|| হাসান আল মাহমুদ ||
সম্প্রতি একুশে বইমেলা থেকে তিশা-মুশতাক দম্পতিকে দর্শনার্থীরা তাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, ‘তিশার ভালোবাসা’ নামে রাজধানীর মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের (গভর্নিং বডি) সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদ একটি বই প্রকাশ করেছে এবারের বইমেলায়। বইয়ের লেখক হিসাবে নিজ স্ত্রীকে নিয়ে মেলায় প্রবেশ করলে ‘ভুয়া ভুয়া’ শ্লোগান তুলে তাড়িয়ে দেয় ওই দম্পতিকে।
কেন সমালোচিত তিশা-মুশতাক?
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিশাকে নিয়ে ষাটোর্ধ্ব বয়সী খন্দকার মুশতাকের নানা অশোভন ভিডিও পোস্টের কারণে তরুণ সমাজের মাঝে পূর্ব থেকেই সমালোচিত তারা। এর আগে ২০২৩ সালের ১৬ আগস্ট প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, ‘আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী তিশাকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় রাজধানীর মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের (গভর্নিং বডি) সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদের আগাম জামিন আবেদন ফেরত দিয়ে খন্দকার মুশতাককে ‘আপনি কাজটি নৈতিকভাবে ঠিক করেননি’ বলে জানায় হাইকোর্ট।
ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির দাতা সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদের বিরুদ্ধে ১ আগস্ট ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮-এ নালিশি মামলা করেন শিক্ষার্থীর বাবা। মামলায় ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদীর বিরুদ্ধে।
এ ঘটনার পর তিশা-মুশতাক অন্তরালে থাকে দীর্ঘদিন। তারপর ২০২৪ বইমেলায় ‘তিশার ভালোবাসা’ নামে অতীত প্রেমকার্জকলাপ নিয়ে বই প্রকাশ করে। এছাড়া, সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অফলাইনে তাদের অশালীন কার্জকলাপ নিয়ে সমালোচনা করতে দেখা গেছে।
বিশিষ্ট সাংবাদিক, সমালোচক, লেখক মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ লিখেন, ‘গণমানুষের কিংবা উৎসুক যুবক শ্রেণির অপছন্দ-প্রকাশক প্রতিক্রিয়া সব সময় সমর্থনযোগ্য হয় না। কখনো কখনো দৃষ্টিকটু ও অস্বস্তিকর হয়ে যায়।
কিন্তু মোশতাক মিয়া যে প্রক্রিয়ায় ঢাকার একটি স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থানীয় ও দলীয় প্রভাব নিয়ে গভর্নিং বডির মেম্বার হয়ে, প্রিন্সিপালের সহযোগিতা নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী অল্প বয়সী এক তরুণীকে টার্গেট করে 'ফুসলিয়ে' নিজের কাছে নিয়ে যায়, এরপর কিছুদিন 'পালিয়ে' থাকে, বিয়ের কথা প্রকাশ করে, মামলা-মোকদ্দমা ফেস করতে হয়- এসব কিছু কোনো ভালো এবং সহন ও গ্রহণযোগ্য নজির নয়। এই গোটা প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত অপছন্দনীয় এবং প্রতিবাদ ও প্রতিরোধযোগ্য।
এরপর বিয়ে সম্পন্ন ও বিয়ের খবর প্রকাশ হওয়ার পর থেকে সামাজিক মাধ্যমে আদিখ্যেতা, নানারকম অরুচিকর কথাবার্তার প্রকাশ, জনপরিসরে গর্বের সঙ্গে তার এই পটানো পর্ব ও বিয়ের পর্ব নিয়ে গল্প করা, বই লেখা এসব ছিল আরও বিরক্তিকর, এবং শালীন সামাজিক মূল্যবোধের জন্য ক্ষতিকর।
বেশি বয়সে তরুণী বিয়ে কিংবা টাকার জোরে বিয়ে- এ দুটো ইস্যু খুব বড় নয় এখানে।
টাকা, প্রভাব, শক্তি, ক্ষমতা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিচালনা বোর্ডের অভিভাবক হয়ে সেখানকার একজন অল্প বয়সি তরুণীকে তার অভিভাবকদের আড়ালে পটানো ও ছলচাতুরি করে বিয়ের আওতায় নিয়ে আসা-এই প্রবণতাকে উৎসাহিত করা উচিত না।
তবে বিয়ে এবং বিয়ে পরবর্তী 'সাধারণ ঘরোয়া জীবন' অবশ্যই মেনে নেওয়ার বিষয়; যতক্ষণ পর্যন্ত না ওই জীবন নৈতিকতাহীন বালখিল্যতা প্রচারের বাহন হয়ে ওঠে।’
খুজিস্তা নূর-ই-নাহারিন নামে একজন লেখক লিখেন, ‘দেশের মানুষ কি সব পাগল হয়ে যাচ্ছে! সস্তা জনপ্রিয়তার লোভে যেনতেন উপায়ে ভাইরাল হতে চাচ্ছে। এদের মূল পুঁজি হচ্ছে নির্লজ্জতা। যৌনতার সুড়সুড়ি দিয়ে ভাইরাল হওয়ার ক্ষেত্রে বুড়ো ভামও পিছিয়ে নেই। কচি মেয়েকে কোলের উপর বসিয়ে গভীর রাতে লাইভের একটাই উদ্দেশ্য ভাইরাল হওয়া। এরা কি কমেন্ট পড়ে না, নাকি ভাবে যেভাবেই হোক ভিউ বাড়ুক।
অভিনেতা রাসেল মিয়া লিখেন, ‘এই দম্পতির ভিডিও সামনে আসলে, সমাজের দায়িত্ববান বাবা, মায়েরা নিজেদের স্কুল/কলেজে পড়ুয়া মেয়েদের নিয়ে হিমশিম খেয়ে মুহূর্তেই চিন্তিত হয়ে পড়ছেন! এই দম্পতির ভিডিও দেখে দেখে বহু মেয়েরা ভাইরাল হওয়ার নেশায় এই ধরনের সামাজিক অগ্রহণযোগ্য ঘটনা ঘটাতে আগ্রহী হয়ে উঠছে! তিশা এবং মোস্তাক সাহেব এর এই ঘটনার জন্য আজকের সমাজের বাবা-মায়েরা প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেমেয়েদের সামনে মুহূর্তে, মুহূর্তে চক্ষু লজ্জায় পড়তে হচ্ছে! তিশা এবং মোস্তাক সাহেব কে আমি অনুরোধ করবো, আপনারা সংসার করুন, আপনারা আপনাদেরকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করুন, দয়া করে মিডিয়ার সামনে এসে হৈচৈ করে নিজেদেরকে এখানে সাধু প্রমান করার কিছুই নেই!’
কেএল/