জীবনের সমস্যাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ও শরয়ি সমাধান দিয়ে থাকেন ফকিহ বা মুফতিগণ। বর্তমানে এই শাস্ত্রের গুরুত্ব বিবেচনায় দায়িত্বশীল মুফতিদের তত্ত্ববধায়নে দেশে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু ফতোয়া বিভাগ। দেশের ফতোয়া বিভাগগুলো এযাবত যেই ধারাবাহিকতায় চলে আসছে সৃজনশীলতা ও মান রক্ষায় এভাবেই চলতে পারে নাকি বোর্ডের অধীনে নিয়ে এসে ফতোয়া বিভাগগুলোকে আরো শক্তিশালী করা যেতে পারে এবিষয়ে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ শিক্ষা অথরিটি আল হাইয়াতুল উলইয়ার আওতাধীন ৪ বোর্ডের দায়িত্বশীলদের সাথে কথা বলেছেন আওয়ার ইসলামের প্রতিবেদক নুরুদ্দীন তাসলিম।
যেখানে-সেখানে ফতোয়া বিভাগ গড়ে উঠছে এটা দুঃখজনক, এক্ষেত্রে মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়: মাওলানা মুহাম্মদ যুবায়ের
বাংলাদেশে মোট ফতোয়া বিভাগের সংখ্যা কত এর কোন পরিসংখ্যান জানা আছে কিনা জানতে চাইলে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ-এর ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মাওলানা মুহাম্মদ যুবায়ের বলেন, এখনো পর্যন্ত বেফাকের কাছে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। দেশে ইফতা বিভাগগুলোর ব্যাপকায়ন শুরু হলে ইফতাসহ তাখাসসুসের সব বিভাগের মান রক্ষার্থে বিভাগগুলোকে বেফাকের অধীনে নিয়ে আসার চিন্তাভাবনা করা হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে নানা কারণে আলোচনা সামনে না এগুনোর কারণে এ ব্যাপারে এখনও সঠিক কোনো পরিসংখ্যান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
বর্তমানে অনলাইনে সাপ্তাহিক ইফতার নামে বেশ কিছু কোর্স চালু হয়েছে, এক্ষেত্রে উলুমে ফিকহের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির মান কতটা রক্ষা হচ্ছে, অথবা রক্ষা না হলে এ বিভাগটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে বোর্ডের ভাবনা কি?
বেফাকের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক বলছেন, যেভাবে যেখানে সেখানে ফতোয়া বিভাগ গড়ে উঠছে এটা দুঃখজনক, এক্ষেত্রে উলুমে ফিকহার মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। সার্বিক দিক বিবেচনায় বোর্ডও ফতোয়া বিভাগগুলোকে সৃজনশীলতার আওতায় নিয়ে আসতে চিন্তা ভাবনা করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে দফায় দফায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণায় বার্ষিক পরীক্ষা নিতেই বেগ পেতে হচ্ছে বোর্ডকে। এছাড়াও বিভিন্ন সংকটের কারণে তাখাসসুসের এই বিভাগটিকে নিয়ন্ত্রণ ও সৃজনশীলতায় নিয়ে আসার ভাবনা খুব একটা অগ্রসর হচ্ছে না বলে জানালেন বেফাকের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক।
ফতোয়া বিভাগগুলোকে বোর্ডের অধীনে নিয়ে আসতে চাইলে কি ধরনের প্রক্রিয়ায় এগোতে পারে বোর্ড?
মাওলানা মুহাম্মদ যুবায়ের বলেছেন, ফতোয়া বিভাগ নিয়ে বোর্ডের কার্যক্রম শুরু হলে অবশ্যই দায়িত্বশীলদের সম্মিলিত পরামর্শে ভারসাম্যপূর্ণ কোন সিদ্ধান্তে আসা যাবে। তবে আপাত দুষ্টিতে বলা যায় প্রত্যেকটি মাদ্রাসার ইফতা বিভাগ গুলোর সিলেবাস দেখে শুনে সবগুলোর সমন্বয়ে ভালো কিছু করা সম্ভব হবে।
মান কতটা রক্ষা হচ্ছে প্রশ্নের উত্তর খানিকটা জটিল, বেশ মুশকিলও: মুফতি আরশাদ রহমানী
তানযীমুল মাদারিসিদ দ্বীনিয়া বাংলাদেশের সভাপতি ও মারকাযুল ফিকরিল ইসলামী বসুন্ধরা ঢাকার মহাপরিচালক মুফতি আরশাদ রহমানীর কাছে একই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, বর্তমানে দেশে তুলনার চেয়েও ইফতা বিভাগের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। তবে বিভাগগুলোর মান কতটা রক্ষা হচ্ছে এই প্রশ্নের উত্তর খানিকটা জটিল এবং বেশ মুশকিলও।
ইফতা বিভাগ গুলোর নিয়ন্ত্রণে বোর্ডের কোনো ভূমিকা থাকা উচিত কিনা এক্ষেত্রে তিনি বলেছেন, শিক্ষা কার্যক্রমকে সৃজনশীল করতে একের পর এক কাজ করে চলছে বোর্ড। তাখাসসুসের এই বিভাগটিকে সৃজনশীল করতে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় হাইয়া চাইলে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে, তবে এ বিষয়ে এখনও আমি কিছু বলতে পারছি না ।
আরো পড়ুন: অনলাইনে ইফতা কোর্স: হুমকির মুখে ফতোয়া বিভাগ
যেভাবে ফতোয়া বিভাগ গড়ে উঠছে এতে নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের বাইরে বেশিভাগ জায়গাতেই মান রক্ষা হচ্ছে না বলেই ধারণা : মাওলানা আব্দুল বছির
ইফতা বিভাগের পরিসংখ্যানের বিষয়ে সিলেটের আযাদ দ্বীনি এদারায়ে তালীম বাংলাদেশ-এর মহাসচিব ও হাইয়াতুল উলইয়ার সদস্য মাওলানা আব্দুল বছিরের কাছেও সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই বলে জানান তিনি।
তিনি বলেছেন, বর্তমানে যেভাবে ফতোয়া বিভাগ গড়ে উঠছে এতে নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের বাইরে বেশিভাগ প্রতিষ্ঠানেই উলুমে ফিকহার মান রক্ষা হচ্ছে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
তার মতে, এখন যেভাবে এখানে সেখানে, বিভিন্ন অলিতে-গলিতে ইফতা বিভাগ খুলে বসছেন অনেকেই এতে ইলমের গুরুত্বপূর্ণ এই শাখাটির গুরুত্ব কমে যাচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এই বিভাগটিকে সৃজনশীলতার নিয়ে আসতে বোর্ডের ভূমিকা খুবই জরুরী বলে মনে করেন তিনি।
মেধা ও ফিকহা নিয়ে পড়ার আগ্রহ আছে শিক্ষার্থীরা নিজের ইস্তেফাদার জন্য ফতোয়া নিয়ে পড়তে পারেন: মুফতি মোহাম্মদ আলী
জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের মহাসচিব ও হাইয়াতুল উলইয়ার সদস্য মুফতি মোহাম্মদ আলীর কাছেও ইফতা বিভাগগুলোর কোন পরিসংখ্যান নেই বলে জানিয়েছেন তিনি প্রতিবেদককে। ইফতা বিভাগগুলো বোর্ডের অধীনে না থাকায় এর সঠিক পরিসংখ্যান জানাতে না পারার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করতে চাইছেন তিনি।
পরিসংখ্যান এর বাইরে যেভাবে গড়ে উঠছে ইফতা বিভাগগুলো এতে মানরক্ষার প্রশ্নে তিনি বলছেন, মান রক্ষার বিষয়টি নির্ভর করছে ফতোয়া বিভাগগুলো যারা খুলছেন তাদের সদিচ্ছা ও যোগ্যতার উপর, এখানে বছর সিলেবাস খুব একটা ফ্যাক্ট নয় তার মতে।
তিনি বলছেন, ফিকহা নিয়ে পড়ার আগ্রহ আছে এবং মেধা আছে এমন শিক্ষার্থীরা নিজের ইস্তেফাদার জন্য ফতোয়া নিয়ে পড়তে পারেন। অন্যকে ফতোয়া দেওয়া পরবর্তী বিষয়।
তিনি আরো বলেছেন , বর্তমানে ইফতা বিভাগগুলো বোর্ডের আয়ত্ত্বের বাইরে তাই এই বিভাগটি কে সৃজনশীলতায় আনতে চাইলে প্রথমে বোর্ডের আয়ত্ত্বে আনতে হবে এবং ইফতার পরীক্ষাগুলো বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে হবে।
আরো পড়ুন: শুধু সাটিফিকেটের জন্য ইফতা পড়া কাম্য নয়: শীর্ষ ২ মুফতি
উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, নাহবেমীর, শরহে বেকায়া, মিশকাতসহ যেসব ক্লাসের পরীক্ষা বেফাকের অধীনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই ক্লাসগুলোকে বোর্ডের যেকোন কোনো নির্দেশনা জরুরি ভিত্তিতে মানতে হয়, তেমনিভাবে বোর্ড ফতোয়া বিভাগের পরীক্ষাগুলোকে নিজেদের আওতায় আনতে পারলে পরবর্তীতে সিলেবাস, বছরসহ যেসব সৃজনশীল চিন্তাভাবনা আছে সেগুলো সহজেই প্রয়োগ করতে পারবে বলে অভিমত দিয়েছেন মুফতি মোহাম্মদ আলী।
ইফতা বিভাগগুলোকে নিয়ন্ত্রণে নিতে চাইলে সিলেবাস নাকি বছর কোন বিষয়টিকে বিবেচনায় রাখতে পারে বোর্ড ?
এক্ষেত্রে তিনি বলছেন, সিলেবাস, বছর সব বিষয়েই নিয়ন্ত্রণ দরকার। তবে তার ভাষায়, ফতোয়া বিভাগের ক্ষেত্রে এক, দুই, তিন, এভাবে বছরের হিসাবের তুলনায় মুখ্য বিষয় হচ্ছে অভিজ্ঞ শিক্ষকের কাছে থেকে বাবরার তামরীনের মাধ্যমে নিজেকে যোগ্য ও সমৃদ্ধ করে তোলা।
দেওবন্দের ফতোয়া বিভাগের সিলেবাসের কথা তুলে ধরে তিনি বলেছেন, দেওবন্দে এক বছরে ইফতা পড়ানো হয়, কিন্তু সেখানে ছাত্রদের এমন যোগ্যতা সম্পন্ন করে তোলা হয় যে, তাদের ফতোয়া উপমহাদেশসহ বিশ্বব্যাপী প্রভাব সৃষ্টি করে, তাই বছরের থেকেও এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে অভিজ্ঞতা ও পরিপক্কতা অর্জন করা।
-এটি