মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ।। ২১ মাঘ ১৪৩১ ।। ৫ শাবান ১৪৪৬

শিরোনাম :
সংবিধানে ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ রাখার পক্ষে যে যুক্তি দিলেন আলী রীয়াজ    ইনভেস্টর্স অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ ও IFAC-এর মধ্যে চুক্তি সম্পাদন জেসিআই বাংলাদেশ সিনেট সভা অনুষ্ঠিত চবিতে রাসুলুল্লাহ (সা.) কে নিয়ে কটুক্তি, বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দেড় হাজার শিক্ষার্থীর মাঝে কুরআন বিতরণ ইজতেমার দ্বিতীয় ধাপে যৌতুকবিহীন ২৩ যুগলের বিয়ে বিয়ের বয়স কত হওয়া উচিত? কী বলে ইসলাম আন্দোলনে সমর্থনের কারণে কারা নির্যাতিত প্রবাসীদের পুনর্বাসনের আহ্বান জমিয়তের এই জাতির অস্তিত্ব পাওয়ার লড়াই শুরু করতে হবে: জামায়াত আমির নূরানী শিক্ষক নিচ্ছে কুমিল্লার তিতাস থানার দারুস সুন্নাহ ইসলামিয়া মাদরাসা

বিয়ের বয়স কত হওয়া উচিত? কী বলে ইসলাম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব ||

ইসলামে বিবাহের জন্য নির্দিষ্ট কোনো বয়স নির্ধারণ করা হয়নি, বরং এটি স্বামী-স্ত্রীর সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে। আল্লাহ তাআলা বলেন—

( وَاللَّائِي يَئِسْنَ مِنَ الْمَحِيضِ مِنْ نِسَائِكُمْ إِنِ ارْتَبْتُمْ فَعِدَّتُهُنَّ ثَلاثَةُ أَشْهُرٍ وَاللَّائِي لَمْ يَحِضْنَ ) الطلاق/ الآية 4

"আর তোমাদের নারীদের মধ্যে যারা মাসিক বন্ধ হয়ে গেছে, যদি তোমরা সন্দেহে থাক, তবে তাদের ইদ্দত তিন মাস; এবং যারা এখনো মাসিকপ্রাপ্ত হয়নি, তাদেরও (ইদ্দত একই)।" (সূরা আত-তালাক: ৪)

শাইখ আবদুর রহমান আস-সা’দি (রহ.) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন—

"এখানে (اللائي لم يحضن) বলা হয়েছে, অর্থাৎ যারা এখনো ঋতুস্রাব পায়নি—অর্থাৎ ছোট মেয়েরা, যাদের এখনো ঋতুস্রাব হয়নি, এবং সেসব প্রাপ্তবয়স্ক নারী, যারা কোনো কারণে কখনো ঋতুস্রাব পায়নি। তাদের জন্যও ইদ্দতের সময় তিন মাস নির্ধারিত হয়েছে, ঠিক যেমন ঋতুবন্ধ নারীদের জন্য।" (তাফসির আস-সা’দি, পৃষ্ঠা ৮৭০)

শায়েখ আবদুর রহমান আস-সাদির বক্তব্য দ্বারা বুঝা গেলে ঋতুস্রাব আসেনি এমন ছোট মেয়েদেরও বিয়ে হতে পারে। এই আয়াতে তাদের তালাকপ্রাপ্তা হওয়ার পরে ইদ্দত কথা বলা হয়েছে। বিয়েই যদি না  হয় তাহরে তালাকা ও ইদ্দত কোত্থোকে আসবে? এটি ইঙ্গিত বহন করে যে, ইসলামে বিয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো বয়স নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি। দাম্পত্য জীবন পরিচালনার উপযোগী হলে ছোট ছেলে-মেয়েদেরও বিয়ে হতে পারে।

وقد تزوج النبي صلى الله عليه وسلم عائشة رضي الله عنها وهي بنت ست سنين ، وأُدخلت عليه وهي بنت تسع . رواه البخاري ( 4840 ) ومسلم ( 1422 ) .

মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আয়েশা (রাযি.)-কে ছয় বছর বয়সে বিবাহ করেন এবং নয় বছর বয়সে তাকে দাম্পত্য জীবনে গ্রহণ করেন। (সহিহ বুখারি: ৪৮৪০, সহিহ মুসলিম: ১৪২২)

ইমাম ইবনে কুদামা (রহ.) বলেন—

" فأما الإناث : فللأب تزويج ابنته البكر الصغيرة التي لم تبلغ تسع سنين بغير خلاف إذا وضعها في كفاءة . قال ابن المنذر : أجمع كل من نحفظ عنه من أهل العلم أن نكاح الأب ابنته الصغيرة جائز إذا زوجها من كفء ، يجوز له ذلك مع كراهتها وامتناعها " انتهى .

"যেখানে মেয়েদের বিয়ের বিষয়টি আসে, পিতা যদি উপযুক্ত পাত্র খুঁজে পান, তবে নয় বছর বয়সের নিচের কন্যা সন্তানকেও তিনি বিবাহ দিতে পারেন, এ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে কোনো মতভেদ নেই। ইবনে মুনযির (রহ.) বলেন: ‘আমরা যাদের থেকে জ্ঞান সংরক্ষণ করেছি, তারা সবাই একমত যে পিতা তার ছোট মেয়ের বিবাহ দিতে পারেন, যদি তিনি তার জন্য উপযুক্ত বর পান, যদিও সে কন্যা তা অপছন্দ করুক বা অস্বীকার করুক।’" (আল-মুগনি, ৭/৩৮৬)

অতএব, ইসলামে বিবাহের কোনো নির্দিষ্ট বয়স নেই, বরং এটি সামর্থ্য, সুস্থতা ও সামাজিক প্রেক্ষাপটের ওপর নির্ভরশীল।

ইসলামে ছেলের জন্য বিয়ের উপযুক্ত সময় হল, যখন সে দাম্পত্য জীবন পরিচালনার সক্ষমতা অর্জন করে। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই পর্যায়ে পৌঁছালে বিয়ে করার নির্দেশনা দিয়েছেন এবং এটি যে দৃষ্টি সংযত রাখা ও পবিত্রতা রক্ষার জন্য সহায়ক, তা ব্যাখ্যা করেছেন। সহিহ হাদিসে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন—

يا معشر الشباب من استطاع منكم الباءة فليتزوج، فإنه أغض للبصر وأحصن للفرج، ومن لم يستطع فعليه بالصوم فإنه له وجاء.

"হে যুবসমাজ! তোমাদের মধ্যে যার সামর্থ্য আছে, সে যেন বিবাহ করে, কারণ এটি দৃষ্টিকে অবনতি থেকে রক্ষা করে এবং লজ্জাস্থানের পবিত্রতা বজায় রাখে। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন রোজা রাখে, কারণ তা তার জন্য আত্মসংযমের ঢালস্বরূপ।" (বুখারি ও মুসলিম)

অর্থ সংকটের কারণে কেউ যদি বিয়ে করতে দেরি করে, তবে সে যেন চিন্তিত না হয়। কারণ, আল্লাহ তাআলা সেই ব্যক্তিকে নিজের অনুগ্রহে সম্পদশালী করবেন, যে বৈধ পথে পবিত্র জীবন যাপন করতে চায়। আল্লাহ তাআলা বলেন—

 وَأَنْكِحُوا الْأَيَامَى مِنْكُمْ وَالصَّالِحِينَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَإِمَائِكُمْ إِنْ يَكُونُوا فُقَرَاءَ يُغْنِهِمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ. [النور:32]

“আর তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করো এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণ, তাদেরও। তারা যদি গরিব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ তো প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।” (সূরা আন-নূর: ৩২)

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেছেন—

المجاهد في سبيل الله، والمكاتب الذي يريد الأداء، والناكح الذي يريد العفاف. رواه أحمد والنسائي والترمذي وابن ماجه

“তিন শ্রেণির লোকের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য নিশ্চিত: (১) আল্লাহর পথে জিহাদকারী, (২) মুক্তিপ্রাপ্ত দাস, যে মুক্তির জন্য চেষ্টা করছে, এবং (৩) সেই ব্যক্তি, যে নিজেকে পবিত্র রাখার জন্য বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চায়।” (তিরমিজি, নাসায়ি, ইবনে মাজাহ)

যেখানে মেয়েদের বিয়ের বিষয়টি আসে, ইসলাম এটিকে তখনই অনুমোদন করে যখন সে দাম্পত্য জীবন পরিচালনার সক্ষমতা অর্জন করে। তবে, সক্ষম হওয়ার আগেই বিয়ের চুক্তি করা বৈধ, তবে স্ত্রীকে স্বামীর কাছে হস্তান্তর করা যাবে না যতক্ষণ না সে দাম্পত্য জীবন পরিচালনার উপযুক্ত হয়।

সহিহ বুখারিতে উল্লেখ আছে যে, মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আয়েশা (রাযি.)-কে ছয় বছর বয়সে বিবাহ করেছিলেন এবং নয় বছর বয়সে তাকে দাম্পত্য জীবনে গ্রহণ করেছিলেন।

এছাড়া, যখন একজন উপযুক্ত পাত্র পাওয়া যায়, যার চরিত্র ও দ্বীনদারির ব্যাপারে সন্তুষ্ট হওয়া যায়, তখন মেয়ের অভিভাবকের উচিত দ্রুত তার বিবাহের ব্যবস্থা করা। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন—

إذا خطب إليكم من ترضون دينه وخلقه فزوجوه، إلا تفعلوه تكن فتنة في الأرض وفساد عريض. رواه الترمذي وغيره.

"যদি তোমাদের কাছে এমন ব্যক্তি প্রস্তাব পাঠায়, যার দ্বীন ও চরিত্র তোমরা পছন্দ করো, তাহলে তাকে বিয়ে দিয়ে দাও। যদি তা না করো, তবে পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা ও ব্যাপক বিপর্যয় সৃষ্টি হবে।" (তিরমিজি)

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ