শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


মালিক শ্রমিক ঐক্য গড়ো উৎপাদন বৃদ্ধি করো

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

পলাশ রহমান
ইতালি থেকে>

লেখার শিরনাম ধার করেছি ইসলামি শ্রমিক আন্দোলনের কাছ থেকে। এ সংগঠনটি মালিক শ্রমিকের মধ্যে ঐক্য গড়ার প্রতিপাদ্য সামনে রেখে ৩ মাসের (১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ ২০২০) দাওয়াতি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এই সময়ের মধ্যে তারা দেশের আনাচে-কানাচে সংগঠনের দাওয়াত নিয়ে যেতে চায়।

শ্রমিকদের কানে কানে পৌছে দিতে চায় সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হলে মালিক শ্রমিকের মধ্যে ঐক্য গড়তে হবে। মালিক শ্রমিকের ঐক্যই উৎপাদন বৃদ্ধির নিয়ামক। উৎপাদন বৃদ্ধি ছাড়া যেমন শ্রমিকের ভাগ্য বদল হবে না, তেমন দেশেরও উন্নয়ন হবে না।

শ্রমিক আন্দোলনের তিন মাসব্যাপী দাওয়াত কর্মসূচির এই শ্লোগান আমাকে দারুণ রকম আকর্ষণ করেছে। এ শ্লোগানের বাস্তবতা আমি ইউরোপে দেখেছি। একজন মালিক এবং একজন শ্রমিকের মধ্যে যদি ঐক্য না থাকে, পরস্পরকে আপন ভাবেতে না পারে, সুখে দুখে একজন অন্যজনের পাশে দাঁড়াতে না পারে তবে কখনোই কাম্যমানের উৎপাদন হয় না।

মালিক যদি মনে করে শ্রমিকরা কৃতদাস তবে যেমন উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়, একই ভাবে শ্রমিকরা যদি মালিককে আপন ভাবতে না পারে সেখানেও সঠিক মাত্রায় উৎপাদন হয় না। উভয়ের মধ্যে ঐক্য ছাড়া কখনোই ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়ন হয় না।

মালিক শ্রমিক একজন অন্যজনকে আপন ভাবতে হয়। আপন ভাবার পরিবেশ থাকতে হয়। পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি করেই আজ ইউরোপ এত উন্নত। শুধু ইউরোপ কেনো- পৃথিবীর যে কোনো শিল্পউন্নত দেশের দিকে নজর দিলে দেখা যায় মালিক শ্রমিকের ঐক্য ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব হয়নি।

মালিককে ভাবতে হবে শ্রমিকরা কাজ করে বিধায় সে মালিক, আর শ্রমিককে ভাবতে হবে মালিক আছে বলে প্রতিষ্ঠান আছে, কাজ করে খাওয়ার সুযোগ আছে। সুতরাং পরস্পরের মধ্যে ঐক্য না থাকলে উভয় পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুধুমাত্র নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা না, দেশের উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হয়।

বাংলাদেশে অনেক শ্রমিক সংগঠন আছে, শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে তারা যুগযুগ ধরে কাজ করছে, কিন্তু সত্যিকারার্থে শ্রমিকদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। এখনো শিংহভাগ শ্রমিক সাধারণ নাগরিক সুযোগ সুবিধা নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার পায়নি। এখনো শ্রমিকদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়।

তারা অপুষ্টিতে ভোগে। তাদের জন্য স্বাস্থসম্মত বাসস্থান নেই। তাদের শিশুরা ভালো স্কুলে যেতে পারে না। মোটা কাপড় পরতে পারে না। অথচ যুগযুগ ধরে এই কথিত শ্রমিক সংগঠনগুলো শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করছে! আসলে ওই সংগঠনগুলো শ্রমিকদের অধিকারের নামে কিছু উত্তেজনামূলক কর্মসূচি পালন করে মূলত দেশের উন্নয়ন এবং শ্রমিকদের ভাগ্যের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করছে।

তারা শ্রমিকদের ভাগ্য নিয়ে ব্যাবসা করছে। তারা শ্রমিকশ্রেণীকে গরীব করে রাখতে চায়। শ্রমিক ছেলে মেয়েদের শিক্ষা থেকে দুরে রাখতে চায় এবং সব সময় চেষ্টা করে মালিক শ্রমিকদের মধ্যে একটা দুরত্ব সৃষ্টি করে রাখতে। এতে শ্রমিকদের পরিবর্তে ওইসব সংগঠনগুলোর নেতাদের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়। তারা শ্রমিক অধিকারের নামে বাণিজ্য করে।

কিন্তু ইসলামি শ্রমিক আন্দোলন এই দিক থেকে একেবারেই ব্যাতিক্রম। তারা শুরুতেই সঠিক জায়গায় হাত দিয়েছে। মালিক শ্রমিকের মধ্যে ঐক্য না হলে কোনো দিনই শ্রমিকদের সত্যিকারের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ? সে তো স্বপ্ন হয়েই থাকবে।

শ্রমিক আন্দোলনের দাওয়াতি প্রতিপাদ্য বলে দেয় এ সংগঠনের নেতারা বিচক্ষণ। তারা শ্রমিকদের উন্নয়ন এবং দেশের উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় ধরতে পেরেছেন। এ সংগঠনের নেতা আশরাফ আলি আকন ঘোষণা করেছেন, দাওয়াতি কাজে একলাখ প্রশিক্ষীত কর্মী মাঠে নামানো হয়েছে। দেশের প্রতিটি জনপদে শ্রমিকদের বোঝানো হচ্ছে দেশের উন্নয়ন এবং নিজেদের ভাগ্য বদল করতে হলে মালিক শ্রমিকদের মধ্যে ঐক্য থাকতে হবে।

আমি এর আগে কোনো শ্রমিক নেতাকে এমন ঘোষণা দিতে শুনিনি। বরং দেখেছি শ্রমিক নেতারা সব সময় সাধারণ শ্রমিকদের উস্কানি দেয়। মালিক শ্রমিকদের মধ্যে বৈরী সম্পর্ক তৈরীর বিষ ছড়ায়। প্রয়োজনীয় শিক্ষার অভাবে যা সাধারণ শ্রমিকরা অধিকাংশ সময় বুঝে উঠতে পারে না। তারা জ্বালায় পোড়াও করে নিজেদের ক্ষতি করে, দেশের ক্ষতি করে।

শ্রমিক আন্দোলনের নেতা আশরাফ আলি আকনের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা পরীক্ষিত। তিনি একজন দেশপ্রেমিক নেতা। দেশের ইসলামপন্থী রাজনীতিতে তার অবদান সর্বজন স্বীকৃত। তিনি একজন উজাড়প্রাণ মানুষ। সর্বোচ্চ ত্যাগী মানুষ। তার ত্যাগ, দাওয়াতি কৌশল এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞা খুব অল্প দিনেই শ্রমিক আন্দোলনকে দেশের প্রতিটি থানা ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে।

তিনি শ্রমিকদের মধ্যে প্রায় ৭০টি শাখা সংগঠন গড়ে তুলেছেন। সচেতন শ্রমিকদের আস্থার সংগঠন হয়ে উঠেছে ইসলামি শ্রমিক আন্দোলন।

রাতারাতি এই সংগঠনের অগ্রযাত্রা এবং জনপ্রিয়তা দেখে একদিকে যেমন সরকার ও শ্রমিক ব্যাবসায়ী নেতারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে উঠেছে, অন্যদিকে আশরাফ আলি আকনের দলেরই কিছু মানুষ ঈর্ষাকাতর হয়ে পড়েছে।

তারা মিঃ আকনের কাজকে নানা কৌশলে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। কিছু দিন আগে তিনি ঢাকায় শ্রমিক মহাসমাবেশ ঘোষণা করেও সফল করতে পারেননি। বলতে হয় তাকে সফল হতে দেয়নি নিজ দলের কিছু দলব্যাবসায়ী নেতা। যাদের কারো কারো বিরুদ্ধে সরকার সমর্থিত শ্রমিক সংগঠন এবং গোয়েন্দা সংস্থার সাথে গোপন আতাতের অভিযোগ রয়েছে।

লেখক: ইসলামী রাজনীতি বিশ্লেষক

-এটি


সম্পর্কিত খবর