সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকে লন্ডন মহানগরের সীরাত সম্মেলন অনুষ্ঠিত ‘শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ ছিল দেশে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ’ ২৪ ঘণ্টার নিবিড় পর্যবেক্ষণে ইসলামী আলোচক আব্দুল হাই মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ প্রকাশিত হচ্ছে আল্লামা মাহমুদুল হাসানের ‘হাসানুল ফতোয়া’ তাড়াইলে মাদক-জুয়া ও অনৈতিক কার্যকলাপের প্রতিবাদে আলেমদের সমাবেশ নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে, দ্রুতই রোডম্যাপ : ড. ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পূর্ণাঙ্গ ভাষণ যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শনিবার বাংলাদেশ সফরে এলেন দেওবন্দের উস্তাদ মুফতি ফখরুল ইসলাম এলাহাবাদী আগামীকাল শরীফগঞ্জে আসছেন সাইয়েদ আরশাদ মাদানী

১০ বছরে ইসলামী লেখক ফোরাম: সাফল্যের জয়গান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| কাউসার লাবীব ||

আগামীকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কেন্দ্ৰীয় কচি-কাঁচা মিলনায়তনে নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠান করছে লেখকদের জাতীয় সংগঠন ‘বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম।’সময়ের ব্যবধানে লেখক ফোরাম ১০ বছরে পা দিলো।

দীর্ঘ এ সময়ে ফোরামের অর্জন কী? দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে কতটা সচেতনতার পরিচয় দিতে পেরেছে? আগামী দিনের পথচলায় কী পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সংগঠনটি? জানতে চেয়েছিলাম স্বপ্নচারী লেখক, মুহাদ্দিস মাওলানা মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীনের কাছে। তার মতে ‘বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম এ পর্যন্ত কী দিতে পেরেছে’ সুনির্দিষ্ট করে এর উত্তর যারা দায়িত্বশীল তারাই দিতে পারবেন। তবে আমার কাছে মনে হয়- লেখকদের মাঝে পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরি, চিন্তার একতা তৈরি করতে পেরেছে সংগঠনটি। ইসলামি ভাবধারার লেখকদের সুসংগঠিত করে রাখার যে কাজটি ফোরাম করেছে এটি সামগ্রিকভাবে বড় অর্জন বলেই আমি মনে করি।

ফোরামের সাবেক সভাপতি জহির উদ্দিন বাবর বলেন, ২০১২ সালে আমরা যখন ইসলামী লেখক ফোরাম প্রতিষ্ঠা করি তখন আমাদের সামনে পুরো অঙ্গনে কোনো নজির ছিল না। ইসলামি লেখকদেরও সংগঠন হতে পারে- সেটাই ছিল তখন অনেকের কাছে বিস্ময়ের মতো। আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল, ইসলামকে বিষয় হিসেবে ধারণ করে যারা লেখালেখি করে তারা যেন একটি প্লাটফর্মে জড়ো হতে পারে। বড়দের তত্ত্বাবধানে তরুণদের নিয়ে এই সংগঠনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০১৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। সেই হিসেবে সংগঠনের বয়স প্রায় ১০ বছর।

জহির উদ্দিন বাবর বলেন, শুরু থেকেই আমরা সংগঠনটিকে তারুণ্যের স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমরাও এক প্লাটফর্মে জড়ো হতে পারি- সেটা দেখিয়ে দেওয়াই ছিল আমাদের কাছে মুখ্য বিষয়। একটি ব্যানারে মাঝে মাঝে একসঙ্গে হতে পারাই ছিল তখন আমাদের কাছে অনেক বড় প্রাপ্তি। আমরা এই সংগঠনের মাধ্যমে ‘বিপ্লব’ টাইপের কোনো কিছু ঘটিয়ে ফেলব সেটা কখনও বলিনি। কয়েকশ তরুণ লেখক একটি ব্যানারে বছরে কয়েক বার একত্রিত হতে পারে সেটাকেই আমরা অনেক বড় প্রাপ্তি হিসেবে দেখেছি।

‘শুরু থেকে ফোরাম তার নেতৃত্ব যেন গতিশীল হয় সেই চেষ্টা করেছে। এজন্য এক নাগারে দুইবারের বেশি এক পদে না থাকার বিধান রাখা হয়েছে। গত ১০ বছরে যথাসময়ে পাঁচটি কাউন্সিল করতে পারা ফোরামের অনেক বড় অর্জন বলে আমি মনে করি। নয়টি সাধারণ সভায় সারাদেশ থেকে লেখকরা এক জায়গায় জড়ো হয়েছেন, ভাবনা বিনিময় করেছেন, বড়দের নির্দেশনা পেয়েছেন, এটাকে আমরা কোনোভাবেই খাটো করে দেখি না।’ বলেন, জহির উদ্দিন বাবর।

তার মতে, কর্মশালা, পাঠচক্র, সাহিত্যসভাসহ বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে ফোরাম নতুন লেখকদের যোগ্য করে তোলার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। শতাধিক নবীন ও তরুণ লেখক ফোরামের প্লাটফর্মের মাধ্যমে লেখালেখির অঙ্গনে এখন সরব ভূমিকা রাখছেন। ফোরামের কর্মশালায় পাঠ নিয়ে সরাসরি সাংবাদিকতা করছেন এমন সংখ্যাটিও কয়েক ডজন। এছাড়া প্রতি বছর সাধারণ সভা উপলক্ষে একটি সমৃদ্ধ স্মারক বের করে আসছে ফোরাম। যেখানে তরুণ লেখকদের জন্য থাকে নানা নির্দেশনা। ফোরাম একটি বানানরীতি প্রণয়ন করেছে, যা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ফলো করে থাকে। একটি লেখক অভিধানেরও কাজও চলমান। এসবই মোটাদাগে ফোরামের অবদান বলা যায়। এছাড়া ফোরাম সংশ্লিষ্টরা লেখালেখি ও সাংবাদিকতার নানা অঙ্গনে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছেন, যা দিনশেষে ফোরামের প্রেরণার ফসল বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

তিনি যোগ করেন, মানুষের পাওয়ার কোনো শেষ নেই, চাহিদারও কোনো লাগাম নেই। একটি গ্লাসের অর্ধেকটি পানিতে ভরা যেমন বলা যায়, অর্ধেকটি খালি সেটাও বলা যায়। শূন্য থেকে শুরু করা একটি সংগঠন হয়ত স্বপ্নের জায়গায়, প্রত্যাশার শতভাগ অর্জন করতে পারেনি। কিন্তু এত বছর একটি স্বপ্ন নিয়ে, একটি টার্গেট সামনে রেখে একসঙ্গে চলা এটার চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কিছু হতে পারে না। আমি মনে করি, এত বছর ধরে একটি সংগঠন ভালোভাবে টিকে থাকাই কওমি অঙ্গনের জন্য বিশাল উদাহরণ।

তিনি উল্লেখ করেন, যেকোনো সংগঠনের শুরুর সময়টা হয় প্রতিকূলতার। আমরা যখন ফোরামের নেতৃত্বে ছিলাম নানা বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আমাদের চলতে হয়েছে। সংগঠনের হাল ধরে রাখাই ছিল আমাদের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। এখন ফোরাম অনেকটা সুসংহত। আমরা যে টার্গেট নিয়ে ফোরামের যাত্রা শুরু করেছিলাম, এখন আশা করি সেই টার্গেটে দ্রুতগতিতে ফোরাম এগিয়ে যাবে। ফোরামের নতুন নেতৃত্ব সংগঠনকে গতিশীল করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ ও কর্মসূচি নিয়েছে। ইনশাআল্লাহ সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে ফোরাম লক্ষ্যপানে এগিয়ে যাবে।

লেখক, সম্পাদক হুমায়ুন আইয়ুব বলেন, গঠনতন্ত্র মেনে ১০ বছর কোনো সংগঠন শৃঙ্খলার সঙ্গে চলতে পারাটা বড় অর্জন। বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম আদর্শিক জায়গায় আপসহীন থেকে এদেশে ইসলামি ভাবধারার লেখক তৈরি, লেখকদের পরিচর্যা ও লেখকদের সুসংগঠিত করার কাজটি খুব যত্নের সঙ্গে করে যাচ্ছে। রাজধানী ঢাকাসহ প্রান্তিক জনপদেও মাতৃভাষা বাংলার শুদ্ধ পঠন-পাঠনে নানামুখী কোর্স-কর্মশালা করেছে। লেখালেখির জন্য কোথাও সরাসরি, কোথাও সহযোগী, কোথাও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে।

তার মতে, মূলধারার লেখিয়ে বড় আলেমদের সঙ্গে সমন্বয় করে পথ চলছে লেখক ফোরাম। কাজের খতিয়ান উল্লেখ করতে চাই না। আদর্শের ওপর এক পলক পথচলাও সাফল্যের জয়যাত্রা।

ফোরামের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আমিন ইকবাল এ যাবতকালের বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম এ পর্যন্ত ৫০টির বেশি প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে, যেখানে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে। এসব প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্য থেকে গত ১০ বছরে অন্তত ১০০ তরুণ বর্তমানে দাপটের সঙ্গে লেখালেখি করে যাচ্ছে।

তিনি বলছেন, আমাদের বড় একটি কাজ হলো নবীন লেখকদের পরিচর্যা করে উপযুক্ত করে তোলা। পরবর্তী সময়ে তাদের একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা। এটি ফোরাম ভালোভাবেই করতে পেরেছে বলে আমি মনে করি। প্রতি বছর সাহিত্য ভ্রমণ ও হল প্রোগ্রামের মাধ্যমে নবীন-প্রবীণদের মাঝে একটি সেতুবন্ধন তৈরি হচ্ছে; যার ফলে নবীনরা বিপথে হারিয়ে যাবে না।

তিনি যুক্ত করেন, করোনাকাল এবং আগে-পরে আর্থিক সংকটে পড়া লেখকদের পাশে দাঁড়ানো, বন্যা দুর্গত আট জেলায় সাধারণ মানুষ এবং ৫০ জনেরও বেশি লেখককে আর্থিক সহায়তা, তরুণদের লেখার মানোন্নয়নে অসংখ্য সাহিত্য সমালোচনা সভা, ফোরামের নিজস্ব বানানরীতি প্রকাশ, প্রকাশিতব্য লেখক অভিধান, লেখকদের মেলবন্ধনে ইফতার মাহফিল, আলোচনা সভাসহ নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছে লেখক ফোরাম। তবে আমাদের কাজ যা হচ্ছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে আমরা বসে থাকতে চাই না। সময়ের ব্যবধানে চাহিদার পরিবর্তন হয়, সমাজের প্রয়োজন বদলায়, ফোরাম সে বিষয়গুলো মাথায় রেখে পথ চলছে।

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ