|| হাসান আল মাহমুদ ||
জমিয়েত উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সাবেক এমপি এ্যাডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী দলে ফিরতে চান বলে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
আজ রবিবার (৭ জুলাই ২০২৪) সন্ধায় আওয়ার ইসলামের সঙ্গে এক ফোনালাপ সাক্ষাৎকারে দলে ফেরার এ আগ্রহ প্রকাশ করেন মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী।
জমিয়ত থেকে চলে গেলেন, অন্য কোনো দলে ঢুকছেন কি না বা কোনো দল আপনাকে চাচ্ছে কিনা? প্রশ্নে সাবেক এই এমপি বলেন, অন্য কোনো দলে ঢুকার চিন্তা করছি না আমি। কে কতটুক বলবে জানি না। তবে আমার দৃষ্টিতে আমি সংগঠনের জন্য সর্বোচ্চ শ্রমদাতা ব্যক্তি। বিভিন্ন দল থেকে আমার কাছে প্রস্তাব এসেছে যাওয়ার জন্য, আমি সেসব প্রস্তাব তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছি।
‘বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা আমার বাসায় আসছেন, আমাকে তাদের দলে যাওয়ার জন্য দাওয়াত দিচ্ছেন। আমি তাদেরকে বলে দিয়েছি, অন্য কোনো দলে যাওয়ার চিন্তাভাবনা নেই। রাজনীতিই যদি করি, তাহলে জমিয়তই করব।’
আরও পড়ুন : আকাবির চর্চা মানে ইসলাম চর্চা : মুফতি মোহাম্মদ আলী
বর্তমানে আপনি শিক্ষকতা, প্রতিষ্ঠান পরিচালনা, মানবিক সেবাসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। রাজনীতি হতে দূরে থেকে আপিন কেমন আছেন? জানতে চাইলে সাবেক এই জমিয়ত নেতা বলেন, ‘রাজনীতি হতে দূরে থেকে ভালো থাকার কথা না। কারণ, আমার রাজনীতি আমার আশ্টেপৃষ্ঠে জড়িত। রাজনীতি ছাড়া আমার কোনো পেশাই নাই বলতে গেলে। যদিও পেশাগতাবে শিক্ষকতা বা মাদরাসা পরিচালনা, ওকালতি করছি কিন্তু এগুলো আমার মূখ্য না। আমার মূখ্য কাজ হলো আমার নির্বাচানী এলাকার মানুষের জন্য কাজ করা। ‘
জমিয়তে ফেরার জন্য জমিয়তের নেতৃবৃন্দ চাচ্ছে কি না? বা আপনি আগ্রহী কি না প্রশ্নে মাওলানা শাহীনুর পাশা বলেন, ‘এরকম ব্যাপার কিছু না। আমি জাস্ট দলে থেকে আমার দায়িত্ব পালন করেছি। আমার অভিমান ছিল। দলের জন্য আমার ত্যাগ দল কৃতীত্ব দিলো না। এখন এটা নেতৃবৃন্দের বিষয়, তারা আমাকে নেন কি না। জমিয়ত আমাকে চাইলে আমি ফিরতে আগ্রহী।
এদিকে মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরীকে জমিয়তে ফেরানোর কোনো সম্ভাবনা আছে কি না ইত্যাদি বিষয়ে দলটির মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী’র কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি আওয়ার ইসলামকে বলেন, 'এটা তো কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত। প্রথমে শাহীনুর পাশা সাহেবের পদ স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে তা কার্যনির্বাহী ফোরামে চূড়ান্তরূপে স্থায়ী ভাবে অব্যাহতি প্রদানের সিদ্ধান্তে পরিণত করা হয়েছে।’
তিনি ফিরতে চাইলে আপনারা নিবেন কি না? প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তিনি ফিরতে চাইলে সে বিষয়ে এককভাবে আমার বলার কিছু নাই। দলীয় একটা গঠনতন্ত্র আছে, দলের কিছু সিস্টেম আছে। দলের কার্যনির্বাহী যদি মনে করে তিনি ফিরুক, তাহলে ফিরবেন। তা কার্যনির্বাহী ফোরামের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে।’
যে কারণে মাওলানা শাহীনুর পাশাকে দল থেকে স্থগিত করা হয়েছে সে কারণ যদি রুজু করেন বা দুঃখপ্রকাশ করেন, তাহলে আপনারা নিবেন কি না? প্রশ্ন রাখলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে হ্যাঁ বা না কোনো কিছু বলার অধিকার আমি রাখি না। এ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার ক্ষমতা আমার নেই।
তবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, যেভাবে আপনি বললেন, সে আঙ্গিকে যদি উনার পক্ষ থেকে কোনো দরখাস্ত আসে, তাহলে সেটা কার্যনির্বাহী ফোরাম দেখবে।’
উল্লেখ্য, মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী ১৯৯১ সালে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। তিনি ছিলেন ছাত্র জমিয়তের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক। তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও সুনামগঞ্জ জেলা সভাপতি ছিলেন।
২০০৫ সালের সুনামগঞ্জ-৩ আসনের উপনির্বাচনে তিনি চারদলীয় জোট প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এছাড়া, তিনি সিলেট থেকে প্রকাশিত সাহিত্য সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকা মাসিক তৌহিদী পরিক্রমা’র সম্পাদক এবং জামিয়া দারুল কুরআন সিলেটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক।
২৩ নভেম্বর ২০২৩ সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন মাওলানা শাহীনুর পাশা। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সঙ্গে দেখা করার পর ২৪ নভেম্বর দলীয় পদ স্থগিত করার ঘোষণা দেয় জমিয়ত।
দল থেকে স্থগিত করার কারণ বিষয়ে সভাপতি মাওলানা শায়খ জিয়া উদ্দিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিজে দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যকলাপের পাশাপাশি দলের অন্যান্য নেতাদের একই রকম কর্মকাণ্ডে প্ররোচিত করার অপরাধে অ্যাডভোকেট শাহীনুর পাশা চৌধুরীর প্রাথমিক সদস্যপদসহ দলীয় সব পদ স্থগিত করা হয়েছে।
পরে মাওলানা শাহীনুর রহমান পাশা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জানান, এটা তার ব্যক্তিগত সাক্ষাৎ ছিল, দলীয় নয়।
হাআমা/