|| আদিয়াত হাসান ||
সম্প্রতি নতুন করে আলোচনায় এসেছে ‘গণতন্ত্র ও ভোট পদ্ধতি: ইসলামের দৃষ্টিকোণ’ বিষয়টি। আরো আলোচনায় এসেছে ‘প্রচলিত রাজনীতির ভোট পদ্ধতিকে জিহাদ বলা যাবে কি না?’ এ বিষয়ে কয়েক দিন ধরে ইসলামিক স্কলার ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসীর একটি ভিডিও অনেকের টাইমলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। এরই প্রেক্ষিতে শুরু হয় বিতর্ক। চলমান এই ইস্যুতে গবেষক আলেম মুফতি শামসুদ্দোহা আশরাফীর একটি লেখা আওয়ার ইসলাম পাঠকের জন্য তুলে ধরছি।
তিনি লিখেন-
(১) মাওলানা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী সাহেব কাদের কাফের ফাতওয়া দিলেন? প্রচলিত ইসলামি রাজনীতির সাথে জড়িত সবাই কি কাফের?
মাওলানা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী সাহেবের একটি ফতওয়া নিয়ে অনলাইন সরগরম। নাম উল্লেখ না করে কোন ইসলামিক রাজনৈতিক দলের নেতার দিকে ইংগিত করে তিনি বলেছেন তারা নাকি গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে শ্রেষ্ঠ জিহাদ বলেছে! হারামকে হালাল মনে করায় ওই নেতা কাফের এবং তাগুত হয়ে গেছেন! ভন্ড ও ভ্রান্ত হয়ে গেছেন।
আব্বাসী সাহেবের কাফের ফাতওয়া দেয়ার ভিত্তি দুটি। ১) নির্বাচনকে শ্রেষ্ঠ জিহাদ বলা ২) হালালকে হারাম মনে করা।
সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তিকে কাফের এবং তার দলকে ভ্রান্ত ও ভন্ড প্রমাণ করতে হলে এদুটির প্রামাণ্যতা প্রয়োজন। কারো কাছে এব্যাপারে সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকলে কমেন্ট বক্সে দেয়ার অনুরোধ থাকল।
ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলো সম্পর্কে আমার যতটুকু জানাশোনা আছে তা থেকে বলছি,কেউই প্রচলিত গণতন্ত্রকে হালাল মনে করেনা,হারাম মনে করেই অপারগতার কারণে অংশগ্রহণ করে মাত্র। আর এতদসংশ্লিস্ট কাজ জি হাদ আখ্যা দেন শাব্দিক অর্থে। হাকিকী অর্থে নয়।
যেহেতু তিনি কোন সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি বা দলের নাম উল্লেখ করেননি তাই প্রচলিত গণতান্ত্রিক রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি ইসলামি দল ও নেতাদের প্রতি এ ফাতওয়া আরোপের সম্ভাবনা রয়েছে।
কারণ প্রায় সকল ইসলামি রাজনৈতিক দলের কর্মী যারা রাজনীতি করেন তারা তাদের একাজকে মহান মনে করেই করেন। কেউ এতে জিহাদ শব্দ প্রয়োগ করে আবার কেউ সংগ্রাম শব্দ ব্যবহার করে।
আশা করছি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা এ ব্যাপারটা প্রয়োজন মনে করলে আলোচনায় আনবেন।
২) চলমান বিতর্কে ইসলামী আন্দোলন ও মুফতী ফয়জুল করীম সাহেব কতটুকু প্রাসঙ্গিক? মাওলানা আব্বাসী সাহেব তার ফাওতয়ায় কোন দল বা ব্যক্তির নাম নেননি। তাই সরাসরি ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ বা মুফতী ফয়জুল উদ্দেশ্য কিনা সেটা পরিস্কার না।
তর্কে খাতিরে যদি ধরে নেয়া হয় যে, তারাই উদ্দেশ্য তাহলে আব্বাসী সাহেব ও তার সমর্থকদের প্রমাণ করতে হবে কবে কোথায় নির্বাচনকে শ্রেষ্ঠ জিহাদ বলেছে? বা গণতন্ত্রকে হালাল মনে করেছে।
যতদুর জানি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কখনোই গণতন্ত্রকে হালাল মনে করেনি এবং দলীয়ভাবে এটাকে কখনো শ্রেষ্ঠ জিহাদ ঘোষণা দেয়নি।
বাকি থাকল,মুফতী ফয়জুল করীম সাহেব। সম্প্রতি তিনি এ বিষয়ে কোন কথা বলেছেন কিনা আমার জানা নেই। কারো জানা থাকলে লিংক দিয়েন।
বেশ আগে এ বিষয়ে তিনি কিছু কথা বলেছেন। প্রচলিত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে অংশগ্রহণকে জিহাদ আখ্যা দিয়েছেন। এনিয়ে তখন অনলাইন অফলাইনে প্রচুর আলোচনা সমালোচনা হয়েছে। এটা নিয়ে আমিও প্রতিবাদ করেছিলাম। এনিয়ে আমার একটা পোস্ট আশা করি মনে থাকার কথা।
পরে অবশ্য তিনি তার অবস্থান ক্লিয়ার করেছেন যে,তিনি শরয়ী জিহাদ বা হাকিকি জিহাদ তথা কিতাল বুঝাননি শাব্দিক অর্থে বুঝিয়েছেন।
এভাবে হলে আর কোন বিতর্কই থাকেনা। কারণ আমাদের পূর্বসুরীদের অনেকেই দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা হিসেবে শাব্দিক ও রুপক অর্থে এটা জিহাদ আখ্যা দিয়েছেন।
৩) চলমান ইস্যুতে বাহাসের ঘোষণা! -
ইস্যুটা পুরনো ও মীমাংসিত। সুতরাং এনিয়ে বাক্যালাপ, তর্ক-বিতর্ক প্রয়োজন নেই। কারো মনে চাইলে প্রচলিত ইসলামি রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত হতে না চাইলে দরকার নেই। আপনার মত করে আপনি দ্বীন কায়েমের মেহনত চালিয়ে যান।
কেউ কেউ ইসলামী আন্দোলন ও আমাদেরকে বাহাসের যুক্ত করে পোস্ট দিচ্ছেন?
এ দায়িত্ব এককভাবে ইসলামী আন্দোলন বা আমরা নিব কেন? যেহেতু ফাতওয়াদাতা তার ফাতওয়ায় কারো নাম নেননি ঢালাওভাবেই বলেছেন তাই প্রচলিত গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ইসলামী রাজনীতির সাথে যুক্ত সবাই এ ব্যাপারে দায়িত্ব নেয়া জরুরী।
তাছাড়া অগ্রহণযোগ্য সোর্স থেকে সভ্যতা, শালীনতা ও ভদ্রতা বিবর্জিত ভাষায় ঘোষিত কোন বাহাসের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার প্রশ্নই উঠেনা।
যারা এটা প্রচার করছেন এবং যে ভাষায় প্রকাশ করছেন এখান থেকে পরিস্কার যে আপনাদের উদ্দেশ্য কী? এটা সচেতন কারো কাছেই অস্পষ্ট নয়।
সুতরাং ফাউল জিনিস নিয়ে মাতামাতি না করে নিজ নিজ কাজে মনোযোগী হোন। দ্বীন কায়েমের জন্য আপনার / আমার কি অবদান সেগুলোর হিসেব করুন।
কেএল/