আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: ওয়াজ হলো মানুষকে সদুপোদেশ দেয়া ও তাদের কল্যাণের পথে ডাকা। ইসলামের সূচনাকাল থেকে ওয়াজ সাধারণ মানুষের মাঝে ইসলাম ও ইসলামের বিধি-বিধান প্রচারের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নবী-রাসুল আ. সাধারণ মানুষকে সত্যের পথে যে আহ্বান জানাতেন তারই প্রচলিত একটি রূপ ওয়াজ।
নবীর উত্তরসূরী হিসেবে আলেমগণ; বিশেষত বুজুর্গ আলেমগণ যুগ যুগ ধরে ওয়াজ-নসিহত করছেন এবং তা ইসলামি শিক্ষা বিস্তারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। বিশেষত ইসলামি শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা মুসলিম সমাজে ওয়াজ বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা সাধারণ শিক্ষিত, অর্ধ-শিক্ষিত ও মূর্খ মানুষরা ওয়াজের মাহফিলে ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো জানতে পারে খুব সহজে।
আহারে-অনাহারে মোল্লা-মুনশিরাই প্রতিটি মানুষের দোরগোড়ায় ‘ইসলামের জ্ঞানাদর্শ’ পৌঁছিয়েছেন। মদিনার নীতি-আদর্শ পেয়ে বিবাদ ভুলে ভ্রাতৃত্বের মর্মকথা বুঝতে শিখেছে বাঙ্গালী জাতি। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সম্প্রীতি এবং সংখ্যালঘুদের প্রতি দয়াদ্রতার শিক্ষা পেয়েছে ইসলামের মাধ্যমে।
তবে সম্প্রতি ওয়াজ-মাহফিলকে কেন্দ্র করে মৃদু উত্তেজনা বিরাজ করছে কোথাও কোথাও। বাঙালী ঐতিহ্যের ওয়াজ-মাহফিল বর্তমানে নানা বিতর্কের সৃষ্টি করছে। কোথাও আয়োজক কমিটির দ্বারা হেনস্থার শিকার হচ্ছেন বক্তা কিংবা কোথাও ওয়াজের নামে চলছে বিনোদন। গত ১৯ ডিসেম্বর গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ওয়াজ মাহফিল করতে এসে আলোচিত ইসলামী বক্তা আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনান এবং তার তিন সহকারীকে অবরুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্তব্য জানিয়েছেন সোশ্যালিস্ট-লেখক সাইমুম সাদী। তার নিজস্ব ফেসবুক টাইমলাইনে তিনি লিখেছেন ‘ সাম্প্রতিক সময়ে অন্তত দুজন বক্তার সাথে অপ্রীতিকর আচরণ করেছে মাহফিল আয়োজক কমিটির লোকজন। মাওলানা তারেক মনোয়ারের সফর সংগীকে এক জায়গায় এবং অন্যখানে বক্তা আবু ত্ব হা আদনান ও সাথীদের সাথে বাজে আচরণ করা হয়েছে।
আয়োজক কমিটির কাজ বক্তার সুরক্ষা প্রদান। কিন্তু তারা যদি এমন আচরণ করে তাহলে তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। বক্তাদেরও কিছু করণীয় আছে৷ ভবিষ্যতে আয়োজক কমিটির লোকদের যাচাই বাছাই করে, প্রয়োজনে তাদের ইন্টারভিউ নিয়ে মাহফিল কনফার্ম করবেন।
তাছাড়া একদিনে এত প্রোগ্রাম না রাখাই উচিত। হাদিয়ার পরিমাণও সহনীয় পর্যায়ে করবেন কিনা ভেবে দেখবেন প্লিজ। লোকাল দালাল ফালাল বাদ দিবেন। ভাড়ামি ও কৌতুক কমিয়ে দ্বীনি আলোচনাকে প্রাধান্য দিবেন।
মাহফিল নিয়ে অনেক কথা ছিলো এবং থাকবে। কিন্তু যেভাবেই হোক একে চালু রাখতে হবে। এখনো কিছু মানুষ মাহফিল থেকেই হেদায়েতের পথে আসে আলহামদুলিল্লাহ। অগনিত মানুষ টিভি দেখেনা কিন্তু ইউটিউব দেখে, আলেমদের বয়ান শুনে। বক্তা ভাইয়েরা বিষয়গুলো ভেবে দেখবেন যদি সময় থাকে।’
ইমাম ও খতিব মুফতি জিয়াউর রহমান লেখেন ‘প্রচলিত পদ্ধতির ওয়াজ-মাহফিলের লাভ-ক্ষতি নিয়ে অন্তত বিগত ১০ বছর থেকে ভাবছি ও যোগ-বিয়োগ মিলাচ্ছি৷ ব্যক্তিগত অবজারভেশন মতে ওয়াজ-মাহফিলের এই আনুষ্ঠানিকতা ও ব্যয়ের তুলনায় লাভ খুব কমই হচ্ছে৷
অতীতে ইখলাস ছিলো৷ হেদায়াতও হয়েছে৷ এখন কর্তৃপক্ষ, বক্তা ও শ্রোতা সবার ইখলাসেই ঘাটতি৷ তাই এর উপকারও হচ্ছে না আশানুরূপ৷ তবে এই মাহফিল আয়োজন বন্ধ হোক, সেটাও চাই না৷ আগেকার ধাঁচে আমূল সংস্কার কিংবা উত্তম বিকল্প চালুর আগ পর্যন্ত এই সিস্টেমের মাহফিলই চালিয়ে নিতে হবে৷ যাতে এই গ্যাপটা বদদ্বীন দখল করে না নেয়৷
আপাতত মাহফিলগুলোকে শীতকালীন মুসলিম সংস্কৃতির অংশ হিসেবে ধরে নিলে আশানুরূপ লাভ না হলেও আশাহত হতে হবে না৷ কারণ ইসলামিক ধারার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোর দ্বারা দীর্ঘমেয়াদি লাভ না হলেও অপসংস্কৃতির তুলনামূলক উত্তম বিকল্প হিসেবে ধরা যায় ।’
আরএ/এটি