নুরুদ্দীন তাসলিম।।
দীর্ঘ বিরতির পর অবশেষে খুলেছে মাদরাসাসহ সব ধরণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নতুন উদ্যমে শুরু হয়েছে করোনা পরবর্তী শিক্ষাবর্ষ। এতে বেশ উচ্ছ্বসিত শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর ইতোমধ্যেই সপ্তাহ পেরোতে চলেছে। শিক্ষার্থীদের মাঝে উদ্দীপনা বাড়াতে নানা ধরনের শিক্ষা পরামর্শ দিয়ে চলেছেন শিক্ষাবিদেরা।
তারা বলছেন, দীর্ঘ বিরতির পর শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফেরার সুযোগ পেয়েছেন। দীর্ঘদিন বন্ধের কারণে শিক্ষার্থীদের মানসিকতা বিক্ষিপ্ত হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক, তবে শুরু থেকেই সঠিকভাবে দিক নির্দেশনা দেওয়া গেলে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ সহজেই ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এক্ষেত্রে শিক্ষাবিদদের পরামর্শ হল, প্রথম থেকেই মোবাইলের বিষয়ে বিশেষ কঠোরতা ও সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত।
মোবাইল ব্যবহারের মাধ্যমে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা কি ধরনের ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন; এ বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে গিয়ে জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ার দারুল একামা মুফতি আতাউর রহমান আওয়ার ইসলামকে বলেন, ‘এন্ড্রয়েড সেট অর্থাৎ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে এমন মোবাইলগুলো মাদরাসা শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাপক ক্ষতির কারণ। বলা যেতে পারে, মোবাইল অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে পড়ার উপকরণ’।
‘অমনোযোগীতা’
তিনি বলেছেন, ‘কোরআন শরীফে আল্লাহ তাআলা যেভাবে মদের বিষয়ে বলেছেন, মদের ভাল দিকের থেকে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। ঠিক তেমনিভাবে মোবাইলে কিছু ভালো ব্যাপার থাকতে পারে; তবে শিক্ষার্থীরা মোবাইল ব্যবহার করলে দু’একটা প্রোগ্রাম ব্যবহারের পর অন্য আরও প্রোগ্রামগুলো ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে পড়ে, যেগুলো ভালো-মন্দের মিশেলে পূর্ণ। এতে করে পড়াশোনায় মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন ছাত্ররা, অথচ মাদরাসা শিক্ষার্থীদের জন্য মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করা ও ব্যুৎপত্তি অর্জন করা অপরিহার্য।
‘রক্ষণশীল পরিবেশে থেকেও বিজাতীয় কালচারে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা’
তিনি বলেছেন আরেকটি ক্ষতি হলো, মোবাইল ব্যবহারের মাধ্যমে না চাইলেও আমাদের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিজাতীয় কালচারেরপ্রভাব পড়ছে। আশঙ্কার বিষয় হলো, রক্ষণশীল পরিবেশে থেকেও আমাদের মাদরাসার শিক্ষার্থীরা বিজাতীয় কালচারে জড়িয়ে পড়ছেন।
‘অহেতুত বন্ধুত্ব’
মুফতি আতাউর রহমান তৃতীয় ক্ষতি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ফেসবুক ব্যবহার ও এর মাধ্যমে অহেতুত বন্ধুত্বে জড়িয়ে পড়াকে। তিনি বলেছেন, ‘মোবাইল, ফেসবুকের মাধ্যমে বন্ধুত্ব এবং সংযোগ স্থাপনের সীমানা অনেক বড়। এতে করে পড়াশোনার বাইরে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা, সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হলো বিপরীত লিঙ্গের সাথে সম্পর্ক তৈরি হলে সেখান থেকে ফিরে আসা কঠিন হয়ে যায়’।
‘অপরিণত বয়সে উপার্জনের প্রতি ঝুঁকে পড়া’
তিনি বলেছেন ,‘মোবাইল ব্যবহারের মাধ্যমে অপরিণত বয়সে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং এ জাতীয় বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এতে করে পড়াশোনা ছেড়ে উপার্জনের প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়ছে। অনেকেই ভাবছেন; পড়াশোনা করে তো উপার্জন করতে হবে সেই ব্যবস্থা আগে হয়ে গেলে ক্ষতি কি! কিন্তু এ কারণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে একজন শিক্ষার্থী ও দেশের ভবিষ্যৎ’।
‘অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা’
তার ভাষায়, এছাড়াও আরও বড় ক্ষতি হলো, বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। যা কোনভাবেই ভালো ফলাফল বয়ে আনছে না এবং আনবেনা ইলমে শিক্ষার্থীদের জন্য। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মাদরাসা শিক্ষার্থীদের মোবািইল ব্যবহার অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে আনছে। তাই শুরু থেকেই মোবাইল ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ শিক্ষাবিদ মুফতি আতাউর রহমানের।
আরো পড়ুন: মাদরাসা ছাত্রদের মোবাইল ব্যবহার: বছরের শুরুতেই কঠোর হওয়ার পরামর্শ শিক্ষাবিদদের
এটি