।। মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন ।।
ফেসবুক, ইউটিউব প্রভৃতি সোশ্যাল মিডিয়াতে ভালো চর্চার পাশাপাশি মন্দ চর্চারও অভাব নেই। এখানে কত রকম নীতিহীনতা রয়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। এসব সোশ্যাল মিডিয়াকে একটা জগাখিচুড়ি ফিল্ড বললে অত্যুক্তি হবে না। এখানে শিক্ষিত, যোগ্য, দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন ও রুচিসম্পন্ন লোকের পাশাপাশি অশিক্ষিত, অযোগ্য, দায়িত্বজ্ঞানহীন ও কুরুচিপূর্ণ লোকেরও সমাবেশ রয়েছে এবং তাদের সংখ্যা নগন্যও নয়। তাদের দ্বারা এই ফিল্ড যাচ্ছে তাই হয়ে যাচ্ছে। তাদের কিছু লোক কত রকম অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, নীতিহীনতা, বিবেকহীনতা চর্চা করে যাচ্ছে, কত রকম বাজে চর্চা করে যাচ্ছে তা বর্ণনা করে শেষ করা কঠিন। সেসব বাজে চর্চার মধ্যে কয়েকটা নিম্নরূপ:
১. প্রতিপক্ষের আত্ম-মর্যাদায় আঘাত দিয়ে কথা বলা,
২. প্রতিপক্ষের টিকা-টিপ্পনী কাটা,
৩. প্রতিপক্ষের মান-হানিকর কার্টুন ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন,
৪. অশ্লীল অশ্রাব্য ভাষায় প্রতিপক্ষকে গালিগালাজ করা,
৫. ছুতোনাতা অজুহাতে প্রতিপক্ষকে কাফের ফাসেক ইত্যাদি ফতোয়া দেয়া,
৬. যার যোগ্যতা নেই তার যোগ্য ব্যক্তিদের সমালোচনা করা,
৭. বড়দের সমালোচনা করতে আদব-তমিজেরও বালাই না রাখা,
৮. সমালোচনার ভাষায় ভারসাম্য বজায় না রাখা,
৯. মানুষের দোষ খুঁজে খুঁজে সেগুলো অন্যদের শেয়ার করে কুরুচিকর আনন্দ উপভোগ করা,
১০. অন্যের কেলেংকারি জানতে পারলে প্রমাণিত হোক না হোক তা ছড়িয়ে মজা বোধ করা।
এসব অনিয়ম বিশৃঙ্খলার, এসব বাজে চর্চার কোনটাই শরীয়তসম্মত নয়, নীতিসম্মত নয়, সুরুচিসম্মত নয়, বিবেকসম্মত নয় বরং অনেকটাই পাপের। তা সত্ত্বেও এগুলো চর্চা করা হচ্ছে। অনেকে তো ভাল না মন্দ তা বিবেচনা ছাড়াই লঘু বিষয় ভেবে অবলীলায় সেগুলো করে যাচ্ছে। কুরআনের ভাষায়-
وتحسبونه هينا وهو عند الله عظيم
“তোমরা বিষয়টাকে লঘু মনে কর, অথচ আল্লাহর নিকট তা গুরুতর।” আবার অনেকে ভাল জ্ঞানেই সেগুলো করছে, যদিও প্রকৃতপক্ষে করছে মন্দ। কুরআনের ভাষায়-
الذين ضل سعيهم فى الحيوة الدنيا وهم يحسبون أنهم يحسنون صنعا
“দুনিয়ায় যাদের চেষ্টা-চরিত্র বরবাদ হচ্ছে অথচ তারা ভাবছে তারা ভালই করছে।”
ফেসবুকে যারা বিচরণ করেন, তাদের মধ্যে যারা আলেম রয়েছেন, সমঝদার রয়েছেন, দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন রয়েছেন তারা যদি এ জাতীয় অন্যায় ও পাপমূলক পোস্ট দেখলে তা লাইক শেয়ার না করে বরং প্রত্যেকে কমেন্ট করেন যে, এরকম বলা বা এগুলো প্রচার করা পাপ, তাহলে এ জাতীয় পোস্ট নিরুৎসাহিত হবে, এগুলোর পরিমাণ ধীরে ধীরে হ্রাস পাবে। যারা এরূপ করবেন তারা দ্বীনী দাওয়াত ও গর্হিত তৎপরতা ইসলাহের ছওয়াবও লাভ করবেন।
বিশেষত যারা আলেম, সমঝদার ও দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন তাদের দায়িত্বও রয়েছে শরীয়তবিরোধী কাজ দেখলে জবান দ্বারা সেটাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করা। এটা তাদের শরয়ী দায়িত্ব। কিন্তু আমাদের অনেকেরই হাবভাব দেখলে মনে হয় সোশ্যাল মিডিয়ার অঙ্গনে বুঝি এরূপ শরয়ী দায়িত্ব বলে কিছু নেই। তাই বুঝি তারা এখানে গাছাড়া। তাই বুঝি তারা এখানে যেদিকে হাওয়া চলে সেদিকেই নৌকার পাল খাটায়।
আল্লাহ্ আমাদেরকে সকল অঙ্গনে দ্বীনী দায়িত্ব পালন করার তাওফীক দান করেন। আমীন!
কেএল/