সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ২৩ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে ক্ষোভ, প্রতিবাদ জানালেন শায়খ আহমাদুল্লাহ বিবাহ একটি ইবাদত, এর পবিত্রতা রক্ষা করা জরুরি নারী অধিকার কমিশনের সুপারিশে আলেম প্রজন্ম-২৪-এর আপত্তি  জুলাই-আগস্টের ত্যাগের পরও কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ পাইনি: মির্জা ফখরুল নারীবিষয়ক সুপারিশগুলো কোরআন-হাদিসের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন: জামায়াত আমির ‘১৬ বছরের জঞ্জাল দূর না করে নির্বাচন দিলে সমস্যা সমাধান হবে না’  প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা সরকারি নিবন্ধন পেল সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘কলরব’ ‘সিরাহ মিউজিয়াম’ চালু করছেন মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী মহাসমাবেশ সফল করতে যেসব কর্মসূচি নিয়েছে হেফাজত

পাল্টে যাচ্ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষা কারিকুলাম: কওমি শিক্ষার্থীদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

নাজমুল হাসান: গত ১৩ সেপ্টেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নতুন একটি শিক্ষা কারিকুলামের খসড়া রূপরেখা অনুমোদন করেছেন৷ এই কারিকুলাম বাস্তবায়ন শুরু হবে ২০২৩ সাল থেকে ৷ এবং সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হবে ২০২৭ সালে৷

নতুন শিক্ষা কারিকুলামের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো:
১৷ তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো ধরণের পরীক্ষা থাকবে না৷
২৷ এসএসসির আগে কোনো পাবলিক পরীক্ষা হবে না৷ পঞ্চম শ্রেণি ও অষ্টম শ্রেণির পাবলিক পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাবে৷
৩৷ এসএসসির আগে সায়েন্স, মানবিক— এমন কোনো বিভাজন থাকবে না৷ সবাই অভিন্ন বিষয় পড়বে ৷ একাদশে গিয়ে বিভাগ আলাদা হবে৷
৪৷ এসএসসিতে পাবলিক পরীক্ষা শুধু এসএসসির সাবজেক্টের উপর ভিত্তি করেই হবে৷
৫৷ এইচএসসি নামে কোনো পাবলিক পরীক্ষা থাকবে না৷ একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির উভয় পরীক্ষা পাবলিক পরীক্ষা বলে বিবেচিত হবে৷
৬৷ প্রাথমিকে সাপ্তাহিক ছুটি একদিন এবং মাধ্যমিকে দুইদিন থাকবে।
৭৷ ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত অভিন্ন দশটি বিষয় পড়ানো হবে ৷ ১. বাংলা ২. ইংরেজি ৩. গণিত ৪. বিজ্ঞান ৫. তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ৬. সামাজিক বিজ্ঞান ৭. জীবন ও জীবিকা ৮. ধর্ম শিক্ষা ৯. স্বাস্থ্য শিক্ষা ১০. এবং শিল্প ও সংস্কৃতি৷

কওমিরা যা করতে পারেন :
নতুন শিক্ষা কারিকুলামের পরিপ্রেক্ষিতে কওমি মাদরাসাগুলো তাদের শিক্ষা-কার্যক্রমে এসএসসিকে অন্তর্ভুক্ত করে নিতে পারে৷

কীভাবে করবে?
সকল কওমী মাদ্রাসায় পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা, ইংরেজি ও গণিত পড়ানো হয় ৷ কোনো কোনো মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্তও পড়ানো হয় ৷ এক্ষেত্রে তারা যদি আর দুটো বছর জেনারেল শিক্ষাটাকে ধরে রাখেন, তাহলেই এসএসসিতে পৌঁছে যাওয়া যায়৷
বেফাক শিক্ষা কারিকুলাম অনুযায়ী প্রথম বোর্ড পরীক্ষা হয় পঞ্চম শ্রেণিতে৷ এরপর এসএসি লেভেল পর্যন্ত আসতে আর পাঁচ বছর লাগে৷ এই সময়ে যে পাঁচটি ক্লাসে জেনারেল শিক্ষাটা কন্টিনিউ করতে হবে সেগুলো হলো— মীযানে ষষ্ঠ শ্রেণি, নাহুমীরে সপ্তম শ্রেণি, হিদায়াতুন্নাহুতে অষ্টম শ্রেণি, কাফিয়াতে নবম শ্রেণি এবং শরহে জামীতে দশম শ্রেণি৷

কাফিয়া এবং শরহে জামী— এই দুটো ক্লাস অনেক মাদ্রাসায় এক বছরে আর কিছু মাদরাসায় দুই বছরে পড়ানো হয়৷ শরহে জামী যাদের আলাদা, তাদের জটিলতা কম৷ শরহে জামীর বছরটাকে তারা এসএসির বছর বানিয়ে নিতে পারেন ৷ এ বছর পুরোদমে এসএসসির সিলেবাস পড়ানো হবে৷ সাথে শরহে জামী ক্লাসের মৌলিক দু-একটি কিতাব থাকবে ৷ যারা কাফিয়ার সাথে শরহে জামী পড়ে ফেলেন তাদের জন্য পরবর্তী বছরটা হবে শুধুই এসএসসির৷ সাথে শরহে জামী থেকে বাদ দেওয়া দু-একটি কিতাব আবার যুক্ত করা যেতে পারে৷

এসএসসির বছরের পর কেউ ইচ্ছা করলে কওমিতে শরহে বেকায়ায় ভর্তি হবেন৷ কেউ ইচ্ছা করলে জেনারেল প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভর্তি হবেন৷

কী লাভ হবে এতে?
১৷ বর্তমানে প্রচুর সংখ্যক মানুষ তাদের সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চান৷ তাদের অনেকে জাগতিক আশা ত্যাগ করে পূর্ণরূপে মাদ্রাসাকে বেছে নেন৷ আবার বহু অভিভাবক দেশের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয়ে মাদ্রাসাকে গ্রহণ করতে পারেন না৷ মাদ্রাসায় এসএসসির অন্তর্ভুক্তি এই অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা দূর করবে৷ কওমিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিপুলভাবে বৃদ্ধি পাবে৷

২৷ বিশ বছর পর দেখা যাবে দেশে এমন কোন সেক্টর নাই, যেখানে দু-চার দশজন মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের লোক নাই৷ এতে মাঠ লেভেলে ইসলাম ধর্ম প্রচুর শক্তি লাভ করবে৷

৩৷ এখন যারা জেনারেল শিক্ষা লাভ করেন, তারা ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন না ৷ আবার যারা ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করেন, তারা জাগতিক শিক্ষাটা পান না ৷ মাদ্রাসায় এসএসসির অন্তর্ভুক্তি এই সমস্যা দূর করবে৷

৪ ৷ জেনারেল শিক্ষার সুযোগ পেয়েও যারা আলেম হওয়ার পথ বেছে নেবেন, তারা প্রকৃতই আলেম হবেন৷ দায়ে পড়ে কারও মাদ্রাসায় থাকা লাগবে না৷ তখন হয়তো পথেঘাটে মুফতি পাওয়া যাবে না কিন্তু যারা মুফতি হবেন, তারা দক্ষ মুফতি হবেন৷

৫৷ বর্তমানে মাদ্রাসা-শিক্ষা পদ্ধতিতে ইসলামের মৌলিক শিক্ষা লাভ করেন দেশের এক থেকে দেড় শতাংশ মানুষ৷ উপরিউক্ত পদ্ধতিতে আমরা সেটাকে অন্তত দশ থেকে বিশ শতাংশে উন্নীত করতে পারবো ইনশাআল্লাহ৷

৬৷ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রমাণ করতে পারলে ভবিষ্যতে দেশে মূল শিক্ষা কারিকুলামটাই প্রকৃত ইসলামী শিক্ষা কারিকুলামে পরিণত হতে পারে৷

৭৷ মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের প্রচুর শিক্ষার্থী জেনারেল শিক্ষাঙ্গনে থাকার কারণে আলেমদের সম্পর্কে বহু মানুষের ভুল বোঝাবুঝি কমবে, আলেমবিদ্বেষ হ্রাস পাবে, দেশ ইসলামাইজেশনের দিকে এগিয়ে যাবে৷

বিকল্প প্রস্তাবনা:
১৷ কওমি মাদ্রাসাগুলো সাধারণভাবে এই প্রস্তাবনা গ্রহণ না করলে প্রাইভেট মাদ্রাসাগুলো এটি গ্রহণ করতে পারে ৷ এতে তাদের চাহিদা বাড়বে৷

২৷ কেউ ব্যক্তি পর্যায়েও এটি করতে পারেন৷ অনেকটা তাখাসসুস বিভাগের পদ্ধতিতে শুধু এসএসসি বিভাগ খুলতে পারেন৷ হিফজখানাগুলো এই সুবিধা কাজে লাগাতে পারে৷

-কেএল


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ