শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


যৌতুক প্রথা একটি সামাজিক ব্যাধি ও অভিশাপ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সুলতান মাহমুদ বিন সিরাজ ♦

যৌতুক বা পণ হলো কন্যার বিবাহে পিতামাতার সম্পত্তির হস্তান্তর প্রক্রিয়া। ‘যু’ ধাতু থেকে নিষ্পন্ন ‘যুত’ শব্দের অর্থ যুক্ত; বুৎপত্তিগত অর্থ হলো, পাত্র-পাত্রীর যুক্ত হওয়ার সময়ে অর্থাৎ বিয়ের সময় পাত্রীর জন্যে যা কিছু মূল্যবান সামগ্রী দেয়া হয়, তা যৌতুক। (সূত্র: হাবিবুর রহমান প্রণীত
‘যার যা ধর্ম’ পৃষ্ঠা ২৯৫)

সাধারণ অর্থে যৌতুক বলতে বিয়ের সময় বরকে কনের অভিভাবক কর্তৃক প্রদেয় অর্থ বা মূল্যবান সামগ্রীকে বুঝায়। এছাড়া বর কনের আত্মীয়, অভ্যাগত অতিথিরা সাধারণত স্বেচ্ছায় নবদম্পতিকে দিয়ে থাকেন যা তারা তাদের নতুন সংসারে সুবিধামত ব্যবহার করতে পারে।

হিন্দু আইনে যৌতুককে নারীর সম্পত্তির উৎস বলা হয়। এতে তার নিরঙ্কুশ অধিকার স্বীকৃত। হিন্দু সমাজে নারীরা পুরুষদের মতো একই ভাবে সম্পত্তির উত্তারিধকারী হতো না। তাই অনেক আগে থেকেই হিন্দু সমাজে নারীদেরকে বিয়ের সময়ে যৌতুক দেবার প্রচলন ছিলো।

কালক্রমে তা বিয়ের পণ হিসাবে আভির্ভূত হয় যা একসময় কনে পক্ষের জন্য এক কষ্টকর রীতি হয়ে দাঁড়ায়। (সূত্র: কাজী এবাদুল হক যৌতুক জানুয়ারি ২০০৩)

বর্তমান বাংলাদেশে যৌতুক একটি সামাজিক মহামারী। যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সফলতা আসছে না৷ সামাজিক এ ব্যাধি ছড়িয়ে পড়েছে বাংলার আনাচে-কানাচে ৷ গ্রাম থেকে শহরে, উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত–সর্বোত্রই এ ব্যাধির প্রকোপ৷

সাম্প্রতিককালে এ প্রথা জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। ন্যায়-নীতি ও মানবতার ধর্ম ইসলাম। এ ধর্মে অন্যায় নেই, প্রবণতা নেই, উগ্রতা নেই। নেই জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন। আত্মসাৎ, প্রতারণা ও অনোধিকার চর্চা এ ধর্মে নেই। নেই যৌতুকের মতো অমানবিক প্রথা ও অন্যায় দাবি-দাওয়ার কোনো ভিত্তি।

প্রিয় নবী (সা.) তাঁর মেয়ে ফাতেমা (রা.) এর বিয়েতে মেয়ের সংসারের জন্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী দিয়েছিলেন। (সূত্র: ইবনে মাজাহ, নাসায়ি, মুসতাদরাক)। তবে কন্যাপক্ষকে দিতে বাধ্য করা, চাপ সৃষ্টি করা বা পরিস্থিতি তৈরি করা ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও অবৈধ।

মহানবী (সা.) বলেন, কোনো মুসলমানের মাল-সম্পদ তার পূর্ণ সন্তুষ্টি ব্যতীত বৈধ হবে না। (সূত্র: বায়হাকি সুনান, দারাকুতনি)। মহান আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করো না’ (সূত্র: নিসা : ২৯)।

সাহাবি ওমর (রা.) বলেন, ‘হে মুসলমান সম্প্রদায়! তোমরা বিয়েতে মোটা অঙ্কের মোহর, আড়ম্বরতা ও যৌতুক দাবি করো না। কেননা আল্লাহর কাছে এর কোনো মূল্য নেই’। (সূত্র: তিরমিজি)

ইসলামের আলোকে নারী ও পুরুষ পারিবারিক জীবনে পরস্পরের সহযোগী ও সমমর্যাদার অধিকারী। বৈবাহিক জীবনকে ইসলাম এক মহিমান্বিত আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। কোরআন-হাদিসের নির্দেশনা মতে দাম্পত্য জীবন হচ্ছে ভালোবাসার সেতুবন্ধন।

বিরাগ বিরহ ও অনাকাঙ্ক্ষিক আচরণ এবং কোনো ধরনের মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়, এমন আবদার এ বন্ধনে ফাটল সৃষ্টি করার নামান্তর। আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘আল্লাহর নির্দেশাবলির মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছে, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা সৃষ্টি করেছেন’
(সূত্র: সূরা রুম : ২১)।

অন্য আয়াতে বলেন, ‘নারীরা হলো তোমাদের ভূষণ এবং তোমরা হলে নারীদের ভূষণ’।
(সূত্র: সূরা বাকারা : ১৮৭)।

আল্লাহতায়ালার এ ঘোষণা কত যে বাস্তব। বিবাহের মাধ্যমে অপরিচিত দুজনের মধ্যে সত্যিই অকৃত্রিম ভালোবাসা গড়ে ওঠে। আন্তরিকতার বন্ধনে আবদ্ধ হয় দুটি ভিন্ন পরিবার। কিন্তু যৌতুক প্রথার মতো এক বিষাক্ত ব্যাধি আমাদের চিরায়ত সুশৃঙ্খল পারিবারিক ও সামাজিক জীবনকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

যৌতুকের প্রতিকার: যৌতুক প্রথার শিকড় সমাজের গভীরে প্রোথিত। এই বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলার জন্য, একটি আদর্শ সমাজ বিনির্মাণের জন্য, যৌতুকের অভিশাপ থেকে সমাজ, দেশ ও জাতিকে মুক্ত করার জন্য সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন। যৌতুকবিষয়ক প্রচলিত আইন ও এর প্রয়োগ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।

যৌতুকের বিরুদ্ধে আমাদের লেখা, বক্তৃতা ও আচার-আচরণে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। যৌতুকের কুফল, ভয়াবহ গ্লানি এবং অশুভ পরিণতি সম্পর্কে সর্বস্তরের নারী-পুরুষকে অবহিত করতে হবে। পৌঁছে দিতে হবে সবার কাছে নারীর মর্যাদা ও অধিকার রক্ষায়
ইসলামের অবদান। আল্লাহ পাক সবাইকে বুঝার তৌফিক দান করুন।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ