নুরুদ্দীন তাসলিম।।
নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন পাসের বিষয়টিকে একপাশে রেখে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে ‘বৃহত্তর জোট’ করার উদ্যোগ নিচ্ছে বিএনপি। এজন্য ডান-বামসহ সব দলকে নিয়ে ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’ গড়তে তৎপরতা চলছে দলটির ভেতরে। তবে এতে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীকে আমন্ত্রণ না জানানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশের একটি প্রথম সারির গণমাধ্যমকে বলেছেন, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবি এখন সবার। এ ইস্যুতে আমরা বৃহত্তর ঐক্য গড়তে চাই। এরই মধ্যে ইসলামী আন্দোলন এবং বাম গণতান্ত্রিক জোটের কয়েকটি দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে। আরও বেশ কয়েকটি দল বিএনপির সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে। শিগগিরই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করব। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল বাদে সব দলকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
‘বৃহত্তর ঐক্য’ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে ইসলামী আন্দোলনের বৈঠকের খবর ছড়িয়ে পড়তেই এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়েছে। পক্ষে-বিপক্ষে অনেকেই যুক্তিতর্ক পেশ করেছেন। আলোচনায় উঠে এসেছে ইসলামী আন্দোলনের আদর্শগত অবস্থানের বিভিন্ন দিক।
এদিকে ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে গণমাধ্যমকে দেওয়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের এই বক্তব্য অসত্য বলে দাবি করেছেন দলটির যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।
‘বিএনপির মতো একটি দলের মহাসচিবের এমন বক্তব্য বিস্মিত করেছে’ বলে আওয়ার ইসলামকে জানিয়েছেন তিনি।
‘নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছি আমরা। জনগণ ও রাষ্ট্রের স্বার্থে যারাই কথা বলবে তাদের পক্ষে নৈতিকভাবে সমর্থন থাকবে ইসলামী আন্দোলনের। চাই তা বিএনপি হোক অথবা অন্য কোন দল। তবে ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব যে দাবি করেছেন তা পুরোপুরি অসত্য’ বলেছেন মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।
এ বক্তব্য নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিএনপি দেশের একটি প্রধান রাজনৈতিক দল, দলের মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাজনৈতিক শিষ্টাচারের তোয়াক্কা করেননি। তবে এ নিয়ে পাল্টা প্রতিক্রিয়া বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করবে। অবস্থা ঘোলাটে হয়ে যাবে। মির্জা ফখরুলও অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন, তাই একটি দলের মহাসচিবের সম্মানের দিকে তাকিয়ে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে আপাতত কোনো ধরনের মন্তব্য ও প্রতিক্রিয়া জানাতে চাইছি না’।
রাজনীতির স্বার্থে ‘বৃহত্তর ঐক্য’ গঠনে ইসলামী আন্দোলনের কোন ধরনের আগ্রহ আছে কিনা ?- এ বিষয়ে দলটির যুগ্ম মহাসচিবের বক্তব্য হল, এটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কারো সাথে জোট গঠনের বিষয়ে ইসলামী আন্দোলনের নিজস্ব আদর্শ ও নীতিমালা রয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক দল হিসেবে জনপ্রত্যাশার বিষয়টি নিয়েও ভাবতে হয়। সংকট, আন্দোলনে জনগণ যদি মনে করে কোন দলের সাথে ইসলামী আন্দোলনের ঐক্য করা প্রয়োজন তাহলে সেটি সময় এবং পরিস্থিতি বুঝেই করা হবে’।
এদিকে ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠক বিষয়ে বিএনপির মতামত জানতে চাইলে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান আওয়ার ইসলামকে জানিয়েছেন, ‘এ বিষয়ে এখনো নির্দিষ্ট কোন দলের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা হয়নি এবং কোন ইন্টারভিউও দেওয়া হয়নি’।
ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে যে খবর ছড়িয়ে পড়েছে তা এখনো নজরে পড়েনি এবং এ বিষয়ে এখনো কিছু জানেন না বলে উল্লেখ করেছেন শাইরুল কবির খান।
তিনি বলেছেন, ‘‘বৃহত্তর ঐক্য’ গঠনে সব দলের সাথে বসার বিষয়ে দলের ভেতরে আলোচনা চলছে, তবে এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে কোন দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো আলোচনা হয়নি। আলোচনা বিষয়ে সব কিছু ঠিক হলে হলে মিডিয়াকে জানানো হবে’ বলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান ।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে নির্বাচন কমিশন গঠন আইন পাস হয়। এর একদিন পর গত শুক্রবার রাতে লন্ডনে বিএনপির সিনিয়র ভাইসচেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসে বিএনপি। রাত নয়টা থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা বৈঠকে নির্বাচনকালীন ‘নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ প্রশাসন’ প্রতিষ্ঠায় ‘এক দফা আন্দোলনে’ যাওয়ার বিষয়ে একমত প্রকাশ করে নেতারা।
পাশাপাশি সরকারবিরোধী সবগুলো দলকে একই ছাতার নিচে আনতে চাচ্ছে দলটি। বিশেষ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলের ব্যর্থতার পর থেকে অনেক দিন ধরেই বিএনপি সরকারবিরোধী একটি বৃহত্তর ঐক্যের চেষ্টা চালাচ্ছে।
এটি/এনটি