|| হুমায়ুন আইয়ুব ||
এতটা যত্ন করে হলরুমে নেগরানি করিনি কখনো। আগে পরে পরীক্ষার সময়গুলো নিজের মতো করেই কাটিয়েছি।
কখনো হলে গিয়েছি চা খেতে। পরিদর্শক হিসেবে। এক চুমুক দেখে চলে এসেছি।
বলা চলে নিজ আগ্রহ থেকে এবার অনেকটা শৃঙ্খলা মেনে পরীক্ষার পূর্ব প্রস্তুতি কিংবা পরীক্ষার হলে সময় দিচ্ছি।
রাজধানী ঢাকার শেখ জনূরুদ্দীন রহ দারুল কুরআন চৌধুরী পাড়া মাদরাসার হলে অবস্থান হলেও পুরো দেশের মাদরাসাগুলোর বুকে কান রাখার চেষ্টা করছি। অনুভব করছি। অনুভব করছি হলের প্রচন্ড নিরবতা। পরীক্ষার হলের সুই পড়ার নিস্তব্ধতা। মাদরাসা হলগুলোর এই নিরবতা আমাকে সাহস জুগিয়েছে। শক্তি জুগিয়েছে। আমার কানের কাছে, চিন্তার কাছে, সাহসের কাছে প্রেরণা জুগিয়েছে। এখনো চোখশাসনে পুরো হলরুম জেগে থাকে। জেগে থাকার এই দৃশ্য আগামী প্রজন্মের প্রতি আস্থার প্রদীপ জ্বেলেছে।
হলরুমে প্রবেশের আগে দুরাকাত নামাজ। তালিবে ইলমের হৃদয়ে প্রশান্তি ঢেলে দেয়। ডান পায়ে হলরুমে প্রবেশ করা ছাত্রটি উস্তাদের হাত থেকে যখন ডান হাতে খাতা বা কাগজ নেয় তখনো তার দিলজমিনে চাষ হয় সুন্নতে নববীর সবুজ চারা।
[caption id="" align="alignnone" width="555"] রাজধানীর চৌধুরীপাড়ার শেখ জনূরুদ্দীন দারুল কুরআন মাদরাসার প্রথম সাময়িক পরীক্ষার হলরুমের দৃশ্য।[/caption]
এইসব দৃশ্য দেখে আমার হৃদয়ে বেজে ওঠে একটি সাহসের কবিতা : নিরবতা আমাদের শক্তি! যতদিন এই পরীক্ষার হলরুমগুলো নিবিড় মনযোগী থাকবে, নিরব নিস্তব্ধ থাকবে; ততদিন আমাদের কেউ হারাতে পারবে না। পরাজিত করতে পারবে না। আমাদের ইলম প্রজ্ঞা ও চিন্তার মশাল কেউ নেভাতে পারবে না।
আমাদের হলের চারপাশে ছোট্ট ছোট্ট কাগজের চিরকুট পাওয়া যায় না। হলে, বাথরুমে, ময়লার ডাস্টবিনে কিংবা ছাদের কার্নিসে কুরআন বা হাদিসের কিতাবও লুকোচুরি করে না।
আমাদের দেওবন্দিধারার প্রতিটি সন্তান দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, এই পরীক্ষার হল, এই কাগুজে সার্টিফিকেট সাময়িক শান্তনা মাত্র। পরীক্ষার হল একটি আমানতগাহ। আমানতঘর। এই ঘরের পরেও ঘর আছে। নাম তার কবর। এই হলের পরেও হল আছে- হাশর।
তাই আমাদের বিশ্বাসে কবর। মাটির জায়নামাজ। আমাদের বিধানে হাশর। আমাদের সংস্কৃতি ও চেতনায় মিজান -পুলসিরাত।
পরকাল আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। আখেরাত আমাদের চূড়ান্ত ঠিকানা। পরীক্ষার এই হল, এই ইট বালিরঘর গৌণ। সাময়িক সুখ বা শান্তির জন্য চিরস্থায়ী আখেরাতের সুবজ বাগ-বাগিচা নষ্ট করতে পারি না।
আমাদের শিক্ষার্থীরা এটাও জানে, পরীক্ষার বিরাট ফলাফল কিংবা দিস্তা দিস্তা সার্টিফিকেট কাজের ময়দানে সহযোগী। তবে এটিই একমাত্র মাধ্যম নয়।
ইলমের সঙ্গে চাই আদব আর তাজিম। উস্তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা। কিতাব ও আসবাবে ইলমের প্রতি মহব্বত। মাদরাসার প্রতিও দায়িত্বশীল আচরণ।
আকাবিরের চিন্তা দর্শন ফেরি করে আমরণ চলবার প্রতিশ্রুতি আমাদের আগামীর শক্তি।
হে মহান রব! কাসেমী এই দস্তরখানের আমানতদার বানাও আমাদের। মনে বনে ফুটিয়ে দাও মাদানি ফুল। হৃদয়রাজে জ্বালিয়ে দাও থানবি মশাল।
পুনশ্চ : দেশের কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা চলছে। একজন হল পরিদর্শকের অনুভূতি মাত্র।
কেএল/