মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন:।।
সত্য সুন্দর ও মানবিকতার ধর্ম ইসলাম। এই ধর্মের বর্ণে বর্ণে জ্বলে মানবতা ও ইনসানিয়াতের দীপ। এর প্রতিটি বাণী গভীর জ্ঞানের দ্যুতি। যুক্তি বাস্তবতা ও পক্ষপাতমুক্ত জীবনবোধ এর অনন্য বৈশিষ্ট্য। ফলে মানুষ যতই লাগামহীন আবিষ্কারের ফেনিল স্রোতে তরঙ্গায়িত হচ্ছে ততই বিনম্র বাসনায় খুঁজছে কোনো শীতল আশ্রয়। জীবনের বাহিত চঞ্চল অস্থির সময়ের একটা হিসেব কষতে ইচ্ছে করে তার বারবার।
সবিশেষ কামনাতাড়িত উত্তাল জীবননেশার সঙ্গে যখন সে আর হাঁটতে পারে না তখন একদণ্ড শ্বাস নিতে চায় জ্ঞান যুক্তি ও প্রাপ্তির ছায়ায় বসে। তখন তার কাছে চলতি পৃথিবীর কথিত সভ্যতার সব ক'টি আধুনিক শিল্প ও স্টাইলকে মনে হয় মদ্যশালার নাচের মুদ্রা। সে নড়ে বসে। এই মাতাল সভ্যতার পঙ্কিল কয়েদখানা থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। কারণ—জীবনটা তো জুয়ার তাস নয়। এর প্রতি গভীর মমতা আছে মদ্যপেরও।
পাপের তোড়ে প্রবল উচ্ছ্বাসে ভাসতে ভাসতে ক্লান্ত; অতপর শান্ত সুন্দর ও আস্থার পাথরে নির্মিত কোনো আশার আশ্রয় খুঁজে ফেরা মানুষের মিছিল এখন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। যাদের ভাগ্য ভালো তারা নিজেরাই খুঁজে নিচ্ছে ওই ঠিকনা। পশ্চিমা উন্মাদ সভ্যতা যাকে বলছে—খুন ত্রাস হিংসা সংকীর্ণতা ও জোর-জুলুমের ধর্ম—তারা ভেতরে প্রবেশ করে দেখছে সততা সরলতা জ্ঞান যুক্তি ও মানবিকতার এক অসীম উদার উদ্যান। পথহারা যারা পথের কাঙাল তারা চেঁচাচ্ছে পথে দাঁড়িয়ে—আধুনিক সভ্যতার এই চঞ্চল যৌবনকালে মানুষ কেন মুসলমান হচ্ছে? কেন সযত্নে চোখ ধাঁধানো বিদ্যুৎ-প্রদীপ ফেলে অসীম শ্রদ্ধায় হাঁটু ভেঙে বসছে পুরনো লণ্ঠনের সামনে?
দুই: বিদ্বান ও বিজ্ঞানে বেড়ে ওঠা আলোকিত নওমুসলিম কাফেলা চতুর বণিক স্বার্থান্ধ আধুনিক পৃথিবীর জন্যে এক অনুপেক্ষ বিস্ময়। দাওয়াতকে যারা জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছেন—এই বিস্ময়কে তারা অনেকটা প্রাতিষ্ঠানিক করে তুলেছেন! হয়তো শয়তানবাদী পৃথিবীর জন্যে সবচে' বড় ভয় শঙ্কা ও আতঙ্কের বিষয় আজ এটা। তারা একথা ভাষায় ছড়াতে পারছে না। কারণ, দাওয়াত হলো মিছরির ছুরির মতো। অবশ্য দাওয়াতের এই মধুর-অস্ত্র অন্তর খুন করে না; অবশ্যই দক্ষ দরদি চিকিৎসকের মতো ভেতরের অন্যায়ভাবে আরোপিত সব ক্লেদ কলঙ্ক কেটে পরিষ্কার করে দেয়। নিঃশব্দ এই আলোর অপারেশন পাপের ভারে নুয়ে পড়া পৃথিবীর জন্যে শ্রেষ্ঠ আশীর্বাদ।
তিন: দাওয়াতের মোম থেকেই প্রথম জ্বলেছিল ইসলামের আলো। দরদ ভালোবাসা আর মমতার রসে উজ্জীবিত এই মন্ত্র ব্যর্থ হয় না । অন্যায় অপরাধ ও নির্লজ্জ পাপের পসরায় ভরে উঠছে যে সমাজ—বেদনার হলেও সত্যি—ওই সমাজটা আমাদের। চারদিকে মহা উল্লাসে জ্বলছে পাপের চুল্লি যাদের রক্তে চিত্তে সাধনায়—তারা আমাদেরই মানুষ। প্রতিপক্ষ কিংবা শত্রুপক্ষ নয় কেউ। ওদের বাঁচাতে হলে দাওয়াতই ভরসা। আতরমাখা এই মন্ত্র বলেই আমরা আনব নতুন ভোর।
-এটি