মুফতি মাহ্ফুজুর রহমান হুসাইনী
ইসলাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম। ইসলামই হলো আল্লাহ্ তায়ালার নিকট একমাত্র মনোনীত দীন। ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয়গ্রহণকারী মুসলমানদের প্রতি রয়েছে মহান আল্লাহ্ তায়ালার অশেষ দয়া ও নেয়ামত। জুমুআর দিনটি আল্লাহ্’র পক্ষ থেকে মুসলমানদের প্রতি এক অন্যতম নেয়ামত। জুমুআর দিন একটি বরকতপূর্ণ দিন। আল্লাহ্ তায়ালা সমস্ত দিনের উপর এ দিনটিকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, সূর্য উদয়ের দিনগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হল জুমুআর দিন। এ দিনে হযরত আদম আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টি করা হয়। তাঁকে এই দিন জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং এই দিনে জান্নাত থেকে তাঁকে বের করা হয়। আর এই জুমুআর দিনেই কিয়ামত হবে সংগঠিত হবে” (মুসলিম-২০১৪)।
এ ছাড়াও এই দিনে মহান আল্লাহ্ তায়ালা অনেক বড় বড় কাজ সম্পাদন করেছেন। এই দিনটি আল্লাহ্ পাকের নিকট অত্যন্তগুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এ দিনের ফজিলত বুঝাতে আল্লাহ্ তায়ালা দিনটিকে ঈদের দিন বলেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ্ তায়ালা এই দিনকে মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করে দিয়েছেন” (ইবনে মাজাহ-১১৫২)
জুমুআর দিন দোয়া কবুলের দিন। বান্দা আল্লাহ্’র কাছে যা আবেদন করে তাই মঞ্জুর করা হয়। আবূ হুরাইরাহ্ রাযি. হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমুআর দিন সম্পর্কে আলোচনা করে বলেন, এ দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যে কোন মুসলিম বান্দা যদি এ সময় সালাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহর নিকট কিছু প্রার্থনা করে, তবে তিনি তাকে অবশ্যই তা দিয়ে থাকেন এবং তিনি হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে বুঝিয়ে দিলেন যে, সে মুহূর্তটি খুবই সংক্ষিপ্ত। (বুখারি-৯৩৫)
জুমুআর দিনে দোয়া কবুলের এই সংক্ষিপ্ত সময়ের ব্যাপারে আল্লাহ্’র রাসূল ঈঙ্গিত দিয়ে স্পষ্ট করে দিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, জুমাবারের যে মুহূর্তটিতে দুয়া কবুলের আশা করা যায়, তোমার সে মুহূর্তটিকে বাদ আসর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়টিতে তালাশ করো (তিরমিযী-৪৯১)।
আল্লাহ্ তায়ালা জুমুআর দিনকে মুসলমানদের জন্য অন্য রকম এক মিলনমেলা বানিয়ে দিয়েছেন। এই দিনে জোহরের নামাযের পরিবর্তে মহল্লার সকলকে একত্রিত হয়ে জুমুআর নামায আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, হে মুমিনগণ! জুমুআর দিনে যখন নামাযের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ছুটে যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। (সূরা: জুমুআ-৯)।
জুমুআর দিনের গুরুত্ব ও ফযিলতের কারনে জুমুআর নামাযকেও আল্লাহ্ তায়ালা অনেক ফযিলতপূর্ণ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, শুক্রবার দিন মসজিদের প্রতিটি দরজায় ফিরিশতারা অবস্থান করে এবং আগমনকারীদের নাম ক্রমানূসারে লিপিবদ্ধ করতে থাকে। ইমাম যখন (মিম্বরে) বসেন, তারা লিপিসমূহ গুটিয়ে নেয় এবং যিক্র (খুতবা) শোনার জন্য চলে আসে।
মসজিদে যে আগে আসে তার উদাহরণ সে ব্যাক্তির মত যে একটি উটনী কুরবানী করেছে। তার পরবর্তীজনের। দৃষ্টান্ত তার মত যে একটি গাভী কুরবানী করেছে। তার পরবর্তীজনের দৃষ্টান্ত তার মত যে ভেড়া কুরবানী করেছে এবং তার পরবর্তীজনের দৃষ্টান্ত তার মত যে একটি মুরগি দান করেছে। পরবর্তীজনের দৃষ্টান্ত তার মত যে একটি ডিম দান করেছে” (মুসলিম-২০২১)।
জুমুআর দিনে জুমুআর নামায আদায় করলে দশ দিনের গোনাহ মাফ হয় এবং জুমুআর নামাযের দিকে প্রতি কদমে এক বছর নফল রোযা ও নামায পড়ার সওয়াব হয়।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জুমুআর দিনে যে ব্যাক্তি গোসল করে অতঃপর জুমুআর জন্য যায় এবং সমর্থ অনুযায়ী সালাত আদায় করে, এরপর ইমাম খূতবা সমাপ্ত করা পর্যন্ত নীরব থাকে। এরপর ইমামের সঙ্গে সালাত আদায় করে। তবে তার এ জুমুআ হতে পরবর্তী জুমুআ পর্যন্ত এবং অতিরিক্ত আরো তিন দিনের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (মুসলিম-২০২৪)।
আল্লাহ্’র রাসূল আরো বলেন, যে ব্যক্তি জুমুআর দিনে সকাল সকাল গোসল করল এবং গোসল করাল, তারপর ইমামের কাছে গিয়ে বসে চুপ করে মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনল তার প্রত্যেক কদমের বিনিময়ে সে এক বছরের রোযা ও নামাযের সওয়াব পাবে। (তিরমিযী-৪৯৮)।
জুমুআর দিন যেমন বরকতময় জুমুআর নামাযও আরো বেশি বরকতময়। আমরা অনেকেই জুমুআর নামাযকে অবহেলা করে থাকি। সাবধান! অযথা বিনা কারণে কখনো জুমুআর নামায পরিত্যাগ করা যাবে না। এ ব্যাপারে শরীয়তে কঠিন হুঁশিয়ারি করা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি অবহেলা করে তিন জুমুআহ পরিত্যাগ করে, আল্লাহ তার হৃদয় মোহরাঙ্কিত করে দেন” (তিরমিযী-৫০২)।
আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের যথাযথ ভাবে জুমুআর নামায আদায় করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
লেখক: উস্তাদুল ইফতা, জামিয়া শায়েখ আব্দুল মোমিন মোমেনশাহী।
সহ-সম্পাদক, মাসিক আল ইত্তেফাক