বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২৮ কার্তিক ১৪৩১ ।। ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
জুলাই গণহত্যার ১০০তম দিন: টিএসসিতে শহীদ পরিবারের আর্তনাদ দ্বীনিয়াতের প্রধান মাওলানা সালমানের জন্য দোয়া চাইলো পরিবার রংপুরে জুম্মাপাড়া মাদরাসার ২ দিন ব্যাপী তাফসির মাহফিল আগামীকাল ন্যায়পরায়ণ-আল্লাহভীরু শাসক ছাড়া শান্তির আশা করা যায় না: চরমোনাই পীর সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের শরীআহ চেয়ারম্যান হলেন মাওলানা মাহফজুল হক সংবিধান থেকে ‘জাতির পিতা’ ও ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ বাতিল চাই: অ্যাটর্নি জেনারেল আসছেন না মাওলানা সাদ; আগের নিয়মেই চলবে কাকরাইল ও ইজতেমার মাঠ কাল বাদ ফজর বসুন্ধরা মারকাজে বয়ান করবেন মাওলানা ইলিয়াস গুম্মান বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই হচ্ছে রমজান সামনে রেখে প্রস্তুত হচ্ছে রিয়্যালিটি শো ‘পবিত্র কুরআনের আলো’

শবে বরাতে যেভাবে চালু হয়েছিল হালুয়া-রুটির প্রচলন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: মুসলমানদের জন্য 'অতি পবিত্র রজনী' হিসেবে পরিচিত শব-ই-বরাত। বাংলাদেশে শব-ই-বরাতের রাতে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অনেকেই মসজিদে প্রার্থনা করবেন। এর সাথে আরেকটি বহুল প্রচলিত এবং গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হচ্ছে, বাড়িতে হালুয়া-রুটি তৈরি এবং প্রতিবেশীদের মাঝে সেটি বিতরণ।

বাংলাদেশের সমাজে শব-ই-বরাতের প্রসঙ্গ আসলেই অবধারিতভাবে হালুয়া-রুটি তৈরির বিষয়টি চলে আসে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, হালুয়া-রুটি তৈরির এ সংস্কৃতি বাংলাদেশ ভূখণ্ডে কিভাবে চালু হয়েছে? ইসলামের ইতিহাস যারা বিশ্লেষণ করেন, তাদের অনেকেই মনে করেন যে বাংলাদেশের সমাজ বৃহত্তর মুসলিম উম্মাহর অংশ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির অধ্যাপক মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, এয়োদশ শতাব্দীতে ভারতের দিল্লীতে ইসলাম রাজনৈতিকভাবে আসে। সে সময় তৎকালীন বাংলাদেশ ভূ-খন্ডেও ইসলাম ধর্মের আবির্ভাব হয়।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, "রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদের যুগেও এ উপমহাদেশে তার ঘনিষ্ঠজনরা সুদূর আরব থেকে ইসলাম যে বিভিন্ন দেশে এসেছে, এগুলোর সাথে কিছু-কিছু দেশজ উপাদান যুক্ত হয়েছে। আমরা জানি যে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিষ্টি খুব পছন্দ করতেন। তাঁর পছন্দের জিনিসকে উম্মতরা পছন্দ করবে সেটাও তাকে পছন্দ করার একটি ধরন। ফলে মিষ্টির একটা জনপ্রিয়তা মুসলিম সমাজে আছে।"

তিনি মনে করেন, শব-ই-বরাতের সময় হালুয়া-রুটি বানানো এবং বিতরণ করার সাথে আনন্দ ভাগ করে নেবার একটি সম্পর্ক আছে। "আনন্দের ভাগটা অন্যদের দেয়ার জন্যই বিতরণ করার রেওয়াজটা হয়েছে। এর সাথে ধর্মীয় অনুভূতি এবং সামাজিকতা রক্ষা- দুটো বিষয় জড়িত আছে," বলেছেন অধ্যাপক ইব্রাহিম।

যেহেতু হালুয়া বানানোর উপাদান বাংলাদেশে আছে সেজন্য সেটি এসেছে। মূলত; মিষ্টি অর্থেই হালুয়ার প্রচলন হয়েছিল।বাংলাদেশ ভূ-খন্ডে শব-ই- বরাত পালনের ব্যাপক প্রচলন শুরু হয় ১৯'শ শতকের শেষের দিকে। তখন ঢাকার নবাবরা বেশ ঘটা করেই শব-ই-বরাত পালন করতেন, বলছেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসির মামুন।

তিনি বলেন, সে সময়ে ঢাকার নবাবরা শব-ই-বরাতের সময় আলোকসজ্জা করতো । এরপর পাশপাশি মিষ্টি বিতরণ করতো।

ইতিহাসবিদদের মতে সে সময়ে যেহেতু মিষ্টির দোকান খুব একটা প্রচলিত ছিলনা, সেজন্য মিষ্টি জাতীয় খাদ্য বানানোর উপাদান দিয়ে বাড়িতে হালুয়া তৈরির প্রচলন শুরু হয়। ধীরে-ধীরে এর বিস্তার ঘটতে থাকে।

ঢাকার ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করেছেন অধ্যাপক মামুন জানান, সে সময়ে হিন্দুদের আধিপত্য থাকার কারণে সেটিকে মোকাবেলা জন্য ঢাকার নবাবরা শব-ই-বরাত জন্য অনেক বড় আয়োজন করতো। এতে ঢাকার নবাবদের মুসলমান পরিচয় এবং আধিপত্য - এ দুটো বিষয় একসাথে তুলে ধরার প্রয়াস দেখা যেত।

১৯'শ শতকের শেষের দিকে ঢাকায় শব-ই-বরাত পালন মুসলিম পরিচয় প্রকাশের বিষয় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। এমনটাই বলছেন অধ্যাপক মামুন। সেই ধারাবাহিকতায় শব-ই-বরাত একটি বড় ধরনের উৎসবে পরিণত হয়েছে। পাকিস্তান আমলে এর সাথে সরকারি ছুটি যুক্ত হওয়ায় সেটি পালনের ব্যাপকতা আরো বেড়েছে বলে অধ্যাপক মামুন উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, একটা সময় ছিলো যখন ঢাকায় শব-ই-বরাত পালনের বিষয়টি ছিল সুন্নি মুসলমানদের মধ্যে। ইতিহাসবিদদের মতে, বর্তমান বাংলাদেশে শব-ই-বরাত পালন ধর্ম এবং সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অনেকেই মনে করেন, শব-ই-বরাতের রাতে পরবর্তী এক বছরের ভাগ্য নির্ধারিত হয়।

কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশে হালুয়া-রুটির সংস্কৃতি চলে আসছে। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে এটি খাওয়ার সাথে শব-ই-বরাতের জন্য বাধ্যতামূলক নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। সুত্র-বিবিসি বাংলা

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ