বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২৮ কার্তিক ১৪৩১ ।। ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


রমজানে মিডিয়াগুলো গতানুগতিক ধারার বাইরে কী ধরনের আয়োজন করতে পারে?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

নুরুদ্দীন তাসলিম।।

শুরু হয়েছে আরবি বর্ষপঞ্জির নতুন মাস শাবান। রমজান শুরুর আগেই রমজানের প্রস্তুতির মাস বলা হয়ে থাকে একে। রজব মাস শুরু হতেই নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তায়ালার কাছে বরকত কামনা করতেন এবং  রজব, শাবান পেরিয়ে রমজান পর্যন্ত হায়াতের জন্য দোয়া করতেন।

রমজানের পর অন্যান্য মাসগুলোর মধ্যে শাবান মাসে সব থেকে বেশি রোজা রাখতেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

উসামা বিন জায়েদ (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেছি, হে আল্লাহর রাসুল, শাবান মাসে আপনি যেভাবে রোজা রাখেন, সেভাবে অন্য কোনো মাসে রোজা রাখতে আমি আপনাকে দেখিনি।’

রাসুল (সা.) বলেন, ‘রমজান ও রজবের মধ্যবর্তী এ মাসের ব্যাপারে মানুষ উদাসীন থাকে। এটা এমন মাস, যে মাসে বান্দার আমল আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। আমি চাই, আল্লাহর কাছে আমার আমল এমন অবস্থায় পেশ করা হোক, যখন আমি রোজাদার। ’ (নাসাঈ, হাদিস : ২১৭৯)

বাংলাদেশের টেলিভিশন, রেডিও, অনলাইন ও কাগজের পত্রিকাগুলোতে রমজান কেন্দ্রিক বেশ কিছু আয়োজন দেখা যায়। দীর্ঘ সময় ধরে মিডিয়াগুলোতে রমজান কেন্দ্রিক আয়োজনগুলোকে অনেকটা একপেশে ও গতানুগতিক ধারার অনুষ্ঠানমালা বলে মন্তব্য করতে দেখা যায় অনেককে। নতুনত্ব অথবা সৃজনশীলতার কোন ছোঁয়া নেই মুমিনের আমল-ইবাদতের মাস রমজানকে ঘিরে।

বর্তমানে সবকিছুতে মিডিয়ার প্রভাব, মিডিয়াগুলো তাই রমজানের আগেই রমজান কেন্দিক আবহ তৈরি করতে শাবান থেকেই বিশেষ প্রচারণা চালাতে পারে ’ আওয়ার ইসলামকে বলেছেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, দৈনিক নয়া শতাব্দীর ইসলাম বিভাগীয় সম্পাদক, আন নূর জামে মসজিদের খতিব ও মাদরাসা আবু রাফে (রা.)-এর পরিচালক মাওলানা আলী হাসান তৈয়ব

তিনি বলেন, ‘ক্রিকেট-ফুটবলসহ বিভিন্ন আয়োজনকে ঘিরে দেশীয় মিডিয়াগুলোতে এক দু মাস আগ থেকেই এক ধরনের আবহ তৈরি করা হয়। খেলা শুরুর কতদিন সময় বাকি রয়েছে এ নিয়ে  সময় গণনা করতে দেখা যায় মাস খানেক আগে থেকেই। রমজান শুরুর আগে রমজানের প্রতি মানুষকে উৎসাহিত ও পুরোপুরি প্রস্তুত করতে এ ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে মিডিয়াগুলো’।

গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও ইসলামী আলোচক মাওলানা গাজী সানাউল্লাহ রাহমানী বলেছেন,‘ প্রয়োজনে অথবা দর্শকপ্রিয়তার কারণে মিডিয়াতে ইসলাম এখন অনেকটাই আবশ্যকীয় বিষয়। বর্তমানে প্রতিটি মিডিয়ায় ইসলাম ও ইসলামী বিষয়গুলো উপস্থাপন করছে এটি একটি ভালো দিক’।

আলোচনা করতে গিয়ে গাজী সানাউল্লাহ রাহমানী বলেছেন, একটা সময় টেলিভিশনগুলোতে ইসলামি রিয়েলিটি শো শুরু হয়েছিল; তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে পরবর্তীতে এটির চর্বিত চর্বণ হতে থাকল। তিনি বলেন, বাংলাদেশে  সমস্যা হলো কেউ নতুন কোন আইডিয়া বের করলে পরবর্তীতে এর অসংখ্য কপি করা হয়।‘

কপি কন্টেন্ট কখনও সৃজনশীলতার পরিচয় বহন করে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কেউ কুরআন নিয়ে কোন রিয়েলিটি শো করলে অন্য আরেকজন হাদিস নিয়ে রিয়েলিটি শো করতে পারেন। এতে কিছুটা বৈচিত্র আসবে।’

মাওলানা আলী হাসান তৈয়ব বলেছেন, ‘রমজান মাসকে প্রাণবন্ত করতে বিভিন্ন ধরনের আয়োজন করা যেতে পারে। উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, মাঠে ময়দানে বিভিন্নজনের রোজার অনুভূতি, জীবনে প্রথম রোজা রাখার গল্পের লাইভ প্রোগ্রাম করা যেতে পারে’।

‘রমজান কেন্দ্রিক বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে এগুলো নিয়ে টেলিভিশন, রেডিও, পত্রিকা, অনলাইনে বিভিন্ন ফিচার হতে পারে’।

‘দেশের বিভিন্ন জায়গায় রোজাদারদের জন্য ফ্রী ইফতার আয়োজন হয়ে থাকে এগুলোর বিভিন্নমূখী সম্প্রচার গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে আসার মাধ্যম হতে পারে’ বলে মন্তব্য মাওলানা আলী হাসান তৈয়বের।

মাওলানা গাজী সানাউল্লাহ রাহমানী বলেছেন, ‘গতানুগতিক ধারার বাইরে আয়োজনে ভিন্নতা আনতে গিয়ে কুইজ প্রতিযোগিতা দেখা গিয়েছিল; কিন্তু পরবর্তীতে এরও ব্যাপক কপি দেখা যাচ্ছে’। তিনি বলেন, ‘কপি কিছুটা থাকতে পারে, তবে এর মাঝে সৃজনশীলতা থাকতে হবে তাহলে মানুষ নতুন কিছু পাবে’।

মাওলানা আলী হাসান তৈয়ব বলেন, রমজান নিয়ে তারুণ্যের ভাবনাগুলো আলাদাভাবে উঠে আসতে পারে।

‘হাফেজদের তারাবি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সৃজনশীল আয়োজন হতে পারে, বিভিন্ন মসজিদে সুললিত কন্ঠে ধীরস্থিরতার সঙ্গে তারাবির জামাত হয়ে থাকে -এসব তারাবির তেলাওয়াত লাইভ সম্প্রচার হতে পারে’।

‘এছাড়াও মুসলিম বিশ্বের রমজান কেন্দ্রিক সংবাদগুলো গুরুত্ব দিয়ে সম্প্রচার মিডিয়াগুলোর জন্য বৈচিত্র আনবে’ বলে মন্তব্য করেছেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও খতিব মাওলানা আলী হাসান তৈয়ব।

মাওলানা গাজী সানাউল্লাহ রাহমানীর ভাষ্যমতে, আন্তর্জাতিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সৃজনশীলতা আনতে হবে মিডিয়াগুলোতে। সৃজনশীলতার মাধ্যমেই বৈচিত্র আসবে, দর্শক ভালো অনুষ্ঠান দেখতে পাবেন, তরুণরা নতুনভাবে কাজ করতে আগ্রহী হয়ে উঠবেন’।

তিনি আরো যুক্ত, ‘বাংলাদেশের দর্শকরা ইসলাম বান্ধব দর্শক, তারা ইসলামী নানা বিষয় সম্পর্কে জানতে চায়, তাই আমরা যারা মিডিয়াতে ইসলামকে বিষয় হিসেবে নিয়ে কাজ করে চলেছি তাদের উচিত সৃজনশীলতার মাধ্যমে দর্শকদের নতুন কিছু দেওয়া’।

এটি, এএ, এনটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ