এদেশে দ্বীনের আলো বিলাতে এবং মানুষের মাঝে ইসলামের চর্চাকে সমৃদ্ধ করতে যুগ যুগ ধরে কাজ করছে কওমি মাদরাসাগুলো। মুসলিম জীবনের নানা বিষয়ের সমাধানের জন্য এসব মাদরাসায় রয়েছে স্বতন্ত্র গবেষণা বিভাগ। যেগুলো পরিচিত ‘ফতোয়া বিভাগ’ নামে। যুগ ও সময়ের চাহিদা পূরণে এ বিভাগে সমাধান হওয়া মাসয়ালা-মাসায়েল অফলাইনের পাশাপাশি এখন অনলাইনে মানুষ পেতে চায়। কিন্তু কী কারণে ঐতিহ্যবাহী এসব প্রতিষ্ঠান এদিক দিয়ে বহির্বিশ্বের তুলনায় এখনো পিছিয়ে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন আওয়ার ইসলামের চিফ রিপোর্টার হাসান আল মাহমুদ। তার ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের আজ থাকছে ৪র্থ পর্ব-
(প্রথম পর্বের লিঙ্ক- তথ্য প্রযুক্তিতে এখনো পিছিয়ে বাংলাদেশের ফতোয়া বিভাগগুলো!)
(দ্বিতীয় পর্বের লিঙ্ক- ফতোয়া বিভাগগুলোর স্বতন্ত্র ওয়েবসাইট থাকা কেন প্রয়োজন)
(তৃতীয় পর্বের লিঙ্ক- ফতোয়া বিভাগগুলোতে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার কেন প্রয়োজন)
৩য় পর্বের পর থেকে...
দাওয়াতি কার্যক্রমে ফতোয়ো বিভাগের তথ্য প্রযুক্তির ভূমিকা কতটুকু ও কীভাবে? এ বিষয়ে সবিস্তারে আলোচনা তুলে ধরে মিরপুর-১১ অবস্থিত জামিয়া ইসলামিয়া রওজাতুল উলুম মাদরাসার ফতোয়া বিভাগের দায়িত্বশীল মুশরিফ উস্তায মুফতি খিজির রায়হান জানান, ‘তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে গোটা দুনিয়া একটা গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়ে গেছে। দুনিয়ার যে কোন প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের মানুষের সাথে মুহূর্তেই যোগাযোগ করা যায়। পৃথিবীর এক প্রান্তে সংঘটিত ঘটনার খবর মুহূর্তেই অন্য প্রান্তের মানুষের কাছে পৌছানো যায়। ফলে পৃথিবীটা মিশ্র সংস্কৃতি বিভিন্ন মতাদর্শের লড়াইয়ের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি ঘরানার মানুষেরা প্রযুক্তির সাহায্যে তাদের সংস্কৃতি ও আদর্শের বৈশ্বিক প্রচার যুদ্ধে কোমর বেধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। মুসলিম শিবির হতেও অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এই মিশনে তাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। তবে, এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী প্রভাবক ও অর্থবহ ভূমিকা পালন করতে পারে আমাদের দারুল ইফতা তথা ফতোয়া বিভাগ। ইসলামি অনুশাসনের নানা গবেষণাধর্মী কাজ হয়ে থাকে এখানে। প্রযুক্তির কল্যাণে এই গবেষণাগুলো হতে পারে আরো প্রাণবন্ত ও তথ্যসমৃদ্ধ। পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে জন্ম নেয়া বিভ্রান্তির মূলোৎপাটনে কার্যকরি ভূমিকা রাখতে পারে।’
এসময় তিনি ফতোয়া বিভাগে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের দিকসমূহ ও তার কিছু সুফলের বর্ণনা উল্লেখ করেন,
১. ফেসবুক : আধুনিক বিশ্বে ফেসবুকের নাম জানে না এমন মানুষ নেই বললেই চলে। নানা মতের নানা মানুষ তাতে নিজেদের ধ্যান-ধারণা শেয়ার করে থাকে এ প্লাটফর্মে। দীন প্রচারে এর ব্যবহার আশাতীত উপকারী হবে বলে মনে হয়।
২. ইমেইল : ইসলামের প্রাথমিক যুগে দূর-দূরান্তের মানুষের কাছে চিঠির মাধ্যমে দাওয়াত পৌছানো হত। বর্তমানে ইমেইল ব্যবহার তারই আধুনিক সংস্কার হতে পারে।
৩. ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া : আধুনিক প্রযুক্তির অপর একটি দিগন্ত হলো স্যাটেলাইট চ্যানেল। এর মাধ্যমে একজন দাঈ সারা বিশ্বের মানুষের মাঝে ইসলামী দাওয়াত প্রচার ও প্রসারে ভূমিকা রাখতে পারেন।
৪. ইউটিউব : একজন দায়ী তার দাওয়াতী প্রোগ্রামের অডিও ও ভিডিওকে এই প্লাটফর্মে আপলোড করার মাধ্যমে বহু মানুষের কাছে তার মতামতকে পৌছিয়ে দিতে পারেন।
৫. ব্লগ : ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষ ও প্রতিষ্ঠান তাদের নিজেদের নামে ব্লগ তৈরী করে তার ধ্যান-ধ্যারণা ছড়িয়ে দিচেছ বিশ্বময়। একজন দায়িও এই প্লাটফর্মে ইসলামের আদর্শকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে পারেন।
৬. পত্রপত্রিকা : পত্রিকা মানব জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গী। নিম্ন শিক্ষিত থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষিত সবাই পত্রিকা নিয়মিত পাঠ করেন। দৈনিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক ইত্যাদি পত্রিকার মাধ্যমে ইসলামের গবেষণাধর্মী লেখা প্রকাশের মাধ্যমে সংঘাতময় বর্তমান সময়ে অনেক শূন্যতাকে পূরণ করতে সক্ষম হবে বৈকি।
৭. সফটওয়্যার : লেখাপড়াসহ সকল কাজ ও পেশাতে কম্পিউটারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কম্পিউটারের মাধ্যমে আজকাল কোরআন, হাদিস, বিভিন্ন ইসলামী রেফারেন্স গ্রন্থ পড়া ও সংরক্ষণ করা, ভিডিও দেখা, অডিও শোনা প্রভৃতি অনেক সহজতর হয়েছে। এখন কোরআন-হাদিস অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সফটওয়্যার আছে। এগুলোতে সহজেই একটি সুরা থেকে অন্য সুরায় যাওয়া যায়, বিভিন্ন আয়াত বের করা যায়, বিভিন্ন শব্দ দিয়েও আয়াত বের করা যায়। হাদিসের ক্ষেত্রেও এ রকম সফটওয়্যার বিদ্যমান।
৮. ওয়েব মিডিয়া : ওয়েব মিডিয়ায় মুসলমানদের অবস্থান খুব দুর্বল। বিশেষ করে নৈতিকতার চর্চা এখানে খুবই নগণ্য। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যায়, অমুসলিম ও ইহুদিদের সাইট মুসলমানদের সাইটের তুলনায় ১২০০ গুণ বেশি। অশ্লীলতা ও নীল ছবির সয়লাব এত বেশি যে অল্প কিছু মুসলিম সাইটের অবস্থান সে তুলনায় অপ্রতুল। তাই আরো অনেক ওয়েবসাইট, ব্লগ গঠনে এগিয়ে আসার পাশাপাশি নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করার প্রয়োজন আছে।’
কেএল/