আব্দুর রউফ আশরাফ।।
পশ্চিমাকাশে চিত্তজয়ের চাঁদের উঁকি। বাজিছে আনন্দের বীণা । বলিষ্ঠ কন্ঠে আওয়াজ কর্ণকুহরে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে "ঈদ মুবারক,ঈদ মুবারক" শিশুদের উল্লাসে বাড়ির আঙ্গিনা মুখরিত,কাল ঈদ। ধুমধাম আয়োজন। ঘরেবাইরে আনন্দের হিল্লোল। শত ব্যস্ততাকে আড়াল করে নীড়ের নন্দনে একসারিতে সবার মিলন। বেহেশতি পরিবেশের আনুষ্ঠানিক যাত্রা। কী অদ্ভুত আনন্দ। কী পুলকিত। আজকের দিনে সবাই সমান। নেই কোন প্রভেদ। নেই কোন তফাৎ। সাদাকালো, নবাব নবীর বাদশা ফকির সবাই এক সারিতে বসে মহান মহীয়ানের প্রশংসায় মুখরিত করে তুলবে আকাশ-বাতাস। বুকের সাথে বুক মিলিয়ে করবো আলিঙ্গন। পৃথিবীর সব পাপাচার, হিংসা বিদ্বেষ মুছন করে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হবে মুসলিম মিল্লাত। ভাইয়ে ভাই হয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবো ঈদানন্দে।
ঈদ মানে খুশির সঞ্চার। ঈদ মানেই নবজীবনের স্পন্দন। সম্প্রীতির বন্ধন। ঈদ মানে পশুত্বের ক্রন্দন, মানবিক নন্দন। মানুষের আনন্দ আর পশুত্বের আনন্দের মধ্যে তফাৎ করিয়ে দেয় ঈদ। স্রষ্টাপূজারী আর সৃষ্টিপূজারীদের চিনিয়ে দেয় ঈদ। ভোগের অন্ধত্ব আর ত্যাগের মহিমা শিখিয়ে দেয় ঈদ। ভেদাভেদ ভুলে ভ্রাতৃত্ববোধে আবদ্ধ করে তুলে এ ঈদ।
মুসলিম উম্মাহের বছরে দুটি উৎসব। একটি হল ঈদুল ফিতর অপরটি হল ঈদুল আযহা। দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর পহেলা শাওয়াল অনুষ্ঠিত হয় ঈদুল ফিতর। ঈদুল ফিতর প্রতিবছর এক অনন্য-বৈভব বিলাতে নিয়ে আসে খুশির বার্তা। বছরে একবার এই উৎসব দিবসটি খুশি ও কল্যাণের সওগাত নিয়ে ফিরে আসে আমাদের দ্বারে। মহান আল্লাহ প্রতি বছর ঈদের মাধ্যমে বান্দাকে তার দয়া ও করুণা বর্ষণ করেন। সিয়াম পালনের দ্বারা রোজাদার যে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার সৌকর্য দ্বারা অভিষিক্ত হন, ইসলামের যে আত্মশুদ্ধি, সংযম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, দানশীলতা, উদারতা, ক্ষমা, মহানুভবতা, সাম্যবাদিতা ও মনুষ্যত্বের গুণাবলি দ্বারা বিকশিত হয়, এর গতিধারার প্রবাহ অক্ষুণ্ন রাখার শপথ গ্রহণের দিন হিসেবে ঈদুল ফিতর আগমন হয়।
ঈদুল ফিতর শুধু একটি ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানই নয়, এর একটি তাৎপর্যপূর্ণ ও সুদূরপ্রসারী ভূমিকাও রয়েছে। ঈদুল ফিতর ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক মূল্যবোধ ও অর্থনৈতিক বিভাজন দূর ও সাম্য গঠনের এক অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে স্বীকৃত। ঈদের নির্মল আনন্দে মানুষের মনের সকল বিদ্বেষ ও শত্রুতা ধুয়ে মুছে যায় এবং মানুষের অন্তরাত্মা পরিচ্ছন্ন হয়।
ঈদুল ফিতরের সামাজিক তাৎপর্য অপরিসীম। সামাজিক জীব। মানুষ হিসাবে, আমরা সবাই একটি সমাজে বা একটি রাষ্ট্রে বাস করি। একে অন্যের থেকে দূরুত্ব বিভেদ থাকতে পারে। থাকতে পারে পৃথক মতামত বা চিন্তাভাবনা। রাজনৈতিক দর্শন, সামাজিক রীতিনীতি, নীতি ও অনুশীলনে পার্থক্য রয়েছে যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ও আমাদের মধ্যকার সম্পর্ককে বিষাক্ত করে তোলে এবং একে অপরের থেকে দূরে ঠেলে দেয়- সামাজিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে। জীবনের এই সব কলুষতা কাটিয়ে সব ভেদাভেদ ভুলে ঈদ-উল-ফিতর আমাদেরকে একত্রিত নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করে দেয়। সকল বৈষম্যতা দূর করে এনে দেয় এক প্রকার স্বস্তি।
সামর্থ্যবানেরা ঈদুল ফিতরের আগে গরীবদের জাকাত, ফিতরা ও সাদকাহ প্রদান করেন। যাতে করে ঈদের দিন গরিব ও মিসকিনদের আনন্দ-বিনোদন, উত্তম খাবার খেতে পারে। গরীবেরা ধনীদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করে । যারা দিন আনে দিনে খায়; ভিক্ষাবৃত্তি করে খাবার যোগাড় করতে হয়; খাবারের জন্য অন্য লোকের দারস্থ হতে হয়; তাদেরও অন্তত ঈদের দিনটাতে যাতে লাঞ্ছিত হতে না হয় এবং ঘরের খাবার দেখে মনের ভেতর যেন খুশির ঢেউ আসে। আর ধনী ব্যক্তিরাও তাদের সম্পদের কিছু অংশ সমাজের দরিদ্রদের প্রদান করতে পেরে আনন্দিত বোধ করেন। ধনী গরীবের এ আনন্দের তরঙ্গ বয়ে চলে অনাগত দিনের সন্ধানে।
প্রিয় পাঠক আসুন! ঈদুল ফিতর, এ মহা উৎসবের তাৎপর্যে উজ্জীবিত হই। ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হই,শত্রুতাকে বন্ধুত্বে পরিণত করি, আত্মীয়তার বন্ধন সু-দৃঢ় করি। দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত, নিঃস্ব, এতিম, অবহেলিত এবং সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নদের সাথে সৌহার্দ্য সম্প্রতি স্থাপন করি। আমাদের সীমাহীন ঈদানন্দ হোক মানবতার প্রাণশক্তি।
কেএল/