। আসুন জেনে নিই কওমি শিক্ষার্থীদের জন্য সম্ভাবনাময় কিছু ক্যারিয়ার ও পেশা সম্পর্কে

১. দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা:

চলতি সময়ে ইসলামিক মডেল মাদরাসা এবং কুরআন-হাদিস শিক্ষার পাশাপাশি ইংরেজি ও অন্যান্য বিষয় অন্তর্ভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চাহিদা ব্যাপক। তাই নিজ গ্রাম বা মহল্লায় নূরানী মক্তব বা ইসলামিক শিক্ষা কেন্দ্র চালু করা যায়। এবং অনলাইনে ইসলামিক কোর্স পরিচালনার মাধ্যমে শিক্ষাদান করা সম্ভব।

২. ব্যবসা ও উদ্যোক্তা হিসেবে ক্যারিয়ার:

আলেমগণ সুন্নাহভিত্তিক ও হালাল ব্যবসার মাধ্যমে স্বনির্ভর হতে পারেন। যেমন: ইসলামিক পোশাক ও লাইফস্টাইল স্টোর (আবায়া, হিজাব, পাঞ্জাবি, টুপি, আতর ইত্যাদি)।সুন্নাহ প্রোডাক্ট ব্যবসা(মধু, কালোজিরা, জমজম পানি, খেজুর ইত্যাদি)। হালাল ফুড বিজনেস(ইসলামী শরীয়াহসম্মত খাবারের দোকান ও রেস্তোরাঁ)। ইসলামিক বই ও প্রকাশনা ব্যবসা( বই প্রকাশ ও বিক্রয়)। ইসলামিক মার্কেটপ্লেস(Daraz বা Amazon-এর বিকল্প ইসলামিক ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা)।

৩. লেখালেখি ও সাহিত্যচর্চা: লেখালেখিতে আগ্রহী মাদরাসার শিক্ষার্থীরা লেখক ও গবেষক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। যেমন :পত্রিকা, ম্যাগাজিন ও ব্লগে লেখালেখি। ইসলামিক সাহিত্য রচনা ও গবেষণামূলক বই প্রকাশ। প্রুফরিডিং ও সম্পাদনার কাজ (যারা ভাষাগত দক্ষতা ভালো তাদের জন্য একটি চমৎকার পেশা)।

৪. সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম: অনলাইন-অফলাইন সংবাদমাধ্যমে সাংবাদিকতা। ইসলামিক টিভি বা ইউটিউব চ্যানেল পরিচালনা। নিউজ পোর্টাল বা ম্যাগাজিন সম্পাদনা ও পরিচালনা।যদি এই পেশায় আসার আগ্রহ থাকে তাহলে কিছু কোর্স করে এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাথে সংযোগ রেখে এ পেশায় যুক্ত হওয়া সহজ।

৫. ফ্রিল্যান্সিং ও ডিজিটাল মার্কেটিং: বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং ও অনলাইন মার্কেটিং করে ঘরে বসেই আয় করা সম্ভব। যেমন: ওয়েব ডিজাইন ও গ্রাফিক ডিজাইন: ইসলামিক ওয়েবসাইট ও লোগো ডিজাইন করা।ডিজিটাল মার্কেটিং: ইসলামিক পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার ও ব্র্যান্ডিং করা ইত্যাদি।

৬. হজ ও ওমরাহ ট্রাভেল সার্ভিস: মুসলমানদের জন্য বিশুদ্ধ ও শরীয়াহসম্মত হজ ও ওমরাহ সেবা প্রদান।ভিসা, টিকিট, আবাসন ও গাইডেন্সের মাধ্যমে হজযাত্রীদের সহায়তা করা।

৭. ইসলামিক ট্যুরিজম ও ট্রাভেল গাইড: শরীয়াহসম্মত ট্যুরিজম পরিচালনা।মুসলিম পর্যটকদের জন্য ইসলামী বিধান মেনে ট্রিপ আয়োজন করা।

৮. ইসলামিক কোর্স ও কোচিং সেন্টার পরিচালনা: আরবি, বাংলা, ইংরেজি ভাষা শেখানোর কোর্স। হিফজ, তাজবিদ ও ইসলামী ফিকহ বিষয়ক কোর্স পরিচালনা। এবং যদি আরবী, বাংলা ইংরেজির হাতের লেখার যোগ্যতা থাকে তাহলে এটার মাধ্যমেও একটি কর্মশালার ব্যাবস্থা করা যায়।

৯. ইসলামিক হেলথ কেয়ার ও তিব্বে নববী: হিজামা (কাপিং থেরাপি) সেন্টার। ইসলামিক থেরাপি ও রুকইয়া (কুরআনিক হিলিং) সেবা।ইসলামিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র।

১০. ইসলামিক কনটেন্ট: ইসলামের দাওয়াতমূলক ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি। ইসলামের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও আদর্শ প্রচার-প্রসার। এবং এর মাধ্যমে সমাজে নৈতিকতা, সততা ও ইসলামী মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেওয়া।  ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ইসলামিক শিক্ষার বিস্তার।

১১. ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তি: সাউন্ড সিস্টেম, কম্পিউটার, মোবাইল রিপেয়ারিং। ইসলামিক অ্যাপ ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট।

১২. ক্যালিগ্রাফি শিল্প: ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি ডিজাইন ও বিক্রয়। কোরআনিক আয়াত ও ইসলামিক উক্তির শৈল্পিক চিত্রায়ণ। এবং ক্যালিগ্রাফিতে হাত পাকা থাকলে এই বিষয়ে কর্মশালারও আয়োজন করা যায়।

এছাড়াও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ের  উদ্যোক্তা হতে পারে আজকের তরুণ আলেমরা। যেমন: গরিবদের জন্য হেল্পলাইন, ফ্রি খাবার বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, দাতব্য সংস্থা ইত্যাদির মাধ্যমে অনেকে সমাজসেবামূলক কার্যক্রম চালু করা। কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের অসংখ্য সম্ভাবনা রয়েছে। তারা শুধু মাদরাসা-মসজিদেই সীমাবদ্ধ নন, বরং হালালভাবে জীবন-জীবিকা নির্বাহের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই অবদান রাখতে পারেন নবীন আলেমগণ। সঠিক পরিকল্পনা, দক্ষতা অর্জন ও পরিশ্রমের মাধ্যমে তারা নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারেন। দ্বীনের খেদমত ও পেশাগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য রেখে তারা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারেন।

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ