|| মুফতি এনায়েতুল্লাহ ||
দুই দিন আগে শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী তার ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে জানান, 'ফরেন ডেলিগেডসহ বিশেষ সফরে চট্টগ্রাম যাচ্ছি ইউএস-বাংলা ফ্লাইটে। থাকবো ২ দিন, সুহৃদগণ যোগাযোগ করতে পারেন।' পোস্টের সঙ্গে একটি সেলফিও যোগ করেন।
ওই স্ট্যাটাসে অনেকে কমেন্ট করেছেন। শাঈখ উছমান গনী তাদের জবাব দিয়েছেন। সেখানে সারওয়ার হোসাইন নামের একজন 'ফি আমানিল্লাহ, মিশন এবং ভিশনটা যদি বলতেন' লিখে কমেন্ট করেন। উত্তরে শাঈখ উছমান জানান, 'ঐক্য।'
সারওয়ার হোসাইন পরে জানতে চান কিসের ঐক্য? কিন্তু সেই প্রশ্নের উত্তর শাঈখ উছমান আর দেননি।
পরবর্তীতে জানা গেছে, শাঈখ উছমানের সঙ্গে থাকা ফরেন ডেলিগেট হলেন- ড. সাইয়্যেদ আলী রেযা মাহদি মুসাভী নামের এক ইরানি নাগরিক।তিনি শাঈখ উছমানের সঙ্গে চট্টগ্রামের জিরি, হাটহাজারী, মেখল, বাবুনগর ও পটিয়া মাদ্রাসা পরিদর্শন করেছেন। তন্মধ্যে জিরি, হাটহাজারী ও বাবুনগর মাদ্রাসার দায়িত্বশীল সঙ্গে সাক্ষাতে ছবি ফেসবুকে নানাজনের ওয়ালে দেখা যাচ্ছে।
এ সফরে আরো ছিলেন, ইরান দূতাবাসের পাবলিক রিলেশন্স ডিপার্টমেন্টের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ সাঈদুল ইসলাম ও অন্য আরেকজন।
ইরানি এই নাগরিকের মাদরাসা পরিদর্শন নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা চলছে। কেউ বলছেন, যে কেউ মাদ্রাসায় যেতেই পারেন, তাতে কোনো সমস্যা নেই।
আবার কেউ কেউ বলছেন, আগমনের কারণ স্পষ্ট করে, পরিচয় প্রকাশ করে শুধু শিয়া নয়, যেকোনো ধর্মের লোক যেকোনো মাদরাসা পরিদর্শন, মুহতামিমের সঙ্গে সাক্ষাত ও মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম দেখার অধিকার রাখেন। এ বিষয়ে কারও কোনো দ্বিমত নেই।
তাহলে ফেসবুক গরম কেন? আর শাঈখ উছমান কোন ঐক্যের কথা বললেন? এই প্রশ্নের উত্তরগুলো খুঁজে দেখা বেশি জরুরি। এই প্রশ্নটি তুলেছেনও বেশ কয়েকজন।
তন্মধ্যে হাটহাজারী মাদ্রাসার মুখপত্র মাসিক মুঈনুল ইসলামের নির্বাহী সম্পাদক মাওলানা মনির আহমদ তার ফেসবুকের একটি স্ট্যাটাসে বলেন, 'বহুল আলোচিত শিয়া আলেমকে যিনি সাথে করে চট্টগ্রাম নিয়ে এসেছেন এবং উক্ত শিয়া আলেমের নাম-পরিচয় আড়ালে রেখে ও নিজের পরিচিতিকে ব্যবহার করে কৌশলে কয়েকটি বিখ্যাত দ্বীনি প্রতিষ্ঠান ভিজিট ও বিশিষ্ট ইসলামী ব্যক্তিত্বদের সাথে উক্ত শিয়া আলেমের সাক্ষাত করিয়ে এক বিব্রতকর পরিস্থিতি ও অপ্রত্যাশিত বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন, আমি মনে করি সেই পথপ্রদর্শক/সফরসঙ্গী তরুণ আলেমের দায় সবচেয়ে বেশি। তার কর্তব্য, এই সফর ও মিশনের উদ্দেশ্য বিশ্বাসযোগ্যভাবে সবার সামনে ক্লিয়ার করা।'
মুসলিম বিশ্বের বিষফোঁড়া, শিয়া সম্প্রদায় সম্পর্কে অনেকেই না জেনে এটাকে মাজহাবি দ্বন্দ্ব ভাবেন। প্রসঙ্গটি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছনে মিজান হারুন। তিনি ফেসবুকে লিখেন, 'শিয়াদের সঙ্গে মুসলমানদের বিরোধকে যারা হানাফী-সালাফী, দেওবন্দী-জামাতী ইত্যাদি সম্পর্কের মতো ভাবেন তারা ভুল করেন। শিয়াদের বিরুদ্ধে আলিমদের সংগ্রামকে যারা স্রেফ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত মনে করেন, তারা শিয়াদের ইতিহাস ও আকীদা সম্পর্কে কিছুই জানেন না।
রাফেজীরা আবু বকর, উমর, আয়েশা, হাফসা কাউকে মুসলমান মনে করে না। যে নবীর সাহাবী আবু বকর সে নবীকে তারা অস্বীকার করে। এবং সে নবীর অনুসারীদেরকে তারা কাফের মনে করে। তারা আহলুস সুন্নাহর প্রতি যতোটা বিদ্বেষ রাখে, কাফিরদের প্রতিও ততোটা বিদ্বেষ রাখে না। তাই কিয়ামত পর্যন্ত শিয়াদের সঙ্গে আহলুস সুন্নাহর ভ্রাতৃত্ব সম্ভব নয়।
সাধারণ শিয়াদের কারও কারও আহলুস সুন্নাহর প্রতি সফট কর্নার থাকতে পারে। কিন্তু নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এবং পাগড়ীধারী মৌলভীদের চোখে আহলুস সুন্নাহর চেয়ে বড় দুশমন কেউ নেই। ফলে তারা যখন আহলুস সুন্নাহর মারকায আমাদের দীনী মাদরাসাগুলোতে আসে, তখন নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা নিয়ে আসে সেটা কোনোভাবেই বলা যায় না। বরং মিশনারী উদ্দেশ্য মুখ্য থাকার আশংকাই প্রবল। তাই মেহমান হিসেবে তাদের প্রতি সৌজন্য দেখানো যেতে পারে। কিন্তু ভাই হিসেবে বরণ করা হবে ভুল ও বোকামি।'
এই শঙ্কার জায়গাকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। মুসলমানরা সব হারিয়ে আজ নিঃস্ব। তারপরও আমাদের যতটুকু সম্বল আছে, তা আর হারাতে চাই না, আগলে রাখতে চাই আমাদের বুকের ধন মাদ্রাসা, মসজিদ ও ইসলামি ব্যক্তিত্বদের। ফেসবুকে যে ছবিগুলো ঘুরছে, তা আমাদের হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করছে। পুরো ঘটনায় আমার পর্যবেক্ষণ হলো, শাঈখ উছমান মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষকে কি বলে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করেছেন, তা স্পষ্ট করা। তিনি কোন ঐক্যের কথা বললেন জাতিকে তা জানানো।
নিজেদের মতপার্থক্যের দরুণ এ আলোচনায় অংশ নিয়ে শিয়াদের প্রতি সফট কর্নার দেখাচ্ছেন অনেক তরুণ, এটা থেকে বিরত থাকা। -লেখকের ফেসবুক থেকে নেয়া
কেএল/