ড. ওয়ালীয়ুর রহমান খান। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তাকমীল সনদের স্বীকৃতি ও এমএ র মান প্রদানের পর কয়েক বছর চলে গেল। এখন পর্যন্ত নিচের তিনটি স্তরের সমমান নির্ধারিত না হওয়ায় কোন কওমী ছাত্র সরাসরি কোন ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, বিসিএসসহ কোন গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ কিংবা কোন সরকারি চাকরিতে আবেদন করতে পারছে না। আলিম পরীক্ষা ব্যতীত কোন কওমি ছাত্র বিদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে না।
ভিন্ন মত থাকা সত্যেও কওমি সনদের স্বীকৃতি নেওয়ার উদ্দেশ্যের মধ্যে বহির্বিশ্বে পড়ার সুযোগ সৃষ্টির বিষয়টিও ছিল। তাহলে হাইআতুল উলয়া ও বেফাকের এ সংক্রান্তে ভূমিকা কি? আমি কো চেয়ারম্যান শায়খ সাজিদুর রহমান (হা:) এর সাথে একান্তভাবেকথা বলেছিলাম।
তিনি আগ্রহী কিন্তু কিছু মুরব্বী মনে করেন, সব স্তরের সমমান হলে আলিয়ার মতো কওমি ছাত্ররাও দলে দলে দ্বাদশ শ্রেণী পাশ করে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাবে। এক সময় কওমি ধারার মূল উদ্দেশ্যই ব্যহত হয়ে যাবে! এজন্য তারা আর অগ্রসর হতে রাজি নন।
অন্যরা মনে করেন, কওমি ছাত্র ও তাদের অভিভাবকদের ধ্যান ধারণা আলিয়ার মতো নয়, তারা খুব বেশি ডাইভার্ট হবে না। তাছাড়া, আলিয়ার ছাত্রদের মধ্যে যারা মৌলিক ইলমে দীন হাসিলের পর অন্য শাখায় গিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করছেন, তাদের চিন্তা ও পারফরম্যান্স তো তুলনামূলক অন্যদের চেয়ে ইসলাম ও মুসলিম বান্ধব। এমতাবস্থায়, স্বীকৃতির সুফল আমাদের ছেলে মেয়েদের পাওয়ার জন্য উভয় বোর্ডের নেতৃবৃন্দের সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।
যদি সংস্কার বিরোধী মুরব্বীগণের আশংকা সত্যি হতে থাকে। তাহলে প্রয়োজনে বোর্ডের বাইরে পূর্ণ বৈশিষ্ট্যসহ একটি কওমি ধারা চলতেও পারে।
উচ্চ শিক্ষার সুযোগ লাভের জন্য অনেক ছাত্র ও শিক্ষক বেফাক ও হাইআতুল উলয়ার সহযোগিতার আশায় আছে।
আমি পরামর্শ দিয়েছিলাম, সবাই তো যেতে চায় না বা নাম্বারের কারণে যেতে পারবে না, যারা পারবে তাদের জন্য বোর্ডের অফিসে একটি সেল গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সাথে চিঠি চালাচালির মাধ্যমে অধিকার আদায় করা।
কিন্তু কিছু মুরব্বী আকীদা ও দেওবন্দিয়ত ক্ষুন্ন হওয়ার আশঙ্কায় এদেরকে আরব দেশে পাঠাতে রাজি নন। এখন যারা মনে করে যে, আমরা ইলম অর্জন করে বিশ্বের সর্বত্র সঠিক আকীদা ও দেওবন্দিয়তসহ কওমীদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারব, আমাদের দ্বারা অন্যেরা প্রভাবিত হোক বা না হোক আমরা প্রভাবিত হবো না।
এমন ছেলেরা নিজের চেষ্টায় আল আযহার, জামিয়া তাইয়েবাসহ কিছু বিশ্ব বিদ্যালয় এবং কাতার, দুবাই, তুরস্ক ও করাচির বিভিন্ন মা'হাদে ভর্তি হয়েছে।
অনেকে পড়া লেখা করে দেশে আসার পর ঐসব মুরব্বীগণের মাদ্রাসার উসতায, মাহফিলের বক্তা ও গর্বের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন। যেমন, সর্বজনাব ড: হিজবুল্লাহ, মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ, ড: ওয়ালীয়ুর রহমান, ড: খলীল, মুফতি রফিক মাদানী, নূমান মাদানী, ড: নাসির আযহারী, আব্দুল মতিন আযহারী, কিফায়াতুল্লাহ আযহারী প্রমুখ।
আমি বিগত ষোলো সতের বছরে অনেক ছেলেকে পরামর্শ, সুপারিশ ও তাযকিয়া দিয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ, কয়েক শ ছাত্র বহির্বিশ্বে গিয়েছে। সুনামের সঙ্গে আছে। বেশির ভাগ দেশে এসে দীনের খেদমতও করছে। আল্লাহ্ তাআলা যা কিছু ভালো তা করার তাওফিক দিন। আমীন।
-এটি