নুরুদ্দীন তাসলিম।।
সার্চ কমিটির মাধ্যমেই আগামী নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের পথে হাঁটছে সরকার। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ৪ মাস মেয়াদ রয়েছে। তাদের মেয়াদ শেষে নতুন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি গঠন হচ্ছে ফেব্রুয়ারি মাসে। সেই কমিটির বাছাই করা নামের তালিকা থেকেই সাংবিধানিক সংস্থা ইসিতে দায়িত্ব নেবেন নতুন ব্যক্তিরা, যাদের অধীনে হবে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন।
গতকাল সোমবার (০৪ অক্টোবর) বিকেলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘নতুন নির্বাচন কমিশন কিভাবে গঠিত হবে’ এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে।
এদিকে নির্বাচন কমিশন গঠনে ‘সার্চ কমিটি’ একটি ধোঁকা দেওয়ার প্রক্রিয়া বলে মন্তব্য করেছেন ‘নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনার বক্তারা।
আলোচনায় তারা বলেন, ‘এর মাধ্যমে অযোগ্যদের নির্বাচন কমিশনার হিসেবে খুঁজে বের করা হয়। যার ফলে গত দুটি নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি আইন প্রয়োজন। কিন্তু শুধু একটি ভালো নির্বাচন কমিশন হলেই সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। এ জন্য নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থায় পরিবর্তন প্রয়োজন’।
নতুন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির বিষয়টি কিভাবে দেখছেন দেশের ইসলামী রাজনৈতিক দলের নেতারা। এ নিয়ে তাদের প্রত্যাশা ও পরামর্শ কী? -জানতে চাইলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, সার্চ কমিটির মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন কখনোই সম্ভব নয়।
তার ভাষ্যমতে, ‘সরকার সার্চ কমিটি গঠন করেই যেনো এই কমিটির মাধ্যমে নিজ পক্ষীয় মানুষদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। এসবের স্বচক্ষ উদাহরণ গত দুই নির্বাচন। সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠন হলে বর্তমান ইসির যে অবস্থা এর থেকে ভিন্ন কোন চিত্র আমরা দেখতে পাবো না’- বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরো বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন যত ভালই হোক না কেন, এর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নির্বাচনকালীন সময়ে নির্দলীয় সরকার দায়িত্ব পালন করছে কিনা’।
তার মতে, ‘নির্বাচনকালীন সময়ে নির্দলীয় সরকার দায়িত্বে না থাকলে নির্বাচন কমিশন ভালো হলেও কোনো কাজে আসবে না। তাই নির্বাচন কমিশনের থেকেও আমাদের কাছে মূল সংকট হল নির্বাচনকালীন সময়ে নির্দলীয় সরকার দায়িত্ব পালন করছে কিনা’।
খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী বলেন, সব সময় আমাদের প্রত্যাশা থাকে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন। যার মাধ্যমে সুস্থ ও সুন্দর নির্বাচন দেখতে পাবে জাতি। তবে গত মেয়াদে সরকার যেভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে এবং পরবর্তীতে যা ঘটেছে; এতে বিষয়টি স্পষ্ট যে তারা তাদের নিজস্ব এজেন্ডা ও নকশা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠন করেছিল। যদিওবা রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, কিন্তু তারা নিজেদের মতো করেই সব কাজ করেছে।
‘এরপরেও আমাদের প্রত্যাশা এমন নির্বাচন কমিশন গঠন হওয়া উচিত যারা হবে নির্দলীয় এবং বিশেষ কোন প্রতীকের পক্ষে কাজ না করে জনগণের স্বার্থে কাজ করবেন’- যোগ করেন তিনি।
সার্চ কমিটির অধীনে নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়টি কতটা স্বচ্ছ হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সার্চ কমিটি বা যাই বলেন না কেন সরকার নিজেদের পক্ষে কোন কিছু করতে চাইলে তা যে কোনভাবেই হাসিল করবে। সার্চ কমিটি দেখানোর জন্য একটা প্রক্রিয়া হিসেবে থাকবে মাত্র’।
এদিকে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া বলেছেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে কালচার তৈরি হয়েছে এমন পরিস্থিতিতে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন আশা করা অলীক কল্পনার মত বলা যেতে পারে’।
তিনি বলেন, ‘কমিশন গঠনের পূর্বে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা-পরামর্শ করে সর্বমহলের আস্থাভাজন ও বিশ্বস্ত নিরপেক্ষ কাউকে ইসি নিয়োগ দেওয়ার যে প্রক্রিয়া তা বর্তমানে আমাদের দেশে নেই বললেই চলে’।
তিনি আরও বলেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে কখনো নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থার জন্য ইতিপূর্বে সব বিরোধী দল আন্দোলন করেছিল। এমনকি বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগও এক সময় সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থার জন্য আন্দোলন করেছিল। সেই ধারাবাহিকতায় জনগণের অধিকার আদায়ে এখনকার বিরোধী দলগুলোও আন্দোলন করে চলেছে। সব মিলিয়ে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ ও প্রশাসনিক অবস্থান যেন তৈরি হয় এই প্রত্যাশাই করেন তিনি।
আরো পড়ুন: করোনা পরবর্তী রাজনীতি: কতটা মাঠে গড়াবে ইসলামী দলগুলো?
এটি