মুমিনের দোরগোড়ায় রহমত, বরকত, মাগফেরাতের মাস পবিত্র রমজান। অনেক মসজিদেই রমজানে খতম তারাবির ইমাম নিয়োগ ও ইন্টারভিউ কার্যক্রম শেষ। কোথাও কোথাও এখনো চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। দীর্ঘদিন ধরেই মসজিদগুলোতে খতম তারাবির ইমাম নিয়োগ দেওয়া হয় ইন্টারভিউ- এর মাধ্যমে।
সম্প্রতি তারাবির ইর্ন্টারভিউ দিতে গিয়ে অনেক হাফেজে কুরআনের সাথে ভোগান্তি-অস্বস্তিকর কিছু ঘটে যাওয়ার অভিযোগ উঠছে বিভিন্ন জায়গায়। অনেকের মন্তব্য, ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে মসজিদ কমিটির ব্যবস্থাপনা, ইন্টারভিউ নিয়ে জটিলতা- এমন অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় তাদের।
হাফেজে কুরআনদের অভিযোগ-অনুযোগ, ভোগান্তি- অস্বস্তির বিষয়টি নিয়ে আওয়ার ইসলাম মুখোমুখি হয়েছে অসংখ্য হাফেজে কুরআনের শিক্ষক, আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী বাংলাদেশি হাফেজ ও আন্তর্জাতিক পবিত্র কোরআন পদক প্রাপ্ত কারি নাজমুল হাসানের ।
হাফেজ, কারি নাজমুল হাসান কুরআনের হাফেজদের শিক্ষক পেশায় রয়েছেন ২৯ বছর ধরে। তিনি নিজেও রমজানে খতম তারাবির ইমামের দায়িত্ব পালন করেছেন প্রায় ২৬ বছর। বর্তমানে তিনি তাহফিজুল কুরআন ওয়াসসুন্নাহ মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক কারি সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন প্রতিবেদক নুরুদ্দীন তাসলিম।
তারাবির ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে অনেক হাফেজ ভোগান্তির শিকারের অভিযোগ করেন- এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য জানতে চাই?
হাফেজ, কারি নাজমুল হাসান: আল্লাহ তায়ালার রহমতে আমাদের দেশে হাফেজের সংখ্যা অনেক বেশি। ইমাম হিসেবে ভালো ও যোগ্য হাফেজ খুঁজে বের করতে হলে অবশ্যই ইন্টারভিউ নিতে হবে। তবে তারাবির ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে হাফেজরা যেই ভোগান্তির অভিযোগ করে থাকেন এটাও অনেক ক্ষেত্রে সত্য। অস্বীকারের সুযোগ নেই। তাই ইন্টারভিউ নেওয়ার সময় হাফেজদের যেন কোন ধরণের অসম্মান না হয় সে দিকটাও খেয়াল রাখতে হবে।
ইন্টারভিউ নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময় স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ওঠে - এ নিয়ে কী বলবেন?
হাফেজ, কারি নাজমুল হাসান: আমার মতে যদি মসজিদের কমিটি, ইমাম, মুয়াজ্জিন অথবা কোন স্টাফের আত্মীয় আগে থেকেই রেডি থাকে তাহলে তাকে আগেই নিয়ে নেওয়া উচিত। ইন্টারভিউ ডেকে অন্যদের হয়রানি করার কোন মানে হয় না। ইন্টারভিউ ডেকে হাফেজদের অসম্মান করা ও পরে নিজের ইচ্ছেমত কাউকে রেখে দেওয়ার পরিবর্তে শুরুতেই নিজেদের লোক থাকলে তাকে রেখে দেওয়া উচিত।
তারাবির ইমাম নির্ধারণে ইন্টারভিউ কেমন হতে পারে-এ বিষয়ে আপনার কোনো পরামর্শ আছে কি?
হাফেজ, কারি নাজমুল হাসান: আসলে এ বিষয়ে আমি হাফেজ ও মসজিদ কমিটি; দুই দিকের পক্ষ থেকে কথা বলবো, কারণ ইন্টারভিউ ছাড়া ভালো মানের হাফেজ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ইন্টারভিউ নিতে গিয়ে স্বজনপ্রীতি না করা এবং হাফেজদের জন্য আপ্যায়নের ব্যবস্থা রাখা। ইন্টারভিউতে দীর্ঘ সময় নিয়ে ভোগান্তি সৃষ্টি না করা। এবং হাফেজদের সাথে যাচ্ছেতাই ব্যবহার না করা।
আরো পড়ুন: রমজানের পূর্বেই রমজানের প্রস্তুতি নিতে যে উপদেশ দিয়েছিলেন আল্লামা শফি রহ.
এখানে আরেকটা বিষয় হল, প্রত্যেক মসজিদের নিজস্ব একটা পরিবেশ আছে। কমিটির নিয়ম আছে। ইন্টাভিউয়ের ভোগান্তি কমাতে কি ধরণের পদক্ষেপ ফলপ্রসূ হতে হতে পারে এটা তারাই ভালো বুঝবেন। তবে ভোগান্তি কমানোর মানসিকতা ও ইচ্ছে থাকতে হবে এটেই বড় বিষয়।
দেশের অনেক মসজিদে তারতিলের সঙ্গে তেলাওয়াতের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয় আবার কোথাও তাড়াহুড়ো করে তারাবি শেষ করার তাড়াও থাকে-এ নিয়ে হাফেজদের অস্বস্তিতে পড়তে হয়- বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চাইবেন কি?
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমরা তারাবি পড়েছি, সব দেশেই তারতিলের সাথে পড়াকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। শুধু উপমহাদেশ অর্থাৎ ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশে তাড়াহুড়ো করে পড়ার প্রবণতা দেখা যায়। আমাদের দেশের মুসল্লিদের মাঝেও এক ধরণের প্রবণতা আছে যে কত তাড়াতাড়ি পড়ে শেষ করা যায়। তবে, আলহামদুলিল্লাহ এখন কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। অনেকেই এখন ধীরেধীরে পড়াকে পছন্দ করেন।
আরো পড়ুন: রমজানে শিশু-কিশোরদের মসজিদ ও আমলমুখী করতে কতটা ভাবছেন অভিভাবকরা?
এক্ষেত্রে আমি বলবো, অবশ্যই স্পষ্ট করে পড়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এ জন্য মসজিদ কমিটিকে হাফেজদের সাহায্য করতে হবে। কারণ মুসল্লিদের কেউ কেউ হয়তবা চাইবেন যেন তাড়াহুড়ো করে তারাবি শেষ হয়ে যায়। এজন্য তারা হাফেজদের তাড়াও দিতে পারেন। তাই এক্ষেত্রে মসজিদ কমিটি কিছুটা শক্ত অবস্থানে থাকলে তারা মুসল্লিদের বুঝাতে পারবেন।
তারাবি পড়ানো তরুণ হাফেজদের প্রতি বিশেষ কোনো পরামর্শ অথবা বার্তা দিতে চাইবেন কি?
হাফেজ, কারি নাজমুল হাসান: আমি হাফেজদের বলবো এক জায়গায় ইস্তেকামাতের সঙ্গে ইমামতি করা উচিত। আমি ছাত্র জীবন থেকে শুরু করে যতদিন তারাবির ইমামতি করিয়েছে এক জায়গায় ইমামতি করিয়েছি। অন্য মসজিদে হাদিয়া বাড়িয়ে দিবে- এমন অফারে আগের মসজিদ ছেড়ে আসার বিষয়টি আমি সব সময় অপছন্দ করি এবং সব সময় এর বিরোধীতা করে এসেছি আমি।
অনেকে এক তারাবি থাকা অবস্থায় অন্য মসজিদে চলে যায় বেশি হাদিয়ার আশায়-এটা আসলে ঠিক না।
ছাত্র জীবনে অনেকেই আমাকে বলতো আরেক মসজিদে হাদিয়া বেশি দিবে সেখানে যাও- আমি কখনো এসব কানে নিতাম না। যখন আমাকে এমন অফার করা হয়েছিল তখন আমি অন্য মসজিদের ৩ ভাগের এক ভাগ হাদিয়া পেতাম কিন্ত আমি আমার আগের মসজিদ ছাড়িনি।
আরো পড়ুন: দরজায় কড়া নাড়ছে রমজান: চূড়ান্ত প্রস্তুতি যেমন হওয়া উচিৎ
তাই আমি তরুণদের বলবো তোমরা এক জায়গায় তারাবি পড়াও, এতে করে ইস্তেকাত ঠিক থাকে এবং এক জায়গায় তারাবি পড়িয়ে আরামও পাওয়া যায়।
অনেক সময় দেখা যায় কোন বিচারক হয়তবা কোন মসজিদে তারাবির ইন্টারভিউ নিতে গিয়েছেন, সেখানে গিয়ে এমন কোন হাফেজকে দেখলেন যাকে এখানে ইন্টারভিউ নিতে আসা বিচারক অন্য কোন মসজিদে তারাবির ইমাম হিসেবে ঠিক করে দিয়ে এসেছেন। তখন এই হাফেজের প্রতি বিচারকের ভালো ধারণা পাল্টে যায়। তাই আমি হাফেজদের এক জায়গায় ইস্তেকামাতের সঙ্গে ইমামতির পরামর্শ দিব।
আরো পড়ুন: তারাবির ইন্টারভিউ’র নামে হাফেজদের অভিযোগ-অনুযোগ