সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকে লন্ডন মহানগরের সীরাত সম্মেলন অনুষ্ঠিত ‘শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ ছিল দেশে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ’ ২৪ ঘণ্টার নিবিড় পর্যবেক্ষণে ইসলামী আলোচক আব্দুল হাই মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ প্রকাশিত হচ্ছে আল্লামা মাহমুদুল হাসানের ‘হাসানুল ফতোয়া’ তাড়াইলে মাদক-জুয়া ও অনৈতিক কার্যকলাপের প্রতিবাদে আলেমদের সমাবেশ নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে, দ্রুতই রোডম্যাপ : ড. ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পূর্ণাঙ্গ ভাষণ যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শনিবার বাংলাদেশ সফরে এলেন দেওবন্দের উস্তাদ মুফতি ফখরুল ইসলাম এলাহাবাদী আগামীকাল শরীফগঞ্জে আসছেন সাইয়েদ আরশাদ মাদানী

‘মেয়ে বাড়ির ইফতার’ হাদিয়া নাকি যৌতুক প্রথা?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| কাউসার লাবীব ||

পবিত্র রমজানের পূণ্যময় এক আয়োজন ‘ইফতার’। ইফতার রোজাদারের জন্য পরম আনন্দের। ইফতার করায় যেমন রয়েছে আনন্দ ও সওয়াব, তেমনি ইফতার করানোতেও রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি। নবী করিম সা. বলেছেন কেউ যদি কাউকে একটি খেজুর দিয়ে ইফতার করায় তাহলে সে রোজাদারের সমান সাওয়াব পাবে। কিন্তু কোথাও কোথাও পূণ্যময় এ আয়োজনকে ঘিরে চলে অমানবিক ও নারী জাতির জন্য অবমাননাকর ঘটনা। কিছু সমাজে প্রচলিত হয়ে গেছে যে, রমজান এলেই কণে পক্ষের বাড়ি থেকে ইফতারের পসরা সাজিয়ে পাঠাতে হবে বিশেষ উপঢৌকন।

কখনো দেখা যায় ‘সন্তোষজনক’ ইফতার না পাঠালে ঘটে মানসিক নির্যাতন ও অমানবিক ঘটনা। মেয়ে বাড়ির ইফতারের নামে চলে আসা এ প্রথাটিকে ইসলাম কীভাবে দেখে? এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম দেশের অন্যতম ইসলামিক স্কলার ড. ওয়ালীয়ুর রহমান খান’র কাছে।

তিনি বলেন, বিয়ের পর কণে পক্ষের বাড়ি থেকে বর পক্ষের বাড়িতে বিভিন্ন উপঢৌকন পাঠানোর একটি রীতি-রেওয়াজ আমাদের বাংলাদেশের সমাজে কোন কোন অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। এর মধ্যে ‘রমজানে মেয়ের বাড়ি থেকে মেয়ের জামাইয়ের বাড়িতে ইফতার সামগ্রী পাঠানোর রুসমও একটি। রমজান এলে কোনো কোনো অঞ্চলে কণে পক্ষ থেকে যদি ‘সন্তোষজন ‘ ইফতার সামগ্রী না পাঠানো হয়, তাহলে দেখা যায় কণেকে বিভিন্ন মানসিক যন্ত্রণায় ভুগতে হয়। এমনকি বিভিন্নভাবে লজ্জিতও হতে হয়। এটি কোনোভাবেই শরীয়ত সম্মত নয়। কেননা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ‘কারো সম্পদ ভক্ষণ করা জায়েজ নয় তার সন্তুষ্টি ব্যতীত।’

‘অনেক সময় অনেকে বলে থাকেন, মেয়ের বাড়ি থেকে যে ইফতার সামগ্রী পাঠানো হয় এটি হাদিয়া। কিন্তু আমরা যদি দেখি, সাধারণত মেয়েপক্ষ লোকলজ্জার ভয়ে এবং রুসম পালনের জন্য এই ইফতার সামগ্রী পাঠিয়ে থাকে। তবে যদি কেউ বাস্তবিকভাবেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেয়ের শশুরবাড়িতে ইফতার পাঠিয়ে থাকে তাহলে এটি ভিন্ন বিষয়। একে হাদিয়া হিসেবে ধরা যাবে। তবে হাদিয়া দেওয়ার পদ্ধতি বিষয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা একে অপরকে হাদিয়া দাও; যেন তোমাদের মাঝে ঋদ্ধতা বৃদ্ধি পায়।’ তাই যদি মেয়ে পক্ষ থেকে ছেলের বাড়িতে ইফতার পাঠানো হয় উপহার হিসাবে, ছেলে পক্ষেরও উচিত মেয়ের বাড়িতে উপহার হিসেবে ইফতার সামগ্রী পাঠানো। বরং ছেলে পক্ষ আগে উপহার দেয়া উচিত। এর মাধ্যমে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন হবে। তবে অবশ্যই দুপক্ষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে হাদিয়া পাঠাতে হবে। লোকলজ্জার ভয়ে বা রুসম রক্ষার জন্য নয়।’- বলেন ড. ওয়ালীয়ুর রহমান খান

এ ইসলামিক স্কলার বলেন, ইফতারের উৎসব পালনের মাধ্যমে মেয়ে পক্ষকে কোনভাবেই চাপের মধ্যে ফেলা যাবে না। বরং পারলে ছেলের বাড়ি থেকে যেন মেয়ের বাড়িতে ইফতার পাঠানো হয়। কেননা বিয়ের সময় ওলিমার দায়িত্ব কিন্তু ইসলাম ছেলে পক্ষকেই দিয়েছে। মেয়ে পক্ষের বাড়িতে বরযাত্রীর নামে যে রুসম চলে আসছে এটি ইসলাম সমর্থিত নয়। তবে যদি মেয়ের বাড়িতে আগত মেহমানদের জন্য কোন ধরনের পূর্ব চুক্তি ছাড়া সন্তুষ্টচিত্তে মেহমানদারীর ব্যবস্থা করা হয় তাহলে অবশ্যই মেয়ে পক্ষ সেটি করতে পারে।

তার মতে, উক্ত বিষয়গুলোকে যদি আমরা বিশ্লেষণ করি তাহলে বুঝা যায়, ঈদের সময়ে মেয়ে পক্ষ থেকে ছেলে পক্ষের কাছে গরু খাসি পাঠানো, বিভিন্ন উপলক্ষকে কেন্দ্র করে উপঢৌকন পাঠানো এবং রমজান মাসে ইফতারি পাঠানোর যে রুসম চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে মেয়ে পক্ষের ওপর এটি ইসলাম সমর্থিত নয়। বরং অমানবিক ও নারী জাতির জন্য অবমাননাকর বিষয়। তবে আশার কথা হচ্ছে, আলহামদুলিল্লাহ অনেক জায়গাতেই ধীরে ধীরে এই রুসমগুলো কমে আসছে।

তার পরামর্শ হলো, চলমান এ রুসমগুলোকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে আলেমদেরসহ সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে তরুণদের এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। যারা লেখালেখি করেন তারা এর বিরুদ্ধে কলম ধরবেন। যারা মসজিদের খতিবের দায়িত্ব পালন করছেন তারা জুমার খুতবায় এ বিষয়ে আলোচনা করবেন। যারা বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে অংশগ্রহণ করে থাকেন তারা সেখানে এ বিষয়গুলো উত্থাপন করবেন। রমজানে তারাবির পর বিভিন্ন মসজিদে নসিহতমূলক আলোচনা হয়ে থাকে সেখানেও এ বিষয়গুলো উঠানো যেতে পারে। কেননা এই রুসম পালন করতে গিয়ে অনেক পিতার চোখের অশ্রু ঝরে। অনেক মায়ের মন বিষাদে ভরে যায়। অনেক মেয়েকে অসম্মানিত হতে হয় তার শ্বশুরবাড়িতে।

‘কেউ কেউ আগ বাড়িয়ে বলে থাকেন, মেয়ের বাড়ি থেকে ছেলের বাড়িতে ইফতারি পাঠানোর রুসম নাকি ইসলামের রেওয়াজ। অথচ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কারো সন্তুষ্ট ব্যতীত তার সম্পদ ব্যবহার করাই জায়েজ নেই।’ ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আমাদের উপমহাদেশ একটি সম্প্রদায় আছেন যারা একটি প্রথা চালু করেছে যে, মেয়েকে বিয়ের সময় মেয়ের বাবার বাড়ি থেকে তাকে চিরতরে বিদায় করে দেয়া হয়। তাই তাকে বিভিন্ন উপঢৌকন সমেত শ্বশুর বাড়িতে পাঠানো হয়। এই ধারাটি ধীরে ধীরে বিবর্তন হয়ে মুসলমানদের মাঝে চলে এসেছে। এটি মুসলমানদের কোনো রুসম নয়। একটি সম্প্রদায় কর্তৃক প্রবর্তিত রুসম। মানবরচিত এ রুসম ইসলাম কোনভাবেই সমর্থন করে না।’- বলেন,ড. ওয়ালীয়ুর রহমান খান

তিনি আরো বলেন, ‘মেয়ের বাড়ি থেকে বিভিন্ন উপঢৌকন পাঠানোর রেওয়াজ যেহেতু এখনও অনেক জায়গায় প্রকট। তাই একে সমাজ থেকে মুছে দিতে হলে সুন্দর সাবলীল এবং মার্জিত ভাষায় মানুষকে বুঝাতে হবে। তাদেরকে অনুধাবন করাতে হবে, আজকে যারা ছেলে পক্ষ, একদিন তারা মেয়ে পক্ষ হবে। জুলুম করলে মাজলুম হতে হয়। তাই এই রেওয়াজটি যদি সবাই মিলে সমাজ থেকে মুছে দেয়া যায় তাহলে আর কোন বাবার চোখের পানি ঝরবে না, কোন মায়ের মন বিষাদে ভরে উঠবে না, অসম্মানিত হবে না কোন মেয়ে।’

তার মতে ‘নারী জাতির প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক করতে হবে। এঁরা হলেন মায়ের জাতি। এদের শ্রদ্ধা ও সম্মান করলে আমরাও সম্মানিত হই। নারী ও শিশুদের প্রতি মহানবী স অত্যন্ত সহানুভূতিশীল ছিলেন। অথচ কিছু মুসলমানের আচরণ বিপরীত। নারীদের উপর এই সব নিপীড়ন ও সহিংসতার বিরুদ্ধে আলেম সমাজ সোচ্চার হলে সমাজে আলেমদের গ্রহণযোগ্যতা ও মর্যাদা আরো বাড়বে।’

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ