সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫ ।। ৮ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ২৩ শাওয়াল ১৪৪৬


‘মাদরাসার জরিপ প্রয়োজন হলে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জরিপ কেন প্রয়োজন নয়’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবু সাঈদ:।। জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি, দারুল উলূম দেওবন্দের সদরুল মুদাররিসিন মাওলানা আরশাদ মাদানি বলেন, আমাদের আপত্তি মাদরাসা জরিপের উপর নয়। আমাদের আপত্তি সাম্প্রদায়িক মানসিকতার উপর। গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপকালে মাওলানা আশরাদ মাদানি এসব কথা বলেন।

বিষয়টি আরেকটু স্পষ্ট করে তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে একটি মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক মহল সারাদেশে সাম্প্রদায়িকতা ও বিদ্বেষের পরিবেশ সৃষ্টি করে যাচ্ছে। সরকার এ ব্যাপারে বরাবরই ছিলো নির্বিকার। ফলে মুসলমানরা বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছে, বর্তমানের যে কোন সিদ্ধান্ত মুসলমানদের অস্তিত্ব বিনাশের জন্যই গৃহিত হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, মাদরাসার বিষয়াদি শুধরাতে হবে, কথাটি আপন জায়গায় ঠিক আছে। কিন্তু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যেহেতু সাম্প্রদায়িক মহলটির বিশেষ টার্গেট, সেজন্য এ ব্যাপারে যে কোন পদক্ষেপে আমাদের নেপথ্য কারণ দেখতে হয়। কওমী মাদরাসা ইসলাম ও মুসলিম স্বত্বার রক্ষাকবচ। তাই এ ব্যাপারে আমাদের সর্বদা সজাগ-সতর্ক থাকতে হবে।

মাওলানা মাদানি আরো বলেন, আমরা সবসময়ই আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংবিধান প্রদত্ত নীতির ভিত্তিতেই পরিচালনে সচেষ্ট থেকেছি। কিন্তু সাম্প্রদায়িক মহলটি বরাবরই এসব প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের হীন চেষ্টা করে এসেছে। আমরা তাদের ষড়যন্ত্র কখনই সফল হতে দিব না। ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব দেশের জন্য হুমকি নয়। বরং দেশের উন্নয়নের বিশেষ সারথি। গত দেড়শ বছরের ইতিহাস তার জ্বলজ্বলে সাক্ষী।

এক প্রশ্নের জবাবে মাওলানা মাদানি বলেন, আসামে মাদরাসাগুলোকে জঙ্গিবাদের আস্তানা বলা হচ্ছে। অথচ এর নূন্যতম কোন ভিত্তি নেই। এমন অযৌক্তিক একটি কারণকে পুঁজি করে উত্তরপ্রদেশে সকল অননুমোদিত মাদরাসা সমীক্ষা করার সার্কুলার জারি হয়েছে। এতে মুসলমানরা ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, এ ধরনের সার্কুলার জারির আগে মুসলমানদের আশ্বস্ত করার দরকার ছিলো। অথচ সেটা করা হয়নি। তাদের আশঙ্কাকে আরো বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে, উত্তরপ্রদেশে বিপুল সংখ্যক অনুনোমোদিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখানে কেবল কওমী মাদরাসাগুলোতেই সমীক্ষা চালানো হচ্ছে। এতে সার্কুলার জারির নেপথ্য উদ্দেশ্য নিয়ে শঙ্কা ঘনীভূত হয়েছে।

প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, অননুমোদিত বিদ্যালয়ের জরিপ প্রয়োজন হলে অন্যান্য অননুমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জরিপ কেন প্রয়োজন নয়? সরকারের উদ্দেশ্য সঠিক হলে এই বৈষম্য কেন? মাদরাসাগুলো কোথায়, কোন ভূমিতে স্থাপিত, কারা চালাচ্ছে, যদি এ-ই হয় জরিপের উদ্দেশ্য, তবে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। মাদরাসার দরজা সবার জন্য সবসময় খোলা। মাদরাসায় লুকিয়ে রাখার মতো কিছু নেই।

মাওলানা আরশাদ মাদানি বলেন, আসামের মুখ্যমন্ত্রী ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে মাদরাসা ধ্বংসের ন্যায্যতা প্রমাণের চেষ্টা করছেন। প্রশ্ন হলো, তিনি যে অভিযোগ তুলেছেন, তার আদৌ কোন ভিত্তি আছে? আমি তো নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, কিয়ামত পর্যন্ত সময় দেওয়া হলেও তিনি এর পক্ষে কোন প্রমাণ পেশ করতে পারবেন না।

মাওলানা মাদানি আরো বলেন, আসামের মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেস আমলেও মন্ত্রী ছিলেন। বিজেপি যখন প্রথম ক্ষমতায় আসে, তখনও মন্ত্রী ছিলেন। প্রশ্ন হলো, তিনি যখন মন্ত্রী ছিলেন তখন কেন আল-কায়েদা খুঁজে পাননি?

এক প্রশ্নের জবাবে মাওলানা মাদানি বলেন, মাদরাসায় বিশুদ্ধ ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা হয়। দেশের সংবিধান আমাদের নিজস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার অধিকার দিয়ে রেখেছে। মাদরাসায় কোরআন-হাদিস শিক্ষা দেওয়া হয়। কোরআন-হাদিসের শিক্ষায় সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের কোনো ঠাঁই নেই। যদি এমনই হতো, আমাদের ছাত্ররাও ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দিত। অফিস-বাস পুড়িয়ে দিত। রাস্তায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা করত। এটা তো বরং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা করে। তারা ট্রেনে আগুন দেয়। রাস্তায় হিংস্রভাবে দাঙ্গা-হাঙ্গা করে। তবে এখন কি বলা হবে, দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাস শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি ইউপির মুখ্যমন্ত্রী সাহারানপুর সফর করেছিলেন। তখন কিছু সাম্প্রদায়িক লোক দাবি তুলেছিলো, এখানকার শাইখুল হিন্দ নামে যে মেডিকেল কলেজটি আছে, তার নাম পরিবর্তন করে দেওয়া হোক।

মাওলানা মাদানি বলেন, ইতিহাস সাক্ষী, গোটা জাতি যখন গভীর উদাসীনতায় নিমজ্জিত, তখন দেশকে দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার স্বপ্ন দেখেছিলেন আমাদের আকাবিরগণ। অথচ আজ তাদের সেসব অবদানকে অস্বীকার করা হচ্ছে। তাদের বংশধরদেরকে দেশদ্রোহী ও দেশের শত্রু বলা হচ্ছে।

হাজার কোটি টাকার সম্পদ বিদেশে পাচার করেছে, অতপর বিদেশে গিয়ে ভোগ করছে, সাধারণ নাগরিকদের মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য করছে, এরা কি দেশদ্রোহী নয়? এদের মধ্যে কত মুসলমান আছে? কিন্তু সেসব দেখা হবে না। কারণ, তিক্ত হলেও সত্য, বিচারবিভাগ এখনো এতোটা স্বাধীন হতো পারেনি। সূত্র: দাওয়াত নিউজ

-এএস


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ