|| হাসান আল মাহমুদ ||
একজন মুহাদ্দিস একাধিক মাদরাসায় পড়ালে দোষের কিছু আছে বলে মনে করছেন না দেশের বিশিষ্ট আলেম সাংবাদিক, লেখক, মুহাদ্দিস মাওলানা লিয়াকত আলী। তিনি বলেন, একজন মুহাদ্দিস একাধিক মাদরাসায় পড়ালে দোষের কিছু আছে বলে আমি মনে করি না’।
পড়ুন : একাধিক মাদরাসায় হাদিস পড়ানো টিউশনি মাস্টারের মত : মুফতী জাফর আহমাদ
পড়ুন : ‘একজন একাধিক মাদরাসায় বুখারি পড়ানোর কারণে নতুন শাইখুল হাদিস তৈরী হচ্ছে না’
তার কী কারণ? সে প্রসেঙ্গ বলেন, ‘ইলমের দাবিতো হচ্ছে ইলমের প্রসার ঘটানো। একজন মুহাদ্দিস বা একজন আলেম যে ইলম হাসিল করেছেন, সে ইলম তিনি ছড়াবেন, প্রসার করবেন এটাইতো তার কাছে দাবি। এজন্য একজন মুহাদ্দিস যদি একাধিক মাদরাসায় পড়ান, তাহলে এটাতো ইলমি খেদমত হবে। ইলমের প্রসার হল, ওসায়াত হল। এতে দোষের কি আছে!’
আজ ১৬ জুন ২০২৪ রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় মিরপুরে দারুর রাশাদ মাদরাসায় আওয়ার ইসলামের সঙ্গে এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে মাওলানা লিয়াকত আলী এই কথা বলেন।
মাওলানা লিয়াকত আলী মনে করেন, ‘বড় বড় আলেম, তারা বিভিন্ন জায়গায় ওয়াজ-মাহফিল করেন, নসিহত করেন। এটাওতো তার ইলমের প্রসার। সুতরাং একজন বড় মুহাদ্দিস বা আলেম তিনি যদি একাধিক মাদরাসায় দরস দেন, তাহলে বেশি সংখ্যক ছাত্র তার থেকে উপকৃত হতে পারল। তাঁর থেকে শিখতে পারল, জানতে পারল। এজন্য, এতে কোনো দোষ বা মন্দ আছে বলে আমি মনে করি না’।
একজন মুহাদ্দিস/শাইখুল হাদিসকে একাধিক মাদরাসায় হাদিস পড়াতে হয় কী কারণে? এমন প্রশ্ন রাখলে তিনি বলেন, ‘প্রথমত আমাদের দেশে এখন অনেকগুলো দাওরায়ে হাদিস মাদরাসা। হাইআতুল উলয়ায় যে পরীক্ষা হল, সেখানে প্রায় বারো শতের মত মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রী দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষা দিল। কিন্তু এ পরিমান মুহাদ্দিস/শাইখুল হাদিস আমাদের দেশে এখনো তৈরী হয় নাই। সেজন্য, একজন মুহাদ্দিসকে একাধিক মাদরাসায় পড়াতে হয়।
এসময় তিনি নিজেই প্রশ্ন তৈরী করে বলেন, ‘প্রশ্ন হতে পারে এতগুলো মাদরাসায় দাওরা খোলার কী দরকার? এ প্রশ্নের দুইটা দিক আছে। এক- শহর এলাকায় আসলেই অনেক মাদরাসায় দাওরা না খুললেও চলতো। সেখানে প্রয়োজন পরিমান ছাত্র নাই, বরং অল্পসংখ্যক ছাত্র দিয়েই তারা দাওরায়ে হাদিস খুলেন। এভাবে না খুলে তারা পার্শ্বস্থ বড় মাদরাসায় দাওরার ছাত্র দিয়ে দিতে পারত ’।
‘কিন্তু গ্রামে বিশেষ করে, অল্পসংখ্যক ছাত্র দিয়েও দাওরা খোলার প্রয়োজন পড়ে। কারণ, সেখানে দাওরায়ে হাদিস মাদরাসা কাছে নাই। অনেক দূরে যেতে হয়। ছাত্রদের কষ্ট হয়। সেজন্য গ্রামের মাদরাসাগুলো অল্প ছাত্র দিয়ে হলেও তারা দাওরা খুলতে বাধ্য। এই মাদরাসাগুলোতে দাওরায়ে হাদিস টিকিয়ে রাখার জন্য একজন ভালো মুহাদ্দিস/শাইখুল হাদিসের দরসের প্রয়োজন পড়ে। সেই কারণে ঢাকা শহর থেকে অনেক বড় বড় আলেম গ্রামের কোনো কোনো মাদরাসায় অল্প দিনের জন্য হলেও দাওরায়ে হাদিসের দরসে শুধু এই খাতিরে যান যে, ওখানে দাওরায়ে হাদিসের জামাতটা টিকে থাকুক।’-যুক্ত করেন এই মুহাদ্দিস আলেম।
মাওলানা লিয়াকত আলীর কাছে ‘যৌক্তিক দৃষ্টান্ত’ আছে বলে তিনি উল্লেখ করে বলেন, ‘এর নজির আছে। একবার হাটহাজারী মাদরাসায় দাওরায়ে হাদিস চলবে কি না এ নিয়ে যখন একটা সমস্যা হয়েছিল, তখন হজরত মাওলানা ইব্রাহিম বলিয়াভী রহ. কে দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে পাঠানো হয়েছিল, হাটহাজারীতে যেন দাওরায়ে হাদিস টিকে থাকে। এজন্য তিনি কয়েক বছর ছিলেন। হজরত ইব্রাহিম বলিয়াভী উপমহাদেশের সেরা মুহাদ্দিসদের একজন। তাঁর একজন ছাত্র হচ্ছেন ফরিদাবাদ মাদরাসার সাবেক শাইখুল হাদিস হজরত মাওলানা আব্দুল হাফিজ সাহেব রহ.। ওই যামানায় তিনি কয়েক বছর যাবত ছিলেন হাটহাজারীতে যেন দাওরায়ে হাদিস স্থিতিশীল হয়। সুতরাং এই নজির আমাদের সামনে আছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের গ্রামে-গঞ্জে এমন অনেক মাদরাসা আছে, সেখানে দাওরা খুলতে বাধ্য হন তারা, তখন দাওরায়ে হাদিসকে স্থিতিশীল করার জন্য নামকরা মুহাদ্দিসদের নেন। তাঁরা অল্প সময়ের জন্য যান ঠিকই, হয়তো মাসে দুই দিন, সপ্তাহে একদিন বা সারা বছরে কয়েকদিন। তাঁরা শুধুমাত্র এই খাতিরে যান যে, যেন দাওরা ক্লাসটি সেখানে টিকে থাকে। এটা তাদের একটা বাস্তবতা।’
তবে তিনি মনে করেন, ‘আর ঢাকার শহরে অনেক মাদরাসা, যেখানে দাওরা না খুললেও চলতো, কিন্তু তারা নিজেদের একটা প্রয়োজন মনে করে খুলেন। তাদের প্রয়োজন থাকলে ঠিক আছে। কিন্তু অনক ক্ষেত্রে তারা একটু বেশি করেন, এটাও ঠিক। কিন্তু তাই বলে সব মাদরাসাকে এক কাতারে ফেলিয়ে একটা ভিন্ন ট্যাগ দেয়া ঠিক না।’
সাক্ষাৎকারের বাকি অংশ আসবে ইনশাআল্লাহ......
হাআমা/