সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

আলেমদের চোখে সংলাপ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

নুরুদ্দীন তাসলিম।।

নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপে বসেছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ। সংলাপে অংশ নিতে প্রথম দিন বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেছে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। রাষ্ট্রপতির কাছে তিনটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছে দলটি। জাতীয় পার্টি ছাড়াও রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে সংলাপের জন্য আটটি রাজনৈতিক দলের সাক্ষাতের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়েছে।

‘সংলাপ ইতিবাচক’

এ সংলাপকে ইতিবাচক বলেছেন ইসলামী চিন্তাবিদ ও জামিয়া ইকরা বাংলাদেশের মুহতামিম আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ

তিনি আওয়ার ইসলামকে বলেছেন, ‘ইসলাম সংলাপকে সবসময় উৎসাহিত করেছে। সে দৃষ্টিকোণ থেকে সংলাপ ইতিবাচক এবং একটি ভালো দিক। তবে সংলাপের ফলাফল কি বা কেমন হবে এ বিষয়টি ভালোভাবে বুঝবেন সংলাপের সাথে সম্পৃক্ত দলগুলো এবং এর ফলাফলও নির্ভর করে তাদের উপর’।

এ বিষয়ে সমাজচিন্তক ও গবেষক আলেম মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী বলেছেন, ইসি গঠনে সংলাপের বিষয়টি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ইস্যু। রাজনৈতিক প্রক্রিয়াতেই এর সমাধান হতে হবে।

তিনি বলেছেন, ‘এ নিয়ে দেশে আইন এবং সংবিধান আছে, সরকার সে প্রক্রিয়াতেই এগোবে। তবে এই আইন পরিবর্তন এবং নতুন আইন প্রণয়নের দাবি বিরোধীরা জানাতে পারেন সে অধিকার তাদের রয়েছে’।

‘কৌশলের মাধ্যমেই রাজনীতিতে টিকে থাকতে হবে’

সংলাপ কার্যকরী এবং অর্থবহ হয় না বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন; এ বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় রয়েছে তারা অবশ্যই আইনকে নিজেদের পক্ষে কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে। বিরোধীদেরও উচিত আইনের মাধ্যমেই তাদের সাথে লড়াই করা। ‘কেউ ঠকছেন কেউ ঠকাচ্ছেন’ এজাতীয় বক্তব্য এখানে প্রযোজ্য নয়, কারণ কৌশলের মাধ্যমেই রাজনীতিতে টিকে থাকতে হবে’-বলেন তিনি।

‘ক্ষমতায় টিকে থাকা এবং ক্ষমতার যাওয়ার লড়াই চলে এখানে। তাই এখানে লক্ষণীয় হল কাজগুলো আইন মোতাবেক হচ্ছে কিনা। আইনের মাধ্যমে সবাইকে এগোতে হবে’ আওয়ার ইসলামকে বলেন মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী।

‘যেসব দল সংলাপের জন্য আমন্ত্রণ পাচ্ছে তাদের উচিত সংলাপে অংশগ্রহণ করে নিজেদের দাবি জানানো। এক্ষেত্রে বিরোধীদের সমন্বয় যদি কোন একটি দাবিকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয় অধিকাংশ দলের পক্ষ থেকে তাহলে রাষ্ট্রপতি তা নিয়ে চিন্তা করতে বাধ্য থাকবে। কিন্তু বিরোধীদের সমন্বয়ে এমন কিছু হয়েছে বলে আমার জানা নেই’ বলেন এই গবেষক আলেম।

 ‘বিরোধী দলগুলোর সমন্বয় কার্যকরী পদক্ষেপ হতে পারে’

তিনি আরো যুক্ত করেন, ‘বিরোধী দলগুলোর সমন্বয়ে যদি কোন বিষয়ে দাবি জানানো হতো, বিষয়টি যদি এমন পর্যায়ে যেত যে ১৫ টি দল মিলে একই ধরনের প্রস্তাবনা বেশ করেছে, তাহলে বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবশ্যই ভাবতে হত। এবং এই দলগুলোর পক্ষ থেকেও এটা বলার সুযোগ থাকত যে আমরা এতগুলো দল মিলে এই দাবি দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু বিরোধী দলগুলোর মধ্যে এমন কিছু হয়েছে এমন কোন খবর আমার কাছে নেই’।

তিনি আরো বলেছেন, ‘অসম্ভব কোন দাবী না করে যে প্রক্রিয়ায় সংলাপ চলছে এর মাধ্যমেই নিজেদের সর্বোচ্চ দাবি জানানো উচিত’।

সংলাপের বিষয়ে অনেক রাজনৈতিক দল এখনো স্থির কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। এছাড়া বিএনপি এই সংলাপকে অর্থহীন উল্লেখ করে তারা এতে অংশগ্রহণ করবে না বলে জানিয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, অতীতে রাষ্ট্রপতির ডাকে সংলাপে গিয়ে আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। কোন সংলাপেই জনমতের প্রতিফলন ঘটেনি সব লোক দেখানো।

এ বিষয়ে মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী বলেছেন, বিএনপি এ দেশের সাবেক শাসক দল ও একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক গোষ্ঠী। গত কয়েকে মেয়াদে সংসদে তাদের প্রতিনিধি খুব একটা ছিল না। দেশব্যাপী তাদের কতটা জনপ্রিয়তা এর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আইন এবং প্রচলিত ধারায় পার্লামেন্টে তাদের অবস্থান কতটা পাকাপোক্ত। তাই অফিশিয়ালি সংলাপের আমন্ত্রণ পেলে বিএনপি'র উচিত হবে সংলাপে অংশগ্রহণ করা এবং জনগণের সামনে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করা।

তিনি বলেন, যতক্ষণ দেশে সরকার এবং আইনে আছে, ততক্ষণ প্রচলিত ধারা মেনেই থাকতে হবে বিরোধীদলকে। এর বাইরে আন্দোলনের মাধ্যমে কিছু করতে চাইলে সেটাও আইনের ভেতরে থেকেই করতে হবে।

‘রাজনীতিতে মন্দ প্রবণতা’

'আমাদের দেশে একটি মন্দ প্রবণতা রয়েছে যে বিদেশি কেউ হয়তোবা হস্তক্ষেপ করে কারো হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। এমনটা ভাবা এবং এই প্রক্রিয়ায় এগোনো দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য ক্ষতির, এবং জাতির ভবিষ্যতকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয় এই প্রবণতা। কাজেই এমন চিন্তা ভাবনা কখনোই কোন কল্যাণ বয়ে আনে না' আওয়ার ইসলামকে বলেছেন তিনি।

ইসি গঠনে সংলাপকে অনেকে কার্যত আনুষ্ঠানিকতা বলে উল্লেখ করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, রাষ্ট্রপতির সংলাপ শুরু হলে দেশের রাজনৈতিক তৎপরতা আলোচনার টেবিলে গড়াবে। এতে রাজনৈতিক উত্তেজনা কিছুটা কমবে। চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে পাঠানো নিয়ে বিএনপি মাঠ গরমের যে চেষ্টা করছে, তাতে ছেদ পড়বে। এ ছাড়া বিতর্ক ও সমালোচনার মুখে প্রতিমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হওয়া মুরাদ হাসানকে নিয়ে আলোচনা, ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানের একটি পর্বে ‘মুজিববর্ষ’ ভুল বানানে লেখা নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে সরকারের যে সমালোচনা হচ্ছে, সেসবও মিলিয়ে যাবে।

‘ইস্যুকে কেউ ঝুলিয়ে রাখতে চায় না’

মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী বলছেন, শুধু সরকার নয়, প্রত্যেকেই ব্যক্তিগত জায়গা থেকে কোন ইস্যুর কবলে পড়লে সেখান থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করেন, কেউ বিপদে পড়ে থাকতে চান না।

সরকারও অবশ্য চাইবে না কোন একটা ইস্যুকে ৬ মাস ঝুলিয়ে রাখতে। এছাড়া স্বাভাবিক নিয়মেও কোন কিছু একটা বিষয়ে আটকে থাকে না। তাই ইস্যু থেকে বের হওয়ার যেকোনো ধরনের চেষ্টা তারা চালাবেন। বিরোধীরা যদি ক্ষমতাসীনদের কোন ইস্যুতে আটকে রাখতে পারে তাহলে এটা তাদের পারদর্শিতা, বলেছেন সমাজচিন্তক গবেষক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী।

তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপ

প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে এবার তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

প্রথমবার ২০১১ সালের ২২ ডিসেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমান বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে ডাকেন। দ্বিতীয়বার ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সংলাপ শুরু হয়, চলে ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। বঙ্গভবনে পর্যায়ক্রমে মোট ৩১টি রাজনৈতিক দল এই সংলাপে অংশ নেয়।

উল্লেখ্য, বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। পরদিন নতুন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করবে।

এর আগে রাষ্ট্রপতি ২০ জানুয়ারির মধ্যে নতুন সার্চ কমিটি গঠন করবেন। এই সার্চ কমিটি রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে নতুন কমিশন গঠনে সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রস্তুত করবে। সার্চ কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে সিইসির জন্য দুইজন, চারজন নির্বাচন কমিশনারের জন্য ৮ জনের নাম প্রস্তাব করবে। পরে সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত মোট ১০ জনের নামের তালিকা থেকে একজন সিইসি ও ৪ জন নির্বাচন কমিশনার চূড়ান্ত করবেন রাষ্ট্রপ্রধান।

আরো পড়ুন: ‘শুধু ভালো ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সময়ে নির্দলীয় সরকার প্রয়োজন’

এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ