|| হাসান আল মাহমুদ ||
আন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের আজ ৫৭ তম দিন চলছে। চলতি ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ্যঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার পতনের পর ৮ আগস্ট শপথ গ্রহণের মাধ্যমে মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ কত দিন হতে পারে? এ বিষয়ে এখনো কোনো দিন-তারিখ ঘোষণা হয়নি।
ইতিমধ্যে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আগামী ১৮ মাসের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনার কথা বলেছেন। আর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২৬ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে ঘোষণা দেন, সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য এবং ভোটার তালিকা প্রস্তুত হলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে।
এ বিষয়ে বিএনপিসহ রাজনৈতিকগুলো নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে। প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো অল্প সময়ের মধ্যে সেরে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনী সড়কে উঠতে পারে বলে মনে করে বিএনপি। এ ক্ষেত্রে লম্বা সময় দেওয়ার ব্যাপারে আপত্তি রয়েছে তাদের।
এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ ও নির্বাচনের দিন-তারিখ কবে হতে পারে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় দেশের ইসলামি দলেগুলোর নেতৃবৃন্দের কাছে।
আজ শুক্রবার (৪ অক্টোবর) ইসলামি দলগুলো ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ ও নির্বাচনের দিন-তারিখ’ বিষয়ে ভাবনা জানিয়েছে আওয়ার ইসলামকে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ ও নির্বাচন বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সংস্কারকে প্রাধান্য দেয়। দলটির মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুস আহমাদ মুঠোফোনে প্রতিবেদককে বলেন, আমরাতো বলে এসেছি সংস্কার আগে, নির্বাচন পরে। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন সম্ভব নয়।
সে সংস্কারের সময় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংস্কারের জন্য দিনক্ষণ নির্ধারণ করা যায় না, তবে সে সংস্কারটা অবশ্যই হতে হবে যৌক্তিক সময়ের ভেতরে। এজন্য যতদ্রুত সম্ভব সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দিলে ভালো হবে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র মহাসচিব ড. গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম বলেন, আমরা নির্বাচন পারলে আজকেই চাই। আমরাতো এক মাস যাবত বলেই আসছি নির্বাচন ঘোষণা করতে।
তিনি জানান, বিষয়টা হল সংবিধানে অন্তর্বর্তী সরকারের ফর্মূলা, টাইম-তারিখ ইত্যাদি নিয়ে কোনো রূপরেখা নেই। এখন একটা পরিস্থিতির মধ্যে আছে সরকার। এজন্য সরকার বারবার বলছে, কিছু সংস্কার দরকার। ভবিষ্যত সুরক্ষিত করার জন্যই তারা সংস্কারের দাবিটা ওঠাইছে এ সংস্কারের জন্য কিছু সময় দরকার। বিগত সরকারের লোক সব জায়গায় টেবিলে টেবিলে বসা। তাদের রদবদল করা দরকার। ফ্যাসিবাদী সরকারের এমন বহুত কিছু কাজ রয়েছে, যা ভবিষ্যতের জন্য হুমকি, তাই অন্তর্বর্তী সরকার সেসবের সংস্কার চেয়েছে। কিন্তু সে সময় কতদিন তা স্পষ্ট করছে না।
তিনি বলেন, সামনে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ রয়েছে। আমরা সেখানে সংস্কার শেষ করে নির্বাচন কবে দিতে পারবে তা নিশ্চিত করতে চাইবো।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন‘র নায়েবে আমীর মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কোনো সময় বেঁধে দেই নাই এ জন্য যে, রাষ্ট্রকে সংস্কার ও একটা শুদ্ধি অভিযানের জন্য একটু সময় দিতে হবে। আমরা যদি সময় বেঁধে দিই, তাহলে এ সময়ের মধ্যে তাঁরা সংস্কার কাজটা সম্পন্ন করতে পারবেন না।
তিনি বলেন, স্বৈরাচার পতনের পর যে জঞ্জাল দেশে সৃষ্টি হয়েছে সেসব দূর করার জন্য, সংস্কার করার জন্য কোনো দলীয় সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না বলে আমরা ধারণা করি। এজন্য, একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের পক্ষেই এটা সম্ভব হতে পারে।
তিনি জানান, প্রধান উদেষ্টার সঙ্গে যখন আমাদের সাক্ষাৎ হয়েছে, তখন আমরা বলেছি দ্রুত সংস্কার ও শুদ্ধি অভিযান করে অর্থ পাচারকারী, দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনা হোক। তারপর দেশে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হোক।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন বলেন, আমরা নির্বাচনের জন্য কোনো সময় নির্ধারণ করে দিচ্ছি না আপাতত। তবে, আগে সংস্কার হোক। যেসমস্ত সংস্কারগুলো জরুরি, সে সংস্কারগুলো করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দিবে এবং নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।
খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী জানান, আমরা একটা যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন চাচ্ছি।
তিনি বলেন, সংস্কারের জন্য যে কাজগুলো রয়েছে সেসব দেড় বছরের মধ্যে শেষ করে নির্বাচন দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
জমিয়তে উলামায়ে বাংলাদেশ’র যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য বেশি সময় দেয়াটা দেশের জন্য কল্যাণকর মনে করি না। আবার অন্যদিকে যেহেতু এটা একটা অনির্বাচিত সরকার, তাই যতদ্রুত সম্ভব সময়ে নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করাটা রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর বলে মনে করি।
তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার যেখানে প্রয়োজন তা করে শেষ করা এবং সংস্কারের নামে যেন লম্বা সময় ক্ষেপন করা না হয়। বিশেষভাবে নির্বাচন কমিশনকে খুবেই গুরুত্বের সাথে ঢেলে সাজানোর প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন তিনি।
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকার আওয়ামীলীগের পতনের পর দেশ সংকটে পড়েছে।এখন রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরে সংস্কারের প্রয়োজন পড়েছে। সংবিধানসহ পুরো রাষ্ট্রকে পুনর্গঠনের জন্য যেসব সংস্কার একান্ত প্রয়োজন, সেসব সংস্কার করে দ্রুত সময়ে নির্বাচন দেয়ার দাবি জানাই।
তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন দেয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময়-তারিখ ভাবছি না। অন্তর্বর্তী সরকার যেন দেশের উপকার হবে, কল্যাণ হবে এমন বিষয়গুলো সংস্কার করে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো ফ্যাসিবাদ-স্বৈরাচার আসতে না পারে।কল্যাণকামী সংস্কারগুলো করেই নির্বাচন দেয়া হোক বলে তিনি দাবি করেন।
এদিকে বাংলাদেশ জায়ামাতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান শুক্রবার (৪ অক্টোবর) দুপুরে চুয়াডাঙ্গা শহরের আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে জেলা জামায়াতের আয়োজিত রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেছেন, দেশ সংস্কারে যতটুকু সময় দরকার ততটুকু সময় অবশ্যই দেওয়া হবে। কিন্তু অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এটা চলতে পারে না।
তিনি বলেন, অতীতে দেখা গেছে, সময় লম্বা করতে করতে কেউ ক্ষমতায় থেকে দল গঠন করেছে অথবা সামরিক শাসন জারি করেছে। আমরা চাই প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।
হাআমা/