রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ।। ৭ পৌষ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬


উল্লেখযোগ্য ফতোয়া বিভাগগুলোর ওয়েবসাইট নাই কেন


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

এদেশে দ্বীনের আলো বিলাতে এবং মানুষের মাঝে ইসলামের চর্চাকে সমৃদ্ধ করতে যুগ যুগ ধরে কাজ করছে কওমি মাদরাসাগুলো। মুসলিম জীবনের নানা বিষয়ের সমাধানের জন্য এসব মাদরাসায় রয়েছে স্বতন্ত্র গবেষণা বিভাগ। যেগুলো পরিচিত ‘ফতোয়া বিভাগ’ নামে। যুগ ও সময়ের চাহিদা পূরণে এ বিভাগে সমাধান হওয়া মাসয়ালা-মাসায়েল অফলাইনের পাশাপাশি এখন অনলাইনে মানুষ পেতে চায়। কিন্তু কী কারণে ঐতিহ্যবাহী এসব প্রতিষ্ঠান এদিক দিয়ে বহির্বিশ্বের তুলনায় এখনো পিছিয়ে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন আওয়ার ইসলামের চিফ রিপোর্টার হাসান আল মাহমুদ। তার ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের আজ থাকছে ৫ম পর্ব-

(প্রথম পর্বের লিঙ্ক-  তথ্য প্রযুক্তিতে এখনো পিছিয়ে বাংলাদেশের ফতোয়া বিভাগগুলো!)
(দ্বিতীয় পর্বের লিঙ্ক-  ফতোয়া বিভাগগুলোর স্বতন্ত্র ওয়েবসাইট থাকা কেন প্রয়োজন)
(তৃতীয় পর্বের লিঙ্ক-  ফতোয়া বিভাগগুলোতে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার কেন প্রয়োজন)
(চতুর্থ পর্বের লিঙ্ক- ফতোয়া বিভাগে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের কয়েকটি দিক)


৪র্থ পর্বের পর থেকে...

ঢাকার মিরপুর-১৪ অবস্থিত জামেউল মাদরাসার ফতোয়া বিভাগের নির্ভরযোগ্যতার সুখ্যাতি রয়েছে বাংলাদেশে। মাদরাসাটির মুহতামিম মুফতী আবুল বাশার নো’মানী’র সঙ্গে আওয়ার ইসলামের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। ফতোয়া বিভাগে তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োজনয়ীতা আছে কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ফতোয়া বিভাগগুলোতে তথ্যপ্রযুক্তির যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমি মনে করি।’

এই সময় তিনি কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘প্রযুক্তি ব্যবহারে আমাদের দুর্বলতা, যেহেনী ওসায়া’ত তথা মানসিক ও চিন্তার প্রশস্ততা এখনো এমন পরিমানে আসেনি, এর জন্যও কারণ আছে। অন্যতম কারণ হলো, প্রযুক্তি ব্যবহারের পিছনে অতিরিক্ত যে খরচ হয়, সেটাতো আছেই, তাছাড়া আমাদের ওই পরিমান জনবলও নেই। আার ব্যবহার করার উপযুক্ত লোকও নেই। এ সব মিলিয়ে আমরা এখনো গতানুগদিক বিষয়কে ছেড়ে নতুন করে কিছু অবলম্বন করা যুগের সাথে যুগের চাহিদা, সহজকরণ, সুবিধাকরণ ব্যাপারগুলোতে আমরা একটু পিছিয়ে আছে।’ 

তবে এই বিজ্ঞ আলেম ও দক্ষ পরিচালক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের উপকারিতা প্রসঙ্গে উদাহরণ টেনে এই প্রতিদেককে লক্ষ করে বলেন, ‘যেমন আপনার সাথে মোবাইলে কথা বলছি। যদি এ মোবাইলটা না হত, তাহলে আপনাকে আমার মতামত নেওয়ার জন্য আসতে হত। অথবা আমার প্রয়োজনে আপনার কাছে যেতে হত। এই যে একটা সময়, কষ্ট-খরচ, এটা কিন্তু মোবাইল থাকায় সহজ হয়ে গেছে।’ 
 
জামেউল উলুম মাদরাসার ফতোয়া বিভাগে ওয়েববসাইট নাই কেন? এমন প্রশ্ন রাখলে তিনি জানান,  ‘আমরা তো এখনো ওভাবে সবকিছু করা বা করে ওঠতে পারার সক্ষমতা নিতে পারি না। যা চাই তাই করা সম্ভব না। যেহেতু আমাদের আয় ও ব্যয়ের একটা লিমিটেশন আছে। সীমাবদ্ধতা আছে। এর বাইরে যেতে হলে আমাদেরকে খুব চিন্তা করতে হয়। আমরা খুব অল্প সময়ের ভিতর ইনশাআল্লাহ দারুল ইফতায় স্বতন্ত্র ওয়েবসাইটের বিষয়টাকে নজরে আনতেছি। কথাবার্তা চলছে। ইনশাআল্লাহ হয়ে যাবে’ বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।

এ ব্যাপারে তিনি আওয়ার ইসলামের মাধ্যমে অভিজ্ঞ ও দক্ষ ওয়েবসাইট নির্মাতার খোঁজ জানাতে অনুরোধও করেছেন। 

ঢাকার চকবাজার বড়কাটারায় অবস্থিত জামিয়া আশরাফুল উলুম বড়কাটারা মাদরাসাটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন মাদরাসা। এখানের ‘দারুল ইফতা’ দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়া বিভাগ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। মাদরাসাটির বর্তমান মুহতামিম মুফতী সাইফুল ইসলাম এর সঙ্গে আওয়ার ইসলামের যোগাযোগ করা হয়। এই সময় তাঁকে ‘ফতোয়া বিভাগে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ও এর জন্য স্বতন্ত্র ওয়েবসাইটের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু?’ প্রশ্ন রাখলে তিনি ‘ফতোয়া বিভাগগুলোতে তথ্য প্রযুক্তি ও স্বতন্ত্র ওয়েবসাইটের প্রয়োজন অবশ্যই আছে’ বলে উল্লেখ করেন। ‘বাকি এর উপর নির্ভরশীলতাও ঠিক না’ বলে তিনি মন্তব্যও করেন। 

তার কারণ কী হতে পারে? প্রশ্ন রাখলে তিনি জানান, “যেদিন আমাদের বাংলাদেশে সচিবালয়ে ফেসবুকসহ ইন্টারনেটের নানা সাইটে তথ্য আদান-প্রদানের ব্যবহারের জন্য নোটিশ দিলো সরকার, সে একই দিনের একই পত্রিকার শেষ পাতায় ছিল, ‘জার্মান সরকার রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদান-প্রদান ইত্যাদি ডাটা যেন প্রিন্টেও প্রচার করে ও সংরক্ষণ করে” মর্মে নির্দেশনা দেয়।”

তিনি জানান, ‘জার্মান সরকার ওয়েবসাইট বা নেটের উপর র্নিরশীলতা না করতে নোটিশ প্রদান করে। কারণ, তা যে কোনো সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়ে বন্ধ ও অকেজো হয়ে যেতে পারে। বা তথ্য হারিয়ে যেতে পারে।’

তিনি বলেন, “এজন্য যারা ওয়েবসাইট খুলেছেন বা খুলবেন তাদের কাছে আমি অনুরোধ করব, ‘ফতোয়ার মূলকপি যেন অবশ্যই রেজিষ্টার করে হার্ড কপি রাখা হয়। শুধু সাইটে যেন না দেয়া হয়।”

ফতোয়া বিভাগের জন্য স্বতন্ত্র ওয়েবসাইটের উপকারিতা এবং সাইটে মাসয়ালা পাবলিশের সম্পর্কে এই বিজ্ঞ আলেম বলেন, ‘ওয়েসাইট থাকলে এর দ্বারা মানুষের ফায়দাও হয়। দরকারি জিনিসও বটে। এক্ষেত্রে যারা লিখবে তা যেন অবশ্যই সঠিক হয় এবং সকল ধরণের যাচাইবাছাই শেষে যেন পাবলিশ করে। আমাদের মূলধারার জামিয়া যেমন দারুল উলুম দেওবন্দ, বাংলাদেশের হাটহাজারী, মারকাযুদ্দাওয়া, বসুন্ধরা ফতোয়ার সাথে যেন অবশ্যই সাংঘর্ষিক না হয়।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে তো ফতোয়ার ভাষা জানে না, কিন্তু ফতোয়া লিখে দেয়। এমন বদহজম যেন না হয়।’ 

পড়ুনপুলিশ সদস্যদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন কওমি পড়ুয়া মাওলানা মুজাহিদুল ইসলাম

বড়কাটারা মাদরাসার ফতোয়া বিভাগের ওয়েবসাইট নাই কেন? প্রশ্ন রাখলে তিনি প্রতিদেককে উদ্দেশ করে জানান, ‘আপনি যখন আমার সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলছেন, তখন তার আগে আমরা আমাদের মাদরাসা পরীক্ষার রেজাল্ট ওয়েবসাইটে দেয়ার জন্য ওয়েবসাইটে খুলব কি না বিষয়ে পরামর্শ করেছি।’

তিনি বলেন, ‘ আমাদের পারিপাশির্^ক সমস্যার কারণে সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হচ্ছিল। অবশেষে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা খুব শিগগির ওয়েবসাইট খুলব। আর এর জন্য আমরা প্রয়োজনীয় কাজ গুছিয়ে নিচ্ছি। আমাদের প্রস্তুতিও চলছে। আমরা ৫টি কম্পিউটার কিনেছি। দীর্ঘ বছরের জমানো সকল ফতোয়াগুলো আমরা টাইপ করে নিচ্ছি। যাতে করে, সাইট খোলার সঙ্গে সঙ্গে মাসয়ালাগুলো পালিশ করা যায়।’

ফতোয়া বিভাগের ওয়েসাইটের প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে কথা হয় সাভারের হেমায়েতপুরে অবস্থিত জামিয়া সিদ্দীকিয়া যাদুরচর মাদরাসার মুহতামিম হাফেজ মাওলানা আলী আকবর কাসেমী’র সঙ্গেও। 

সাভারের শীর্ষ মাদরাসা হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে এই মাদরাসাকে। এই মাদরাসাতেও খোলা হয়েছে দাওরায়ে হাদিসের পরে তাখাচ্ছুছ বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ‘ফতোয়া বিভাগ’ও। নতুন এই বিভাগটির জন্য ওয়েবসাইটের কী পরিকল্পনা রয়েছে? জানতে চাইলে মাদরাসাটির মুহতামিম হাফেজ মাওলানা আলী আকবর কাসেমী আওয়ার ইসলামকে বলেন,  ‘ফতোয়া বিভাগের জন্য মানসম্পন্ন একটি ওয়েবসাইট থাকা খুবই জরুরি মনে করি। ওয়েবসাইট থাকলে বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে  যে কারোর জন্য জীবন ঘনিষ্ঠ ধর্মীয় বিষয় জানা সহজ হয়। আমাদের যাদুরচর মাদরাসায় ফতোয়া বিভাগের (দুই বছর মেয়াদী) কার্যক্রম মাত্র দুই বছর আগে শুরু করা হয়েছে। ফতোয়া বিভাগের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ কিতাবের ব্যবস্থা করা ব্যয়বহুল ও চ্যালেঞ্জিং একটি বিষয়। বিগত দিনে ফতোয়া বিভাগের জন্য বাজেটকৃত অর্থের পুরোটাই কিতাব সংগ্রহের পিছনে ব্যয় হয়েছে। ওয়েবসাইট তৈরির পিছনে আমরা মনোনিবেশ করতে পারিনি।’

এই সময় তিনি ওয়েবসাইট খোলার বিষয়ে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘আমাদের মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মুফতি আব্দুল্লাহ ফিরোজীসহ এই বিষয়ে অভিজ্ঞ কয়েকজনকে ওয়েবসাইট তৈরির খরচসহ আনুষঙ্গিক ব্যাপারে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জিম্মাদারি দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে খুব শিগগির যাদুরচর মাদরাসার ফতোয়া বিভাগের পক্ষ থেকে সমৃদ্ধ একটি ওয়েবসাইট জাতিকে উপহার দিতে পারবো, ইনশাআল্লাহ।’

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ