মুফতি নূর মুহাম্মদ রাহমানী।।
প্রশ্ন: (ক) গত বছর রমজানে একদিন অজু করার সময় কুলি করতে গিয়ে হঠাৎ আমার গলায় একটু পানি চলে যায় আমি তখন আমাদের মহল্লার ইমাম সাহেব হুজুরকে মাসয়ালাটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন আপনার রোজা ভেঙ্গে গেছে। আপনাকে একটি রোজা কাজা করতে হবে। তবে কাফফারা লাগবে না। এখন আমার জানার বিষয় হলো ঐ ইমাম সাহেব কি আমাকে মাসয়ালাটির সঠিক সমাধান দিয়েছেন?
(খ) জনাব মুফতি সাহেবের কাছে আমার আরও একটি জিজ্ঞাসা যে, অজু-গোসলের সময় যদি কারও নাক বা কান দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে বা ভুলে পানি চলে যায় অথবা কেউ যদি নাক, কান বা চোখে ড্রপ, স্প্রে, কোনো ধরনের ওষুধ ব্যবহার করে তাহলে এর দ্বারা রোজা ভাঙ্গবে কি না? ইসলামি আইনে এর সঠিক সমাধান কী? তা জানতে চাই। আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন!
উত্তর: (ক) হাঁ, মহল্লার ঐ ইমাম সাহেব আপনাকে মাসয়ালার সঠিক সমাধানই দিয়েছেন। অজু বা গোসলের সময় রোজার কথা স্মরণ থাকাবস্থায় অনিচ্ছাকৃতভাবে গলার ভেতর পানি চলে গেলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। এজন্য অজু-গোসলের সময় গড়গড়াসহ কুলি করা উচিত নয়।
হজরত সুফিয়ান সাওরি রহ. বলেন, ‘রোজা অবস্থায় কুলি করতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে গলার ভেতর পানি চলে গেলে রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং তা কাজা করতে হবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদিস : ৭৩৮০)
উত্তর: (খ) রোজা অবস্থায় চোখে ঔষধ দেওয়াতে কোনো আপত্তি নেই। যদিও গলায় তার প্রতিক্রিয়া অনুভব হয়। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/১৮- পাকিস্তানি নুসখা)
রোজা অবস্থায় কানের ভেতর তেল, ড্রপ বা অন্য কোনো ওষুধ ব্যবহার করা যাবে এর দ্বারা রোজা ভাঙ্গবে না। তদ্রæপ কানের ভেতর পানি চলে গেলেও রোজা ভাঙ্গবে না। তবে কানে তেল প্রবেশ করার ক্ষেত্রে যদি তেল পেটে ঢুকে যায় তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। (ইলমুল ফিকহ ৩/৩২)
রোজার কথা স্মরণ থাকা অবস্থায় ভুলক্রমে কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে নাক দিয়ে মস্তিষ্ক পর্যন্ত পানি পৌঁছালে রোজা ভঙ্গ হবে না। তবে খাদ্যনালী পর্যন্ত পৌঁছে গেলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এজন্য রোজা অবস্থায় অজু-গোসল করার সময় নাকের নরম স্থানে পানি না পৌঁছানো। কারণ এতে করে রোজা ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
হজরত লাকিত ইবনে সাবিরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘(অজু গোসলের সময়) ভালোভাবে নাকে পানি দাও তবে রোজা অবস্থায় নয়।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৬৩)
এমনিভাবে নাকে ড্রপ, স্প্রে, ঔষধ, তেল ইত্যাদি ব্যবহারে রোজার ক্ষতি হয় না। অবশ্য এ ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে, যেন গলায় না চলে যায়। গলায় গেলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। অবশ্য গলায় না গেলে বা স্বাদ অনুভূত না হলে রোজা ভাঙ্গবে না। (আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৬; ফিকহুন নাওয়াযিল ২/২৯৭; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/১৭২; মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, দশম সংখ্যা ২/৪৫৪)
উত্তরদানে: মুফতি নূর মুহাম্মদ রাহমানী, উসতাযুল হাদিস জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলূম বাগে জান্নাত
৪৩ নবাব সলিমুল্লাহ রোড, চাষাড়া, নারায়ণগঞ্জ।
-এটি