মাওলানা মাহমুদুল হাসান নু’মান।।
পাশ্চাত্য সভ্যতার ভিত্তি তিনটি- ডারউইনের বিবর্তনবাদ বা দেহতত্ত্ব, সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মানসিক ব্যাখ্যা বা মনস্তত্ত্ব, কার্ল মার্কসের সামাজিক বিবর্তনবাদ। এ তিনটি মতবাদ সম্পূর্ণ নাস্তিক্যবাদী দর্শনের উপর প্রতিষ্ঠিত।
বিবর্তনবাদঃ ডারউইনের মতে মানুষ বানর বা এ জাতীয় কোন প্রাণী থেকে বিবর্তিত হয়ে বর্তমান রূপ লাভ করেছে। কিন্তু তিনি বলে যাননি যে, পৃথিবীতে প্রথম প্রাণের উদ্ভব কি করে হলো। বস্তুত পাঁচশত খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিক দার্শনিক এনাক্সিমেন্ডার মনে করতেন প্রথম প্রাণের উদ্ভব হয়েছে সূর্যরশ্নি দ্বারা বাষ্পীভূত সামুদ্রিক আঠালো কাদামাটি থেকে।
পরবর্তীতে ডারউইনবাদিরা এ থিউরিটাই নতুন ভাবে উপস্থাপন করেন যে, ৩৮ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর ক্ষুদ্র কোন জলাশয়ে সূর্যরশ্নির রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে প্রথম এক কোষি একটি প্রাণীর (এমিবা) জন্ম হয়। তারপর কাল ক্রমে তা থেকে জটিল বহু কোষি প্রাণীর জন্ম হতে থাকে। একসময় কিছু প্রাণী পানি থেকে ডাঙ্গায় উঠে এসে বসবাস করতে থাকে। কোটি কোটি বছর পরিক্রমায় এসব প্রাণী বিবর্তিত হয়ে উদ্ভিদ ও প্রাণী জগতে বিভক্ত হয়ে যায়।
তারপর প্রাণী জগতের বানর বা বানর জাতীয় প্রাণী থেকে ক্রম বিবর্তনের মাধ্যমে মানবজাতির বিকাশ ঘটে। ডারউইন এ বিবর্তনের কারণ বর্ণনা করেন এভাবে- struggle for life and survival of the fittest বা জীবন যুদ্ধ এবং যোগ্যতমের উদ্বর্তন। অর্থাৎ খাদ্য বাসস্থান ইত্যাদি বিষয়ে টিকে থাকার জন্য জীবজগতে নিরন্তর সংগ্রাম চলছে। এই সংগ্রামে যে প্রাণী পরিবেশের সাথে নিজেকে অধিক খাপ খাওয়াতে পারে সে প্রাণী টিকে যায়, আর যে প্রাণী ব্যর্থ হয় তা বিলুপ্ত হয়ে যায়। এটাই হল যোগ্যের টিকে থাকা।
অনন্তর পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে গিয়ে প্রাণীদেহে জেনেটিক পরিবর্তন আসে। এই পরিবর্তন সে তার বংশধরে প্রবিষ্ট করতে পারে। এভাবে বংশ-পরম্পরায় পরিবর্তন হতে হতে এক সময় প্রাণীটি বিবর্তিত হয়ে ভিন্ন প্রজাতিতে আত্মপ্রকাশ করে। যেমন জিরাফ আগে হরিণের মতো ছিল কিন্তু উঁচু গাছের পাতা খেতে খেতে গলা লম্বা হয়ে ভিন্ন প্রজাতিতে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। ব্যস এই মতবাদে স্রষ্টার কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না।
ফ্রয়েডের মনস্তত্ত্বঃ ফ্রয়েডের মতে সকল রোগ-পিড়া ও অশান্তির কেন্দ্র বা উৎস হলো মন। এজন্য তার দর্শনকে মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা বলা হয়। তিনি মনকে তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন- অবচেতন (unconscious) অনবচেতন (pre-conscious) চেতন (conscious)। ফ্রয়েড মনে করেন মানুষের প্রেম ভালবাসা ঘৃণা বিদ্বেষ ক্রোধ সাহস হিম্মত ভয়-ভীতি দুঃখ বেদনা যৌনস্পৃহা উত্তেজনা প্রভৃতি মানবীয় হৃদয়াবেগের রূপ বিভিন্ন হওয়া সত্বেও এসবের উৎস হচ্ছে একটি মৌলিক আবেগ। আর তা হচ্ছে যৌনস্পৃহা। যৌন কামনা লালসার সেই মৌল আবেগটি মানুষের শুক্র কিটের মধ্যে বিদ্যমান।
মানুষের এই যৌনস্পৃহাকে চেতন মন উচিত অনুচিত বৈধ অবৈধ বিবেচনায় অনবচেতন স্তরের মাধ্যমে অবচেতন স্তরে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু এই উদ্দাম যৌন আকাঙ্ক্ষা আবার চেতন স্তরে আবির্ভূত হয়ে তার উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে চায়।
কিন্তু অনবচেতন স্তরের দ্বাররক্ষী তাকে ধাক্কা মেরে আবার অবচেতন স্তরে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে অতৃপ্ত কামনা-বাসনাগুলি ক্ষুধার্ত শার্দুলের মত চিৎকার ও ছটফট করতে থাকে। স্মৃতির বাইরে গভীর স্তর সমূহের নিচে চাপা পড়ে তা নানা দ্বন্দ্ব ও প্রচন্ড সংঘর্ষের সৃষ্টি করে- যা মনস্তাত্ত্বিক বা স্নায়ুরোগ বা হিস্ট্রিয়া রোগের কারণ হয়। কাজেই যৌন কামনায় অতৃপ্ত থাকলে প্রতিক্রিয়া হিসেবে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন রোগ পীড়া দেখা দেয়। এই যৌন লিপ্সাকে ফ্রয়েড পাঁচটি স্তরে ভাগ করেছেন।
১। মৌখিক অবস্থা (oral stage)। এর সময়কাল জন্মের ১২ -১৮ মাস পর্যন্ত। মৌখিক সক্রিয়তা হলো চুম্বন, খাদ্য গ্রহণ, চুইংগাম, কলম, পেন্সিল ইত্যাদি চিবানোর মাধ্যমে শিশুরা যৌন তৃপ্তি পায়।
২। পায়ু অবস্থা (anal stage)। এর সময়কাল ১- ৩ বছর পর্যন্ত। পায়ু সক্রিয়তা হলো পায়খানা পেশাব ইত্যাদির মাধ্যমে শিশুরা যৌনতৃপ্তি লাভ করে।
৩। শিশ্ন অবস্থা (phallic stage)। এর সময়কাল ৩ - ৬ বছর পর্যন্ত। এ সময়কালে ছেলে শিশুরা মায়ের প্রতি ও মেয়ে শিশুরা বাবার প্রতি যৌন আসক্তি অনুভব করে। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি পুত্র-কন্যার যৌনাকাঙ্ক্ষাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
ক। ইডিপাস কমপ্লেক্স- পুত্র সন্তান মায়ের প্রতি দৈহিক আসক্তি অনুভব করে কিন্তু মিলনের ক্ষেত্রে সে পিতাকে অন্তরায় মনে করে বিধায় বাবার প্রতি ঈর্ষা পোষণ করে। এ নামকরণের উৎস হলো বিখ্যাত গ্রিক নাট্যকার সফোক্লিসের (৪২৯ খৃষ্টপূর্বাব্দ) ইডিপাস নাটকের নায়ক ইডিপাস।
খ। ইলেক্ট্রা কমপ্লেক্স- কন্যা শিশু বাবার প্রতি যৌন কামনা অনুভব করে কিন্তু মিলনের ক্ষেত্রে সে মাকে অন্তরায় মনে করে, এজন্য মায়ের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে।
৪। সুপ্তযৌন অবস্থা (latency stage)। এর সময়কাল ৬ বছর থেকে কৈশোর পর্যন্ত। এ সময় যৌন অতৃপ্তি অবসন্নতা ডেকে আনে।
৫। উপস্থ অবস্থা (genital stage)। কৈশোর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত। অক্ষমতা, ধ্বজভঙ্গ, নারীর সম্পর্কহীনতা ইত্যাদি কারণে যৌন অতৃপ্তি থাকলে মানসিক সমস্যা ও রোগ পীড়া দেখা দেয়। ফ্রয়েডের থিউরি অনুসারে পূর্ণাঙ্গ মানসিক বিকাশ ও রোগাক্রান্ত না হওয়ার জন্য পাশ্চাত্যে সেক্স ফ্রী করে দেয়া হয়েছে।
ফ্রয়েডের খোজাকরণ উদ্বিগ্নতাঃ পুত্র সন্তান মায়ের প্রতি কন্যা সন্তান বাবার প্রতি আসক্ত হয়- ফ্রয়েড শুধু এটুকু বলেই ক্ষান্ত হননি বরং মানবিকতার সকল সীমা অতিক্রম করে তিনি খোজাকরণ উদ্বিগ্নতার থিউরি দিয়েছেন। তার মতে পুত্র সন্তান যখন মায়ের প্রতি আসক্ত হয় তখন সে বাবাকে তাদের মধ্যে অন্তরায় মনে করে।
কিন্তু সে বুঝতে পারে প্রতিপক্ষ তার চেয়ে প্রবল শক্তিমান, কোনোভাবেই সে বাবার সাথে পেরে উঠবে না। তখন সে বাবাকে ভয় পেতে শুরু করে, আশঙ্কা করে বাবা তার লিঙ্গ কর্তন, নষ্ট বা খুজা করে দেবে, অথবা লিঙ্গে আঘাত করবে। একইভাবে কন্যা শিশুও পিতার প্রতি আসক্ত থাকার কারণে তার মায়ের তরফ থেকে গুপ্তাঙ্গ হারানোর ভয়ে থাকে। এটাকে খোজাকরণ উদ্বিগ্নতা বলে।
যাই হোক, সৃষ্টির আদি থেকে একমাত্র ফ্রয়েড ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তি শিশুর একমাত্র অবলম্বন, ভরসা ও নির্ভরতার কেন্দ্র হিসাবে মা-বাবার প্রতি যে গভীর শ্রদ্ধা ভালোবাসা ও আকর্ষণ- এটাকে যৌনাকাঙ্ক্ষায় ব্যাখ্যা দানের মত দুঃসাহস দেখায়নি।
পিতা-মাতা ও সন্তানের শাশ্বত পবিত্র বন্ধনকে যে নরপশু কুৎসিত ব্যাখ্যায় আখ্যায়িত করে, তাদের স্বর্গীয় ভালোবাসাকে যৌনতার নিক্তিতে পরিমাপ করে পিতা-মাতা ও সন্তানকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করায়, তাদের মধ্যে শত্রুতার বীজ বপন করে দেয়, তাদের পবিত্র বন্ধনকে অশ্লীল অভিধায় অভিষিক্ত করে- সে কি বিজ্ঞানী নাকি পতিতালয়ের দালাল? সৃষ্টির আদি থেকে পৃথিবীর কোন পিতা-মাতা কবে কোথায় তাদের প্রিয় সন্তানের যৌনাঙ্গে আঘাত করেছিল বা খুজা করে দিয়েছিল? কাজেই এ অভিশপ্ত ইহুদির বিচার হওয়া উচিত।
ডারউইনের বিবর্তনবাদ থিউরি মানুষকে বানরের বংশধর তথা পশু বানিয়েছে, সোশ্যাল ডারউইনিজম মানুষের মানবিক মূল্যবোধ, নীতি-নৈতিকতা ও সহমর্মিতা বিলুপ্ত করে দিয়েছে, তারপর ফ্রয়েডের যৌন মনস্তত্ত্ব মানবতার কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দিয়েছে। ধিক শত ধিক, এরা সস্তা বাজারি পতিতালয়ের থিউরি দিয়ে বিজ্ঞানীর খাতায় নাম লেখায়। ফ্রয়েডের থিউরির কারণেই পশ্চিমারা যৌনতার ক্ষেত্রে মা ও কন্যার বাছ-বিচার করে না।
শ্রেণী সংগ্রাম বা সামাজিক বিবর্তন
লেনিন বলেছেন সমাজতন্ত্রের তিনটি উৎস ও তিনটি অঙ্গ রয়েছে। উৎস তিনটি হল চিরায়ত জার্মান দর্শন, ইউটোপিয়া বা কাল্পনিক সমাজতন্ত্র ও ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক অর্থনীতি। আর অঙ্গ তিনটি হল- দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ, শ্রেণী সংগ্রাম ও উদ্বৃত্ত মূল্যতত্ত্ব। এসবের ব্যাখ্যা দিতে গেলে একটা বৃহৎ গ্রন্থ হয়ে যাবে বিধায় আমি শুধু সংক্ষেপে শ্রেণী সংগ্রাম তত্ত্বটা তুলে ধরছি।
শ্রেণী সংগ্রাম তত্ত্বঃ কমিউনিস্ট ইশতেহারে কার্ল মার্কস বলেন "মানবজাতির জ্ঞাত ইতিহাস শ্রেণী সংগ্রামের ইতিহাস"। অর্থাৎ শ্রেণী সংগ্রামের ফলে সমাজ ও সভ্যতা উন্নত হতে হতে মানব জাতি বর্তমান আধুনিক সভ্যতায় উপনীত হয়েছে। এর কয়েকটি ধাপ রয়েছে যেমন-
(ক) আদিম সাম্যবাদী সমাজঃ আদিম যুগে ব্যক্তি সম্পত্তির ধারণা ছিল না। প্রকৃতি থেকে সবাই সমানভাবে খাদ্য-দ্রব্য আহরণ করত, তখন ছিল সমাজতান্ত্রিক সমাজ।
(খ) দাস মালিক সমাজঃ একসময় মানুষের মধ্যে ব্যক্তি সম্পত্তির ধারণা জন্মে। তখন সাম্যবাদী সমাজ ভেঙ্গে দাস মালিক সমাজের জন্ম হয়। আর তখনই শুরু হয় মালিক-শ্রমিকের মধ্যে শ্রেণী সংগ্রাম।
(গ) সামন্ত সমাজঃ মালিকের শাসন শোষণ ও অত্যাচারে দাস সমাজ ভেঙ্গে জন্ম নেয় সামন্ত সমাজ। (ঘ) পুঁজিবাদী সমাজঃ একদিকে ভূস্বামী সামন্ত প্রভু অন্যদিকে ভূমিহীন কৃষক। সামন্ত প্রভুর শাসন-শোষণে শুরু হয় শ্রেণী সংগ্রাম। ফলে জন্ম নেয় ধনতান্ত্রিক সমাজ।
(ঙ) সমাজতান্ত্রিক সমাজঃ কার্ল মার্কস মনে করেন, ধনতান্ত্রিক সমাজে উৎপাদন উপকরণের মালিক বুর্জোয়া ও পেটি বুর্জোয়া শ্রেণীর সাথে প্রলেতারিয়েত গোষ্ঠীর শ্রেণী সংগ্রাম অনিবার্য। কারণ শ্রমিক শ্রেণী বুর্জোয়া শোষকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে, বিপ্লবের মাধ্যমে তারা উৎপাদন উপকরণ ও রাষ্ট্রযন্ত্র হস্তগত করবে। এভাবে সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে। এটা হল সাম্যবাদী সমাজের প্রাথমিক স্তর।
(চ) সাম্যবাদী সমাজঃ কার্ল মার্কস মনে করতেন রাষ্ট্র, প্রশাসন, আইন-কানুন এসবই স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার। মানব সমাজে শ্রেণীর উদ্ভবের ফলে রাষ্ট্রের উদ্ভব অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। কিন্তু শ্রমিক শ্রেণী সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পর উৎপাদন উপকরণের সুপরিকল্পিত ব্যবহার ঘটিয়ে সমাজকে উত্তরোত্তর পরিপক্কতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
ফলে সমাজ থেকে শোষণ চিরতরে নির্মূল হবে, শ্রেণীর অস্তিত্ব এবং রাষ্ট্র বিলুপ্ত হবে। উৎপাদনের পরিমাণ এত বৃদ্ধি পাবে যে, মানুষ তখন নিজের প্রয়োজনীয় সামগ্রী অন্যের সাথে বিনা সংঘাতেই পেয়ে যাবে।
আর এ চূড়ান্ত পর্যায়টিই হল সাম্যবাদী পর্যায়। এই ধারণাটা নেয়া হয়েছে রাসূল (সাঃ) বর্ণিত আখেরি জামানার খেলাফত কনসেপ্ট থেকে। এ ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান হল কোন শ্রেণী সংগ্রাম নাই, কারো মালিকানা বিলুপ্ত না করে রাষ্ট্র সকল শ্রেণীর নাগরিকের মৌলিক চাহিদা পূরণ করবে, ছিন্নমূল পুনর্বাসন করবে, অক্ষমদের ভাতা দিবে। এ সম্পর্কে মুসলিম ঐক্যের ডাক গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
আলোচ্য তিনটি বস্তুবাদী দর্শনের উপর পাশ্চাত্য সভ্যতার ভিত রচিত হয়েছে। বস্তুত পনের শতকে রেনেসাঁর সাথে সাথে পশ্চিমারা ধর্ম বর্জন করে বিভিন্ন নাস্তিক্যবাদী মতবাদ উদ্ভাবন করতে থাকে। আর এসব বস্তুবাদী মতবাদ ঘষা-মাজা করে যুক্তি ও বিজ্ঞানের উপর দাঁড় করিয়ে ধর্মের জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করা হয়।
ফলে পশ্চিমা বিশ্ব ধর্মের স্থলে এসব মতবাদ গ্রহণ করে সেকুলার হয়ে যায়। পক্ষান্তরে তের শতকের পর থেকে মুসলিম বিশ্বে চিন্তার বন্ধ্যাত্য দেখা দেয়। তারা চিন্তার জগতে নতুন কিছু উদ্ভাবন তো দূরের কথা পাশ্চাত্যের ভিত্তিহীন অন্তসারশুন্য বিষাক্ত মতবাদগুলির পর্যন্ত বুদ্ধিবৃত্তিক মোকাবেলা করতে পারেনি।
এই সুযোগে পশ্চিমা বিষাক্ত মতবাদগুলি হুর হুর করে মুসলিম বিশ্বে ঢুকে পড়ে। আরো ভয়ংকর কথা হলো রাষ্ট্র রাজনীতি ও মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলি টোটালি ইসলাম থেকে বাদ পড়ে গেছে।
ফলে মুসলিম জাতি চিন্তা অর্থনৈতিক রাষ্ট্রীয় সকল ক্ষেত্রে পশ্চিমাদের দাসে পরিণত হয়ে গেছে। এখন এ থেকে উত্তরণের উপায় হল ইসলাম থেকে বাদ পড়া বিষয়গুলি সিলেবাসভুক্ত করতে হবে, পশ্চিমা বিষাক্ত মতবাদগুলির বুদ্ধিবৃত্তিক জবাব দিতে হবে, প্রকৃত ইসলাম কি ইসলাম কি চায়- এসব জানতে হবে। তাহলেই ইসলাম ও উম্মাহর বিজয় হবে।
স্মরণ রাখা দরকার, ইসলাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মতবাদ, এর মোকাবেলা করার মত অন্য কোন মতবাদ নাই। কাজেই এটা ইসলামের যুগ, এটা মুসলিম রেনেসাঁর যুগ।
-এটি