সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকে লন্ডন মহানগরের সীরাত সম্মেলন অনুষ্ঠিত ‘শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ ছিল দেশে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ’ ২৪ ঘণ্টার নিবিড় পর্যবেক্ষণে ইসলামী আলোচক আব্দুল হাই মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ প্রকাশিত হচ্ছে আল্লামা মাহমুদুল হাসানের ‘হাসানুল ফতোয়া’ তাড়াইলে মাদক-জুয়া ও অনৈতিক কার্যকলাপের প্রতিবাদে আলেমদের সমাবেশ নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে, দ্রুতই রোডম্যাপ : ড. ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পূর্ণাঙ্গ ভাষণ যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শনিবার বাংলাদেশ সফরে এলেন দেওবন্দের উস্তাদ মুফতি ফখরুল ইসলাম এলাহাবাদী আগামীকাল শরীফগঞ্জে আসছেন সাইয়েদ আরশাদ মাদানী

নিউইয়র্কের ৭৯ স্কুলে মুসলিমদের জন্য মিলছে ‘হালাল খাবার’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক:।। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের স্কুলগুলোতে মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য হালাল খাবারের ব্যবস্থা এতদিন অনেকটাই কম ছিল।

তবে এই খাতে সম্প্রতি নিউইয়র্কের সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস ও সিটি স্কুলের চ্যান্সেলর ডেভিড সি ব্যাঙ্কস ৫০ মিলিয়ন ডলার মূলধন বিনিয়োগের ঘোষণা দেন। এর মাধ্যমে শহরের ৭৮টি স্কুলে মধ্যাহ্নভোজে হালাল খাবার সরবরাহ করা হবে।

‘ক্যাফেটেরিয়া এনহ্যান্সমেন্ট এক্সপেরিয়েন্স’ প্রোগ্রামের আওতায় এই মূলধন বিনিয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। নিউইয়র্কের ইসলামিক লিডারশিপ কাউন্সিলকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়।

শহরের কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস এই সিদ্ধান্তের জন্য মেয়র অফিস এবং সিটি কাউন্সিলের প্রশংসা করেছে। নাগরিক অধিকার সংস্থাটি শহরের বাজেটে হালাল খাবারের সরবরাহ বৃদ্ধিকে একটি ধারাবাহিক কর্মসূচিতে পরিণত করার আহ্বান জানিয়েছে।
‘ক্যাফেটেরিয়া এনহ্যান্সমেন্ট এক্সপেরিয়েন্স’-এ দুটি প্রধান বিষয় রয়েছে। এর একটি হলো-খাবার বিতরণের পদ্ধতির উন্নতি করা অর্থ্যাৎ খাবার নেওয়ার সময় দীর্ঘ লাইন যেন না দিতে হয় সেই ব্যবস্থা করা। অন্যটি হলো- বিকল্প খাবারের ব্যবস্থা থাকা, অর্থ্যাৎ হালাল খাবারের সরবরাহ বৃদ্ধি করা।

বর্তমানে নিউইয়র্কের ৭৯টি স্কুলে হালাল খাবার মিলছে। এছাড়া যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এতে অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। হালাল খাবারে সাধারণত ‘এইচ’ অক্ষর দিয়ে লেভেল করা থাকে। এর অর্থ হলো- এই খাবার ইমামরা পরীক্ষা করেছেন এবং এর মধ্যে হারাম কোনো মিশ্রণ নেই।

সিটি স্কুলের চ্যান্সেলর ডেভিড সি ব্যাঙ্কস বলেন, ‘আমরা কীভাবে স্কুল-দিনের অভিজ্ঞতাকে নতুন করে কল্পনা করতে চাই- এটি তারই অংশ। এটি শুধু শ্রেণিকক্ষে একাডেমিক অভিজ্ঞতা নয়, এটা আসলেই সবকিছু।’

এই পুনর্নির্মাণটি ক্যাফেটেরিয়া বর্ধিতকরণ প্রোগ্রামের অংশ। এটি ২০২১ সালে বাস্তবায়িত একটি উদ্যোগ, যা স্বাস্থ্যকর খাবারের বিকল্প যুক্ত করে। এর আওতায় ২০২২ সালে ছয়টি স্কুল আপগ্রেড করা হয়েছে এবং ২০২৩ সালে ৮০টি অতিরিক্ত ক্যাফেটেরিয়া আপগ্রেড করা হবে।
কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস নিউইয়র্কের নির্বাহী পরিচালক আফাফ নাসের বলেন, ‘প্রত্যেক শিক্ষার্থীর তাদের ধর্মীয় নির্দেশনা পূরণ করে একটি মধ্যাহ্নভোজ পাওয়ার অধিকার রয়েছে।

অনেক দিন ধরে, নিউইয়র্কে মুসলিম শিক্ষার্থীরা হয় দুপুরের খাবার এড়িয়ে যেত বা হালাল নয় এমন খাবার গ্রহণ করতে বাধ্য হতো। স্কুলগুলোতে হালাল খাবার সরবরাহ বৃদ্ধির প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাই।’

এতদিন নিউইয়র্কের বেশিরভাগ স্কুলগুলোতে মুসলিম শিক্ষার্থীদের খাবার নিয়ে অনেক ঝামেলা পোহাতে হতো। বেশিরভাগ সময় তারা দুপুরে না খেয়ে থাকত। নতুন এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে মুসলিম কমিউনিটি।

নিউইয়র্কের অ্যাসেম্বলওম্যান জেনিফার রাজকুমার বলেন, ‘ক্যাফেটেরিয়া এনহ্যান্সমেন্ট এক্সপেরিয়েন্স’ প্রোগাম নিয়ে আমি অনেক খুশি। এটির মাধ্যমে উপকৃত হবে মুসলিম কমিউনিটি। লাখ লাখ মুসলিমের জন্য স্কুলে হালাল খাবার পাওয়া দারুণ ব্যাপার।’

তিনি বলেন, ‘এটি নিয়ে আমি উত্তর আমেরিকার ইসলামিক সার্কেল ও স্থানীয় বাংলাদেশি নেতাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত কাজ করেছি। হালাল খাবারের প্রয়োজনীয়ত বিশাল। এর সঙ্গে আমরা সব মুসলিম বাচ্চাদের জন্য অন্তর্ভুক্ত করবো অসাধারণ পরিবেশ। এটি আমাদের আরও গর্বিত করবে।’

হিলক্রেস্ট হাই স্কুল নিউইয়র্কের হালাল সার্টিফায়েড একটি স্কুল। এর সামনে থেকে নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের মুসলিম লিয়াজন মোহাম্মদ বাহে বলেন, ‘এখানকার ক্যাফেটেরিয়ায় প্রায় সব খাবারই হালাল। এমনটি আগে ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ নিউইয়র্ক সিটির প্রত্যেক মুসলিম শিক্ষার্থী তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী খাবার খুঁজে পাবে। তারা ভালো কিছু এবং হালাল খাবার খেতে পারবে ও পড়ালেখায় মন দিতে পারবে। এখন যা ঘটছে তা নিয়ে আমরা খুব খুশি। সুন্দর ঘোষণাটিতে মেয়র নিজেই সমর্থন জানিয়েছেন। এটি মুসলিম কমিউনিটির জন্য সুন্দর বিজয়। ইনশাআল্লাহ আমাদের কমিউনিটির জন্য আরও বিজয় আসবে।’

আরেক নারী মিস আশরাফ বলেন, আমি নিউইয়র্ক সিটি পাবলিক স্কুলের একটি অংশ। তারপরও আমি কখনও হালাল খাবারের অপশন পাইনি। সবসময় হয় ক্ষুধার্ত থাকতে হয়েছে, নয়ত সামান্য কোনো খাবার খেতে হয়েছে। মুসলিম শিক্ষার্থীদের হালাল খাবারের অপশনের সিদ্ধান্তের কারণে আমাদের কমিউনিটির জন্য আমি গর্বিত।

তিনি বলেন, নিউইয়র্কের প্রতিটি স্কুলে হালাল খাবার থাকবে যা ইমামদের দ্বারা পরীক্ষিত। এছাড়া প্রত্যেক স্কুলে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে যাতে এসব খাবার অন্য খাবারের সঙ্গে না মিশে যায়। আমাদের শিশুরা এখন আর স্কুলে গিয়ে ক্ষুধার্ত থাকবে না ইনশাআল্লাহ। বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনসহ যাদের বদৌলতে এমন সিদ্ধান্ত এসেছে আল্লাহ তাদের পুরস্কৃত করুন।

আইটিভিইউএসএ এর এর সিইও, ইমাম ও এনওয়াইএস চ্যাপ্লেন মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, মেয়র এরিক অ্যাডামস এবং ডিওই চ্যান্সেলর ব্যাঙ্কস আজ ঘোষণা করেছেন যে, ক্যাফেটেরিয়া এনহ্যান্সমেন্ট এক্সপেরিয়েন্স সিটি ৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে। এর মধ্যে স্কুলগুলোকে হালাল খাবারের জন্য প্রত্যয়িত করা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

নিউইয়র্কের ইসলামিক লিডারশিপ কাউন্সিলকে এই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং তারা এ পর্যন্ত ৭৯টি স্কুলকে সার্টিফাই করেছে। ৭৯টি পাবলিক স্কুল এখন তাদের মুসলিম ছাত্রদের হালাল খাবার অফার করে। মাশাল্লাহ! এটা আমাদের বাচ্চাদের অধিকার, আমাদের বিশ্বাস সব জায়গায় হালাল খাবার থাকবে। আমাদের এখনও আরও কাজ আছে। জুমার নামাজের আজান পরের ধাপ।

প্রসঙ্গত, কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স (সিএআইআর), আইটিভি ইউএস, ইন্টারফেইথ সেন্টার অব ইউএসএ, এমসিসিসহ আরও অনেকগুলো অর্গানাইজেশন মুসলমানের বিভিন্ন অধিকার আদায়ের ইস্যুতে কাজ করে থাকে।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ