দাওরায়ে হাদিস শেষে উচ্চতর পড়াশোনার জন্য কওমি শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ একটি স্বপ্নের মত পাওয়া। আর এমনই একটি উদ্যোগ নিয়েছে আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ. (ছদর সাহেব) ফাউন্ডেশন।
একটা সময় ছিলো। যখন ঠিকমতো দুবেলা খাবার পেতো না। কিংবা খাবার পেলে পেতো না পড়াশুনার উপকরণ। বর্তমানে সময় পরিবর্তন হয়েছে। স্বাভাবিক পডড়াশুনা চালাতে পারেন অনেক শিক্ষার্থী। কিন্তু উচ্চতর পড়াশুনার স্বপ্ন সবাই দেখতে পারেন না। এবার সে স্বপ্নই পূরণ করতে যাচ্ছে আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ. (ছদর সাহেব) ফাউন্ডেশন। স্কলারশিপ চালু করা এই ফরিদপুরে ফাউন্ডেশনকে কিভাবে দেখছেন বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে পড়া তরুণ আলেমরা। নিজেদের মতামত শেয়ার করেছেন আওয়ার ইসলামের সাথে। তাদের কথাগুলো তুলে এনেছেন আওয়ার ইসলামের নিউজরুম এডিটর মোস্তফা ওয়াদুদ।
কথা বলেছিলাম জামিয়া আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় মিশরের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমদ আল আজহারীর সঙ্গে। বর্তমানে তিনি অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর সহকারী পরিচালক পদে কর্মরত আছেন। আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ. (ছদর সাহেব) ফাউন্ডেশনের স্কলারশিপের বিষয়ে মাওলানা আজহারী বলেন, তাদের এই কার্যক্রম অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। আমাদের কওমি মাদরাসাগুলোতে অসংখ্য মেধাবী তারিবুল ইলম আছেন। যাদের থেকে অনেকে উপকৃত হতে পারেন। কিন্তু অর্থনৈতিক দৈন্যদশার কারণে তারা তাদের টার্গেট পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পারে না। ফলে তাদের থেকে পর্যাপ্ত উপকৃত হতে পারেন না সাধারণ মানুষ। শামসুল হক ফরিদপুরী ফাউন্ডেশন এর স্কলারশিপের মাধ্যমে আমি মনে করি, শিক্ষার্থীরা তাদের সেই অর্থনৈতিক দৈন্যদশা কাটিয়ে উঠে টেনশন মুক্ত হয়ে পড়াশোনা করতে পারবে। নিজেদেরকে একেকজন মুজতাহিদ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে।
মাওলানা আজহারী বলেন, আমাদের বাংলাদেশী ওলামায়ে কেরাম ভারত-পাকিস্তানের আলেমদেরকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করেন এবং তারা মনে করেন যে, তাদের পরেই আমাদের স্থান। কিন্তু আল্লাহ রব্বুল আলামীন তাদেরকে এ জন্য সৃষ্টি করেননি। বরং তারা তাদের নিজেদের মেধা দিয়ে চাইলে এগিয়ে যেতে পারে। আমি মনে করি, সহস্ত্র মুফতি থেকে স্কলারশিপ এর মাধ্যমে মুষ্টিমেয় মুজতাহিদ তৈরি করতে পারবে শামসুল হক ফরিদপুরী ফাউন্ডেশন।
কথা বলেছিলাম মদিনা ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষার্থী কাউসার জামিলের সাথে। তিনি বলেন, এটি একটি চমৎকার ইতিবাচক দিক। উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারশিপ মানে হল শিক্ষার্থীদের উৎসাহমূলক পুরস্কার প্রদান। আর পুরস্কার পেলে যে কেউ খুশি হয়। আমিও যেমন খুশি হব তেমনি খুশি হবেন আপনিও। উৎসাহমূলক তাদের এ স্কলারশিপ কার্যক্রম অত্যন্ত চমৎকার ভালো কাজ। শামসুল হক ফরিদপুরী ফাউন্ডেশন এবছর দাওরায়ে হাদিসের উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। হয়তো ভবিষ্যতে মেশকাত কিংবা অন্যান্য ক্লাসের স্কলারশিপও তারা দিবেন এমন আশাবাদী আমরা।
তবে একটু হাপিত্যেশ আছে, সেটি হলো আমাদের সময় এরকম উদ্যোগ ছিল না। এখন নতুন করে চালু হয়েছে। তাই তাদের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি এবং এই ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম সবসময় চালু থাকুক এই আশাবাদ ব্যক্ত করি।
কথা বলেছিলাম দারুল উলুম দেওবন্দের সাবেক শিক্ষার্থী জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা মোহাম্মদুল্লাহ কাসেমীর সঙ্গে। তিনি বলেন, সংবাদটি শুনে আমি যারপরনাই খুশি হয়েছি। এমন একটি উদ্যোগ আরো আগেই নেওয়া দরকার ছিল। অনেকদিন পরেও যে স্কলারশিপ এর মত একটি উদ্যোগ নিয়েছে আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ. (ছদর সাহেব) ফাউন্ডেশন এটা অত্যন্ত ভালো এবং খুবই যুগোপযোগী একটি সিদ্ধান্ত। এতদিন পরে এসেও যে তারা এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন সেটা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।
সবশেষে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছিলাম দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামা লাখনৌর শিক্ষার্থী তাওহীদ আদনানের সাথে। তিনি বেশ উৎফুল্লের সাথে জানালেন, এমন উদ্যোগ আরো আগেই নেওয়া দরকার ছিল। তবে এখন যেহেতু এরকম উদ্যোগের সূচনা করতে পেরেছে আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ. (ছদর সাহেব) ফাউন্ডেশন। আমি মনে করি তাদের এই উদ্যোগ দেখে আরো অনেকেই এগিয়ে আসবেন এবং শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হতে পারবেন।
এমডব্লিউ/