মোস্তফা ওয়াদুদ::
নিউজরুম এডিটর
ওয়াজ-মাহফিল একটি দীনি বিষয়। সুতরাং দীনের অন্যান্য বিষয়ের মতো এক্ষেত্রেও রাসূল সা., সাহাবায়ে কেরাম ও সালফে সালেহীনের অনুকরণ করা জরুরি। মানুষের ব্যক্তি জীবনের পরিশুদ্ধি ও আকিদা-বিশ্বাসের সংশোধনের ক্ষেত্রে ওয়াজ মাহফিলের গুরুত্ব অপরিসীম। ওয়াজ-মাহফিল নতুন কোন বিষয় নয়। যুগ যুগ ধরে তা নিজস্ব গতি ও নিয়মে চলে আসছে।
একসময় মাহফিলগুলো সাধারণত মাদরাসা কেন্দ্রিক অনুষ্ঠিত হতো। তবে আশার কথা হলো, এখন শুধু মাদরাসা নয়, প্রতিটি গ্রাম-গঞ্জ-পাড়া-মহল্লা ও প্রতিটি রোডে রোডে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, যুব সংঘ/সংস্থা/পরিষদ ও ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে মাহফিলের আয়োজন করা হয়ে থাকে।
তবে বাংলাদেশে শীত মৌসুমেই এসব ওয়াজ-মাহফিল বেশি হয়ে থাকে। মাঠে-ময়দানে আয়োজিত হয় এসব মাহফিল। দলে দলে মানুষ আসেন সেসব মাহফিলে। এগুলোতে বয়ান করেন দেশের প্রখ্যাত বক্তাগণ। তারা আলোচনা করেন কুরআন-হাদিস নিয়ে। তুলে ধরেন ইসলামের চিরন্তন সত্যের কথা। প্রচার করেন রাসূল সা. এর বাণী। জনগণের সঙ্গে শেয়ার করেন রাব্বুল আলামিনের বড়ত্ত্বের কথা। সাধারণ মানুষ সেসব শুনেন মনোযোগসহ। আমল করেন নাজাতের জরিয়া মনে করে।
দেশে করোনার কারণে গতবছর ওয়াজ-মাহফিল বন্ধ ছিলো। তবে এবছর পুরোদমে চলছে দীন শেখার এ মজমা। সেখানে দেশের নামকরা বক্তাগণ কুরআন-হাদিসের আলোকে বয়ান করছেন।
কিন্তু বর্তমানে আমলদার ও ইলমী আলেমদের পাশাপাশি কমেডিয়ান কিছু বক্তাও নেমেছেন ওয়াজের ময়দানে। মাহফিলের আয়োজকগণও শ্রোতাদের আকৃষ্ট করতে দাওয়াত দিচ্ছেন তাদের। এতে দীন শেখার এ বিশাল ময়দান এখন সমালোচনার পাত্রে পরিণত হতে চলছে।
এমতাবস্থায় মাঠে-ময়দানে ওয়াজ-মাহফিলের জন্য কেমন বক্তা প্রয়োজন। বক্তাদের মানদণ্ড কেমন হওয়া উচিত। ওয়াজের মানদন্ডই বা হতে পারে কেমন? এসব বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথা হয়েছে দেশের প্রখ্যাত দুজন আলেমের সঙ্গে। তারা কুরআন ও হাদিসের আলোকে নম্র ভাষায় বয়ানের পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি ইলমী এস্তেদাদ সম্পন্ন আলেমদের ওয়াজের ময়দানে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন।
বক্তাকে হতে হবে আমলদার ও মুহাক্কিক আলেম: অধ্যক্ষ আবু বকর সিদ্দিক
দারুন নাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘একজন বক্তা কুরআন-সুন্নাহর আলোকে বয়ান করবেন। তাকে হতে হবে মুহাক্কিক ও আমলদার আলেম। ব্যক্তিজীবনে তিনি যেসব বিষয়ের আমল করেন বয়ানে সেসব বিষয়ের আলোচনা করবেন। কখনো কোনো অপব্যাখ্যা করবেন না। বয়ানের মাঝে এমন কোনো কথা বলবেন না, যার মাধ্যমে সমাজে বিভেদ তৈরি হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি কখনো কেউ এমন বক্তব্য দিয়ে থাকেন, যার কারণে সমাজে ফেতনা তৈরি হয়। তাহলে তাকে অবশ্যই সে ভুল শুধরিয়ে নেওয়া উচিত। কেননা একজন বক্তার বক্তব্যে যদি ভুল হয়, আর সেটা শুনে সাধারণ মানুষ যদি আমল করে তাহলে এর গুনাহ সে বক্তার আমলনামাতেও যোগ হতে থাকবে। তাই খুব সতর্কতার সঙ্গে কুরআন-হাদিসের আলোকে বয়ান করতে হবে।’
শালীনতাপূর্ণ আলোচনা ও উস্কানিমূলক বক্তব্য পরিহার করতে হবে: মাওলানা রফিকুল ইসলাম আল মাদানি
বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা রফিকুল ইসলাম আল মাদানি বলেন, ‘ওয়াজ হতে হবে শালীনতাপূর্ণ। সেই সঙ্গে উস্কানিমূলক বক্তব্য পরিহার করতে হবে। যিনি ওয়াজ করবেন কুরআন-হাদিস সম্পর্কে তার যথেষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে। বক্তা অবশ্যই পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে বয়ান করবেন।’
সুতরাং বয়ানের জন্য এমন কোনো বক্তাকে দাওয়াত না করা, যিনি পরিবেশ বুঝেন না। যার বয়ানের মাধ্যমে মসজিদ-মাদরাসার ক্ষতি হয়। আলেম-উলামার ক্ষতি হয়। এমন বক্তাকে পরিহার করে ইলমী, আমলী ও নম্রভাষী বক্তাদের দাওয়াত দিলে ওয়াজ-মাহফিল সমালোচনামুক্ত হবে বলে জানান দেশের বিজ্ঞ এ আলেম।’
এমডব্লিউ/