মোস্তফা ওয়াদুদ
নিউজরুম এডিটর
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে আলোচিত এক শব্দের নাম করোনা ভাইরাসের ‘ভ্যাকসিন’। দেশে দেশে ভ্যাকসিন নিতে উৎসাহ দিতে শ্লোগান হচ্ছে, ‘ভ্যাকসিন নিন, সুস্থ থাকুন’। ভ্যাকসিন গ্রহণে একমত হয়েছে সারাবিশ্বই। শুরুর দিকে কিছুটা সংকোচ থাকলেও এখন ভ্যাকসিন নিতে উৎসাহ দিচ্ছেন বিশ্বের বড় বড় স্কলারগণ। পাকিস্তানের বিখ্যাত আলেম আল্লামা মুফতি তকি উসমানি বলেছেন, হালাল উপাদানে তৈরি ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে। একই রকমের কথা বলেছেন পাকিস্তানের দাঈ ও ডাক্তার মাওলানা তারিক জামিল।
করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণে উৎসাহ প্রদান করেছেন কাবা শরীফের ইমাম শায়খ আব্দুর রহমান আস সুদাইস। জিম্বাবুয়ের মুফতি মেনকও করোনার ভ্যাকসিন নিতে বলেছেন সবাইকে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান প্রদেশে বিস্তার লাভ করা করোনার প্রতিরোধে বিশ্বব্যাপী এক মহাবিপ্লব ও আন্দোলন চলছে। এ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তৈরি করেছে করোনার প্রতিষেধক। যার কয়েকটি অনুমোদন পেয়েছে বিশ্বব্যাপী। আমাদের বাংলাদেশেও অনুমোদন পেয়েছে বেশ কয়েকটি দেশের ভ্যাকসিন।
[caption id="" align="aligncenter" width="402"] ভ্যাকসিন নিচ্ছেন একজন তরুণ[/caption]
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন গ্রহণ কতটা প্রয়োজন, জানতে হলে চোখ রাখতে হবে বিখ্যাত চিকিৎসকদের কথায়। তারা বলেন, করোনাভাইরাস একটি বায়ুবাহিত রোগ। এটি মুহূর্তে মুহূর্তে রং পাল্টায়। পরিবর্তন করে তার চেহারা। আর করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণে সাময়িক মুক্তি মিলতেও পারে। তবে ভ্যাকসিন গ্রহণের পর করোনা হবে না, এমন কথা বলা যায় না।
তাছাড়া এখন রাষ্ট্রীয় বিধান মোতাবেক করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন গ্রহণের সনদ অনেকটা জন্ম নিবন্ধন, কিংবা পাসপোর্টের মতোই প্রয়োজনীয় কাগজে পরিণত হয়েছে। যারা করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন নেওয়ার সার্টিফিকেট দেখাতে পারবেন, তারাই হজ ও ওমরা করতে পারবেন। কিংবা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করতে পারবেন। এক দেশ থেকে অন্য দেশে নিজেদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন। ভ্যাকসিন নেওয়া ছাড়া কোনভাবেই দেশের বাহিরে বহির্গমন করা যাবে না। তাই ভ্যাকসিন একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা হিসাবে বিশ্বব্যাপী প্রয়োজনীয়তা লাভ করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম বিশিষ্ট দাঈ শায়খ আহমাদুল্লাহর কাছে। তিনি বলেন, ভ্যাকসিন গ্রহণ মানুষের সমাজ জীবনে, রাষ্ট্র জীবনে, পারিবারিক জীবনে, এমনকি ব্যক্তি জীবনেও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। চিকিৎসকদের পরামর্শ মোতাবেক করোনার প্রতিষেধক হিসেবে ভ্যাকসিন গ্রহণ করা উচিত। মাদরাসা শিক্ষার্থীদের জন্য ভ্যাকসিন গ্রহণ অত্যাধিক জরুরি। কেননা মাদরাসাগুলোতে অল্প জায়গায় বেশি ছাত্রের বসবাস করতে হয়। তাছাড়া ওলামায়ে কেরামকে পাবলিক রাউণ্ডে কাজ করতে হয়। তাই মাদরাসার ছাত্ররা যদি ভ্যকসিন নেয়, তাহলে সেটা নিজের জন্য ও মাদরাসার সবার জন্য নিরাপদ। তাছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বলা হয়েছে, নিরাপদ জীবন ধারণে প্রত্যেকের জন্য ভ্যাকসিন গ্রহণ আবশ্যক। তাই সবার পাশাপাশি মাদরাসা শিক্ষার্থীদেরও ভ্যকসিন গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে করছেন বিখ্যাত এ দাঈ।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে সৌদি আরব ওমরা ও হজের জন্য ভ্যাকসিন গ্রহণকে শর্ত হিসেবে আরোপ করেছে। অতএব পবিত্র হজ পালন ও ওমরা পালনের জন্য আমাদের ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে আমাদের কোনো প্রকার সিদ্ধান্তহীনতায় না ভোগে অচিরেই ভ্যাকসিন গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন বিখ্যাত এ দাঈ।
মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন গ্রহণের বিষয়ে বিশিষ্ট সোশ্যালিস্ট ও অনলাইন একটিভিস্ট মাওলানা সাইমুম সাদী বলেন, ‘ভ্যাকসিন সারা বিশ্বের মানুষ নিচ্ছে। আমাদেরও নেওয়া উচিত। বৈশ্বিক মহামারির এই সময়ে করোনা থেকে নিরাপদ থাকার জন্য ভ্যাকসিন নিতে হবে। দৈনন্দিন কাজ করার জন্য, চলাফেরার জন্য, দেশের বাহিরে ফ্লাই করার জন্য ভ্যাকসিন জরুরি।’
কথা বলেছিলাম জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়ার শিক্ষক মাওলানা তাহমীদুল মাওলার সঙ্গে। তিনি বলেন, করোনা একটি রোগ। রোগ হলে তার ওষুধ নিতে হবে। এমনটাই আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন। যখনই তোমাদের কোন রোগ হবে তখন তোমরা তার ওষুধ গ্রহণ করো। বর্তমানে করোনার প্রতিষেধক হিসেবে ঔষধ আবিষ্কার করা হয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করে বাজারজাত করছেন। বিশ্বব্যাপী অনুমোদনও হয়েছে। বিশ্বের অনেক মানুষই নিচ্ছেন। সুতরাং সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আমাদের মাদরাসার শিক্ষার্থী যারা আছে, ছাত্র-শিক্ষক যারা আছেন, তাদের প্রত্যেকেরই ভ্যাকসিন নেয়া প্রয়োজন। এর মাধ্যমে নিজেদের পবিত্র রাখা বা করোনা থেকে কিছুটা দায়মুক্তি রাখার একটি সুযোগ বা পজিশন তৈরি করা জরুরি বলে মনে করি।
তিনি আরও বলেন, ভ্যাকসিন গ্রহণে মাসআলাগত কোনো সমস্যা নেই। তাই সারাদেশের নাগরিকের মতো মাদরাসা শিক্ষার্থীদের বিধানও বরাবর। সবাই ভ্যাকসিন নিলে তারাও নিবেন। ভ্যাকসিন গ্রহণে কোনো অবহেলা না করা চাই। যদি কেউ অবহেলা করেন, তবে ওলামায়ে কেরাম পরামর্শ সাপেক্ষে বিষয়টির সহজ সমাধান দিবেন বলে মনে করছেন মাওলানা তাহমিদুল মাওলা।
এমডব্লিউ/