|| হাসান আল মাহমুদ | |
কওমি শিক্ষার্থীদের প্রতিভা বিকাশের জন্য মাদরাসাগুলোতে ‘ছাত্র কাফেলা বা ছাত্র সংসদ’ নামে স্বতন্ত্র বিভাগ রয়েছে। কাফেলার উদ্যোগে বছর জুড়ে বক্তৃতা, বিতর্ক, প্রতিযোগিতা, দেয়ালিকা প্রণয়নসহ নানা শিল্প-সংস্কৃতিমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়ে থাকে।
মাদরাসার মুহতামিম বা পরিচালকের অনুমোদনে কোথাও শিক্ষকদের থেকে একজনকে বানানো হয় দায়িত্বশীল সভাপতি, কোথাও ছাত্রদের থেকে সভাপতি-সেক্রেটারি নির্ধারণ করে কমিটি গঠন করে পরিচালিত হয়ে থাকে ছাত্র কাফেলা।
বছর জুড়ে কী কী আয়োজন করে থাকে, কীভাবে নানা আয়োজন বাস্তবায়ন করে থাকে সেসব জানতে ছাত্র কাফেলা বা ছাত্র সংসদের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। আজ থাকছে সাভারের ঐতিহ্যবাহী জামিয়া সিদ্দীকিয়া যাদুরচর মাদরাসা'র ছাত্র সংসদ ‘আমরা এক কাফেলা’ র গল্প।
গল্প জানাচ্ছেন কাফেলাটির সাত বছরের সভাপতি ও প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র মুহাদ্দিস মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী।
তিনি জানান, আমাদের যাদুরচর মাদরাসার সংবিধান অনুযায়ী ছাত্র কাফেলার সভাপতি ও সহসভাপতি পদে উস্তাদরা দায়িত্ব পালন করেন। সাধারণ সম্পাদক সহ বাকি পদগুলোতে ছাত্ররা দায়িত্ব পালন করে থাকে’।
‘প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম ও ছাত্র কাফেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক হাফেজ মাওলানা আলী আকবর কাসেমীর পরামর্শে ছাত্র কাফেলা বছর জুড়েই বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। নিয়মিত সাপ্তাহিক বক্তৃতা সেমিনার ও বিষয় ভিত্তিক আরবী বাংলা দেয়ালিকা প্রকাশ করা হয়। পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে সীরাত অধ্যয়ন ও রচনা প্রতিযোগিতা, হামদ-নাত, হদর ও কুইজ প্রতিযোগিতা, কবিতা আবৃত্তি, সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা সহ মুগ্ধকর বিতর্ক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। লেখালেখির ময়দানে ছাত্রদেরকে দক্ষ করে তুলতে বছরে কমপক্ষে একবার দেশসেরা লেখকদের উপস্থিতিতে লেখালেখির বুনিয়াদি কর্মশালার আয়োজন করা হয়। ছাত্রদের আত্মশুদ্ধি ও নৈতিক উৎকর্ষ সাধনে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ এবং ছাত্র কাফেলার সমন্বয়ে মাসে দুবার তরবিয়তী মজলিস এবং একবার ইসলাহী মজলিসের আয়োজন করা হয়।’- উল্লেখ করেন তিনি।
মুফতি আব্দুল্লাহ ফিরোজী আরও বলেন, ‘যাদুরচর মাদরাসার ছাত্র কাফেলার উদ্যোগে বিগ বাজেটের বৃহৎ অনুষ্ঠান হয় বছরের শেষে বার্ষিক বক্তৃতা সেমিনারকে কেন্দ্র করে। সেমিনারে আরবী ও বাংলা বিভাগে বর্ষসেরা বক্তা নির্বাচন করে মানসম্পন্ন পুরস্কার দেওয়া হয়। হিফজুল কোরআন ও বিষয় ভিত্তিক হিফজুল হাদীস প্রতিযোগিতা এই সেমিনারের উপভোগ্য একটি পর্ব। টান টান উত্তেজনায় অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের আকর্ষণীয় পুরস্কার দেওয়া হয়। রোজনামচা লেখা এবং দেয়ালিকার সেরা ছাত্র লেখককে পুরস্কৃত করা হয়। প্রতি বছর বার্ষিক বক্তৃতা সেমিনারে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে লেখক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সম্মাননা দেওয়া হয়। ধর্মীয় শিক্ষার প্রচার প্রসারে অবদান রাখায় বয়োজেষ্ঠ বরেণ্য আলেমদেরকে দেওয়া হয় বিশেষ সম্মাননা’।
তিনি বলেন, ‘যাদুরচর মাদরাসার নাজাফাত তথা পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা এবং সাজসজ্জার বিষয়টিও ছাত্র কাফেলা দেখাশুনা করে। বাগান পরিচর্যা করে। রয়েছে সমৃদ্ধ একটি পাঠাগার। যেখান থেকে ছাত্ররা প্রয়োজনীয় বই সংগ্রহ ও অধ্যয়ন করতে পারে।
এসময় তিনি তথ্য দেন, ‘ছাত্র কাফেলার বাৎসরিক ব্যয় প্রায় তিন লক্ষ টাকা। বছরের শুরুতে প্রত্যেক ছাত্রের কাছ থেকে একশত টাকা ছাত্র কাফেলার জন্য নেওয়া হয়। এখান থেকে প্রায় এক লক্ষ টাকা পাওয়া যায়। বাকি টাকা বছরের বিভিন্ন সময়ে আয়োজিত অনুষ্ঠান উপলক্ষে উস্তাদ ছাত্র ও সুহৃদদের থেকে ডোনেশন বাবদ পাওয়া যায়’।
হাআমা/